মহাকাশ থেকেও চোখে পড়ছে পাকিস্তানের মারাত্মক বায়ুদূষণ

প্রবাহ ডেস্ক : গত মাস থেকে পূর্ব পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতকে ঢেকে রেখেছে ঘন ও বিষাক্ত ধোঁয়া। সেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা এমন স্তরে পৌঁছেছে যে নাসার স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে স্পষ্টভাবে তা চোখে পড়ছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ধূসর কম্বলের মতো একটি বিশাল মেঘের মতো ধোঁয়া পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশকে ঢেকে দিয়েছে, যেটি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি এবং তার বাইরে পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়েছে। সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে দূষণের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে দূষণের কারণে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ স্কুল এবং পাবলিক স্পেস বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। এই সপ্তাহে পাকিস্তানের লাহোর এবং মুলতান শহরের ছবিতে দেখা গেছে, অন্ধকার কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে রাস্তাগুলো, এমনকি সেখানে অবস্থিত ভবনগুলোও চোখে পড়ছে না। প্রত্যেক শীতকালে এই অঞ্চলে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। সাধারণত এ সময় হলুদ কুয়াশায় আকাশ ঢেকে যায়, কারণ কৃষকরা কৃষিবর্জ্য পোড়ানো, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোসহ নানা কাজ করে এ সময়। শীতকালে বায়ুর গুণমান আরো খারাপ হওয়ার আরেকটি কারণ, ঠা-া এবং শুষ্ক বায়ু দূষণকে দূর করার পরিবর্তে দূষণকে আটকে রাখে। বিশ্বব্যাপী বায়ুর গুণমান ট্র্যাক করা ‘আইকিউএয়ার’ অনুসারে, বায়ুর গুণমান সূচক ৩০০-এর ওপরে ওঠা মানে স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। সেখানে ১২৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবের কিছু অংশে গত সপ্তাহে বায়ুর গুণমান সূচক ১০০০, অতিক্রম করেছে একাধিকবার। গতকাল সোমবারও পাঞ্জাবের মুলতান শহরের বায়ুতে বিপজ্জনক দূষণকারী পিএম২.৫-এর মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ১১০ গুণ বেশি। শ্বাস নেওয়ার সময় পিএম২.৫ ফুসফুসের টিস্যুর গভীরে প্রবেশ করে এবং শরীরের রক্ত প্রবাহের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এটি হাঁপানি, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, ক্যান্সার এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার পাশাপাশি শিশুদের জন্যও ক্ষতিকর। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, পাকিস্তানের হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে দূষণের প্রভাবে ভুগছে, এমন রোগী দিয়ে ভরে গেছে। পাঞ্জাবের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ৩০ হাজারের বেশি লোক শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা নিচ্ছে। পাকিস্তানের এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি রোববার বলেছে, ফয়সালাবাদ, মুলতান এবং গুজরানওয়ালা জেলায় ‘ফুসফুস এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, অ্যালার্জি, চোখ, গলার জ্বালাসহ রোগীর সংখ্যা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ’ এসব এলাকায় গড় বাতাসের মানের মাত্রা ছিল ‘বিপজ্জনক।’ প্রাদেশিক রাজধানী লাহোরসহ স্কুল এবং সরকারি অফিসগুলো ইতিমধ্যেই ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষ ১৮টি জেলার সব পার্ক, খেলার মাঠ, জাদুঘর, চিড়িয়াখানা এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল সোমবার নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো লাহোরসহ চারটি জেলায় ক্রীড়া ইভেন্ট, প্রদর্শনী, উৎসব এবং রেস্তোঁরাগুলোতে জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে। বাজার, দোকানপাট এবং মলগুলো রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। তবে ফার্মেসি, গ্যাসস্টেশন এবং প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় মানুষকে বাড়িতে থাকতে এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে বলা হয়েছে, যা তাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন পাকিস্তানের কান্ট্রি ডিরেক্টর খুরম গোন্ডাল বলেন, ‘শিশুদের শিক্ষা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বায়ুদূষণ শিশুদের প্রাণঘাতী বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। শিশুরা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা এবং সংক্রামক রোগের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।’ সূত্র : সিএনএন