সড়কে প্রাণহানির ধারাবাহিকতা: অক্টোবরেই ৪২৩ প্রাণহানি

অক্টোবর মাসে দেশের সড়কে ৪৫২টি দুর্ঘটনায় ৪২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫৮৯ জন আহত হয়েছেন-এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান আমাদের জন্য নতুন সতর্কবার্তা। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ঢাকা বিভাগে ১১৫টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১০৯ জনের, চট্টগ্রামে ৯৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৮৯ জনের। অন্যান্য বিভাগও নিরাপদ নয়-রাজশাহী ৫৪, খুলনা ৫৪, বরিশাল ২১, সিলেট ২২, রংপুর ৪৮ এবং ময়মনসিংহে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যানবাহন অনুযায়ী বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি-১৩০ জন। বাস ও মিনিবাসে নিহত ৬৪, ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানে ৪৮ এবং অটোরিকশায় ৩২ জন। অন্যান্য যানবাহন মিলিয়ে নিহত হয়েছেন আরও ৯৬ জন। এই তথ্যই নির্দেশ করছে যে, দ্রুতগতির মোটরসাইকেল ব্যবহার, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, সড়কে নিয়ম অমান্য এবং শৃঙ্খলাবিহীন ট্রাফিক ব্যবস্থা দেশজুড়ে প্রাণহানির প্রধান কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধারাবাহিকতা রোধে দ্রুত কার্যকর সড়ক নিরাপত্তা সংস্কারের প্রয়োজন। শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়; যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ, রাস্তার অবকাঠামো উন্নয়ন, ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বহুমাত্রিক উদ্যোগের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা ও আইন প্রয়োগের সমন্বয় ছাড়া প্রতিদিন মানুষ, বিশেষ করে মোটরসাইকেল আরোহী, বাসপথচারী ও যাত্রী ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। সড়ক দুর্ঘটনা শুধু সংখ্যাগত সমস্যা নয়; এটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়ও। প্রতিটি দুর্ঘটনা পরিবারে শোক ও আর্থিক সংকট ছড়ায়। তাই সরকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং সাধারণ মানুষকে মিলিয়ে সড়ক নিরাপত্তা সংস্কারের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা, নিয়মিত টহল, গতি নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের মান পরীক্ষা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি-এগুলোই জীবন রক্ষার মূল উপায়। অক্টোবরের এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করছে, স্থবির থাকার সময় শেষ। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে না পারলে প্রতিদিন নতুন শোকের খবর শিরোনামে থাকবে। সময় এসেছে সংবিধানিক দায়িত্বের সঙ্গে প্রতিটি নাগরিকের জীবন রক্ষা নিশ্চিত করার, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে।
