সম্পাদকীয়

উপজেলায় কিটহীনতা: ডেঙ্গু প্রতিরোধে শূন্য প্রস্তুতির ছবি

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ঝিনাইদহ জেলায় উপজেলা পর্যায়ে কিটের অভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ থাকা কেবল অদূরদর্শিতা নয়, এটি এক ধরনের স্বাস্থ্যগত ব্যর্থতার করুণ চিত্র। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব জরিপে ঝিনাইদহকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করার পরও ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিট না থাকা প্রমাণ করে-কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং অব্যবস্থাপনা কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। হরিণাকু-ু উপজেলায় একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ইতোমধ্যে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে আশঙ্কাজনক দিক হলো, এই আতঙ্কের মোকাবিলায় সরকারিভাবে যেটুকু প্রস্তুতি থাকা দরকার, তার ছিটেফোঁটাও মাঠপর্যায়ে দেখা যাচ্ছে না। রোগীরা বাধ্য হয়ে পরীক্ষা করতে ছুটছেন জেলা সদরের প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এতে শুধু সাধারণ মানুষের আর্থিক বোঝা বাড়ছে না, তাদের মানসিক ভোগান্তিও তীব্র হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কিট চেয়ে বারবার চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমন এক সময় যখন দেশজুড়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে, তখন ‘প্রতীক্ষা’ নয় বরং ‘প্রস্তুতি’ই হওয়া উচিত ছিল নীতিনির্ধারকদের মূলমন্ত্র। শুধু কাগজে-কলমে চাহিদা পাঠিয়ে দায় শেষ করা যায় না; মাঠপর্যায়ের বাস্তব সংকটের জন্য অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনাকে দায় নিতে হবে। এ ধরনের সংকটে আরও বিপদজ্জনক হয়ে ওঠে ভুল চিকিৎসা বা উপসর্গের ভিত্তিতে অনুমাননির্ভর চিকিৎসা। কোনো রোগীকে পরীক্ষা ছাড়াই শুধু উপসর্গ দেখে ডেঙ্গু বলে ধরে নিয়ে ওষুধ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আবার যেসব রোগীর জ্বর ডেঙ্গু নয়, তাদের অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেভাবে প্রস্তুতির কথা বলছে, মাঠের চিত্র তার সম্পূর্ণ বিপরীত। শুধু প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে সচেতন করা যথেষ্ট নয়-পরীক্ষা, চিকিৎসা ও নজরদারির পরিপূর্ণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই হবে। উপজেলাগুলোতে পর্যাপ্ত কিট সরবরাহ না করা হলে ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকানো তো দূরের কথা, রোগ শনাক্ত করাও অসম্ভব হয়ে উঠবে। স্বাস্থ্য খাতের প্রতি জনগণের আস্থা তখনই ফিরবে, যখন প্রাথমিক সেবার জন্য কাউকে আর ঢাকামুখী হতে হবে না। তাই সরকারের প্রতি জোর দাবি থাকবে, অবিলম্বে উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সরবরাহ করা হোক এবং মাঠপর্যায়ে বাস্তব ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক-এটাই এই মুহূর্তের জরুরি চাহিদা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button