সম্পাদকীয়

মাদারীপুর স্টেডিয়ামে মাদকের আসর: প্রশাসনের নিরবতা উদ্বেগজনক

এক সময় যেখান থেকে ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা অ্যাথলেটিক্সে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের উত্থান হতো, সেই মাদারীপুর জেলা স্টেডিয়াম আজ পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের নিরাপদ আড্ডাখানায়। দৈনিক প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর থানার একেবারে পাশেই অবস্থিত এই ক্রীড়াঙ্গনে এখন সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের বেপরোয়া আসর। প্রকাশ্যেই চলছে মাদক বিক্রি ও সেবন। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের পর দিন এই ভয়ঙ্কর চিত্র চললেও থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো দৃশ্যমান অভিযান বা পদক্ষেপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষায়, স্টেডিয়ামের পরিবেশ এতটাই ভয়াবহ যে সেখানে শিশুসহ পরিবার নিয়ে যাওয়া এখন কল্পনাতীত। এভাবে একটি ক্রীড়াঙ্গন মাদক কারবারিদের দখলে চলে যাওয়া শুধু দুঃখজনকই নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকির ইঙ্গিত। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন নাগরিকদের আশঙ্কা, এখনই যদি প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পুরো এলাকার যুবসমাজ মাদকের ভয়াল ছোবলে ধ্বংস হয়ে পড়বে। অথচ যখন প্রশাসনের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, তখন দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই স্পষ্ট হয়ে উঠে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব এড়িয়ে বলছেন, এটি শুধুমাত্র পুলিশের একার কাজ নয় – যা জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে: তাহলে কার দায়িত্বে পড়ে থাকছে এমন ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির নিয়ন্ত্রণ? এখানে প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের সদিচ্ছা ও সমন্বয়হীনতা নিয়ে। মাঠভর্তি মাদক ব্যবসায়ীদের কার্যকলাপ দেখেও যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে নিরাপত্তা আশা করবে? প্রয়োজন এখনই একটি সমন্বিত উদ্যোগের। স্টেডিয়ামে রাতভর পুলিশি টহল, নজরদারি বাড়ানো, নিয়মিত অভিযান এবং মাদকসেবীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে ক্রীড়াঙ্গনের হারানো প্রাণ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। মাদারীপুর জেলা স্টেডিয়াম শুধু একটি খেলার মাঠ নয়, এটি একটি প্রজন্ম গঠনের সম্ভাবনার কেন্দ্র। সেই সম্ভাবনাকে ধ্বংস হতে দেওয়া মানে আমাদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া। প্রশাসনের সময়োচিত ও জবাবদিহিমূলক ভূমিকা ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button