আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে খুলনার উন্নয়ন
# প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়ায় খুলনা রূপ নিচ্ছে আধুনিক নগরীতে, জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা শহর এলাকার উন্নয়ন (ফেজ- ২) প্রকল্পের অগ্রগতি শতভাগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে চলছে কার্যক্রম, প্রকল্প ব্যয় ৪’শ ৯১ কোটি ২৮ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা #
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নতুন নতুন সড়ক নির্মান ও মেরামত, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, শহরের গুরুত্বপূর্ন মোড়ের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, খুলনাকে গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটিতে রুপ দিতে মহানগরী জুড়ে চলছে কেসিসি’র উন্নয়ণের মহা কর্মযজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোয়ায় খুলনা রুপ নিচ্ছে আধুনিক নগরীতে। পাশাপাশি খুলনাকে আধুনিক নগরীর রুপ দিতে কেসিসি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেকের দৃঢ়তা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও নিরলস প্রচেষ্টায় খুলনায় চলছে একের পর এক উন্নয়ণের মহা কর্মযজ্ঞ। এই ধারবাহিকতায় জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা শহর এলাকার উন্নয়ন (ফেজ- ২) প্রকল্পটির অগ্রগতি এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে গত অক্টোবর মাসে কেসিসি হতে এনওসি প্রদান করা হয়েছে। জার্মানীতে চলছে প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া। আশা করা হচ্ছে চলতি মাস (নভেম্বর)’ই প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগের পর সার্ভে এবং ডিজাইনের কাজ শুরু হবে। ডিজাইন চূড়ান্ত হলে স্টিমেট অতঃপর প্রকল্পটি টেন্ডারে যাবে। আশা করা যাচ্ছে ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে সার্ভে শুরু হতে পারে। পাশাপাশি প্রকল্পে জনবল নিয়োগের অনুমোদনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে নিশ্চিত করছেন কেসিসি’র পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক আবির-উল-জব্বার। কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা শহর এলাকার উন্নয়ন (ফেজ-২)’’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। সভায় ৪’শ ৯১ কোটি ২৮ লক্ষ ৬১ হাজার টাকার এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের ৩৬% শতাংশ (১’শ ৭৮ কোটি ৪৬ হাজার টাকা) সরকার (জিওবি), ৬৩% শতাংশ (৩’শ ১২ কোটি ২৮ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা) জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (কেএফডব্লিউ) এবং ১ কোটি টাকা কেসিসি’র নিজস্ব তহবিল হতে ব্যয় করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকাল নির্ধারন করা হয়েছে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৭ পর্যন্ত। ওই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৮০০ মিটার সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়কের উন্নয়ন, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা, ১৪,৭৪৫.৫৫ মিটার ড্রেনেজ সিস্টেম আপগ্রেডিং ঃ নবীনগর, সোনাডাঙ্গা, বাস্তহারা সাব-ক্যাচমেন্ট এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা ৪,৮১৫ মিটার খাল আপগ্রেডিং ঃ নিরালা খাল, বাস্তহারা খাল, দেয়ানা চৌধুরী খাল, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা, ২৫০০ বর্গমিটার রুপসা রিভারফ্রন্ট উন্নয়ণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা, ২৩টি পুকুর উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা, ৭৭৫ মিটার শহর রক্ষাকারী বাধা নির্মান (দৌলতপুর বাজার+ মহেশ্বরপাশা শশ্মান ঘাট) পর্যন্ত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা, আলু তলা আউটলেট গেট আপগ্রেডিং ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা, লবণচরা পাম্পিং স্টেশন ও আউটলেট গেট নির্মাণে ৭৪ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা, ভূমি অধিগ্রহন/ক্রয় (পাম্প হাউজ নিমার্ণ, খাল প্রশস্তকরণ ও রিভারফ্রন্ট উন্নয়ন), পূনর্বাসন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা বলে নিশ্চিত করেছেন কেসিসি’র পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক আবির-উল-জব্বার। দৌলতপুর বাজার ব্যবসায়ী শেখ মোশারেফ হোসেন জানান, জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা শহর এলাকার উন্নয়ন (ফেজ- ২) প্রকল্পটির অগ্রগতি এগিয়ে চলছে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির খবর, যার মধ্যে দৌলতপুর শহর রক্ষাকারী বাধও রয়েছে এজন্য দৌলতপুর বাজার সকল ব্যবসায়ীদের পক্ষ হতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করছি। একই সাথে ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করছি আমাদের খুলনার সার্বিক উন্নয়ণে রুপকার খুলনার মেয়র মহোদ্বয় তালুকদার আব্দুল খালেক মহোদ্বয়কে। দীর্ঘদিন পর ভৈরবর নদীর ভাঙ্গনের হাত হতে দৌলতপুর বাজারের বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা পেতে যাচ্ছে, এটি সত্যিই অত্যন্ত খুশির খবর।
খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব শেখ মোহাম্মাদ আলী জানান, আমাদের অভিভাবক, খুলনা গণমানুষের প্রায় প্রিয় নেতা কেসিসি’র মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেকের হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা শহর এলাকার উন্নয়ন ফেজ- ২ একনেক সভায় পাশ হয়েছে এই প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি বায়বায়ণ হলে জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা শহর এলাকার গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে। এতে করে খুলনা আগের ধাপ উন্নয়ণের মুখ দেখবে। বিশেষ করে বহু বছরের ঐতিহাসিক দৌলতপুর বাজার ভৈরবের ভাঙনের হাত হতে রক্ষা পারে।
কেসিসি’র পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক আবির-উল-জব্বার জানান, জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা শহর এলাকার উন্নয়ন (ফেজ- ২) প্রকল্পটির অগ্রগতি এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে গত অক্টোবর মাসে কেসিসি হতে এনওসি প্রদান করা হয়েছে। জার্মানীতে চলছে প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া। আশা করা হচ্ছে চলতি মাস (নভেম্বর)’ই প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগের পর সার্ভে এবং ডিজাইনের কাজ শুরু হবে। ডিজাইন চূড়ান্ত হলে স্টিমেট অতঃপর প্রকল্পটি টেন্ডারে যাবে। আশা করা যাচ্ছে ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে সার্ভে শুরু হতে পারে। পাশাপাশি প্রকল্পে জনবল নিয়োগের অনুমোদনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরো জানান, ঈষরসধঃব ঈযধহমব- অফধঢ়ঃবফ টৎনধহ উবাবষড়ঢ়সবহঃ চযধংব ২ (ঈঈঅটউ)- কযঁষধহ প্রকল্পটির সম্ভব্যতা যাচাই (ফিজিবিলি স্ট্যান্ডি) শুরু হয় গত, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। ওই প্রকল্পের যৌথ স্বাক্ষরের প্রক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি) সম্পন্ন হয়, কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে পড়ে দুুই বছর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। করোনার কারণে বিদেশীরাও আসতে পারেনি, যে কারণে কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। এরপর ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে সম্ভব্যতা যাচাই (ফিজিবিলি স্ট্যান্ডি) চুড়ান্তভাবে সম্পন্ন হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তুত করে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করা হয়। অতঃপর স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে অনুমোদন পাওয়ার পর পরিকল্পনা কমিশনের প্রেরণ করা হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির অনুমোদনের জন্য। গত, ৩০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় অনুমোদন দিয়েছে (পিইসি) এবং সর্বশেষ, ১৭ জানুয়ারী (মঙ্গলবার) সকালে প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা শহর এলাকার উন্নয়ন (ফেজ-২)’’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় ৪’শ ৯১ কোটি ২৮ লক্ষ ৬১ হাজার টাকার এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। সবমিলিয়ে এই প্রকল্পটি খুলনার জলাবদ্ধা দূরকরণ, পরিবেশ সংরক্ষন, শহররক্ষা বাধের মাধ্যমে দৌলতপুর বাজারকে রক্ষাকরণসহ সার্বিক উন্নয়ণে খুলনা আগামী একটি সুন্দর শহর হিসাবে গড়ে উঠবে বলে আমি আশাবাদী।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র সুযোগ্য কন্যা, বতর্মান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ণের মহাসড়কে পা রাখতে সক্ষম হয়েছে। তিনি খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিামাঞ্চলের উন্নয়নে সর্বসময় আন্তরিক। তিনি ইতোমধ্যে জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় খুলনা শহর এলাকার উন্নয়ন (ফেজ- ২) প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছেন, যার বাস্তবায়নে কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। ইতোপূর্বেও তিনি খুলনা মহানগরীর উন্নয়নে ৩’টি প্রকল্পের অনুকূলে প্রায় ১ হাজার ৯শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ মহানুভবতা খুলনাবাসী চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন । উল্লেখ্য, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন এবং শহরমুখি ক্রমবর্ধমান জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নাগরিক সেবা প্রদান, সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পের আওতায় নগরীর সোনাডাঙ্গা বাইপাস রোড ও ড্রেন উন্নয়ন, নবীনগর সাব-ক্যাচমেট ড্রেন উন্নয়ন, নিরালা খাল, বাস্তহারা খাল ও দেয়ানা চৌধুরী খাল উন্নয়ন এবং বাস্তহারা খালের সাথে সংযুক্ত ড্রেনসমূহের উন্নয়ন, রূপসা রিভার ফ্রন্ট পার্ক নির্মাণ, মহানগরীর ২৩টি পুকুর উন্নয়ন, দৌলতপুর ও মহেশ্বরপাশায় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, মহেশ্বরপাশা শ্মশানঘাট উন্নয়ন, আলুতলা আউটলেট উন্নয়ন, লবনচরায় পাম্পিং স্টেশন ও আউটলেট গেট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহন করা হবে।