খুলনায় কয়েক শতাধিক ভূমিহীন কৃষক ভাসমান বেড পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত
শেখ ফেরদৌস রহমান ঃ খুলনা জেলায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে আরো বেশি আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় ভুমিহীন কৃষকদেও মাঝে। স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় এই পদ্ধতিতে বেশ আগ্রহী হচ্ছে ভুমিহীন কৃষকেরা। এখনও পর্যন্ত খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটাও তেরখাদা ভুতিয়ার বিলসহ অন্যান্য বিলে প্রায় তিনশতাধিক এর বেশি ভুমিহীন কৃষক এই ভাসমান বেড পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করছে বলে জানিয়েছে খুলনা কৃষি অধিপ্তর। খুলনা দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ভুমিহীন কৃষকদের ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে কিভাবে করতে হবে এনিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পাশাপাশি নেট, বাস শ্রমিক খরচ বাবদ সকলকে চার হাজার টাকা দিয়েছি। তারা এলাকার বিভিন্ন খাল বিল, পুকুর জলাশায়ে কলা গাছ অথবা বাস দিয়ে ফ্রেম বেড তৈরি করে উপরে কচুরীপানা ফেলে পচিয়ে এর উপরে চারা রোপন করে সবজি উৎপাদন করছে চাষিরা। মূলতঃ বর্ষার সময় শসা, ঢেঁড়স, লালশাক ও ডাটা শাক উৎপাদন হয়। আর শীতকালে চাষ হচ্ছে লাউ, শিম, বেগুন, বরবটি, করলা, পেঁপে, টমেটো, শসা, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি শাকসবজি ও মসলার চারা রোপন করে অর্থ উপার্জন করছে কৃষকেরা। তবে এসব ভাসমান সবজি রোপনের পর ইঁদুর আতঙ্কে আমি ব্যাটারী চালিত ভ্যান চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। ইঁদুর প্রচুর পরিমানে সবজি নষ্ট করছে। এবিষয়ে কথা হয় খুলনা তেরখাদা ভুতিয়ার বিলের কৃষক ইমতিয়াজের সাথে তিনি বলেন, আমার নিজস্ব তেমন কোন কৃষি জমি নেই। হঠাৎ একদিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল স্যারের সাথে কথা কথা হয় তিনি বলেন, কিভাবে বিলের মধ্যে পানির উপর বেড়ি তৈরি করে সবজি উৎপাদন করা যায়। আমি তার কথামত কলাগাছ আর বাশের কঞ্চি দিয়ে চার পাশে নেট দিয়ে ঘিরে প্রথমে চারটি বেড তৈরি করে শসা ও ঢেঁড়স চাষ করা শুরু করি। এতে আমার বেশ ভালোই ফলন হয়। আর বেশ কিছু অর্থও উপার্জন হয়। এরপর আরো কয়েকটি স্থানে পানির উপর এই ভাসমান বেড তৈরি করে চাষ শুরু করি। এখন সারাদিন এই কাজের উপর দিন চলে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের প্রতিবেশিরাও বেশ সহযোগীতা করেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন বেড থেকে সবজি সংগ্রহ করি মাসে প্রায় আট থেকে দশ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে। তবে ইঁদুর ও কার্পজাতীয় মাছ এসব ভাসমান আবাদে বেশ ক্ষতি করে। বিশেষ করে কালো ইঁদুর, বড় বড় ব্যান্ডিকুট ইঁদুর, গেছো ইঁদুর গুলো। এজন্য আমার বিষ প্রয়োগ করতে হতো । তবে এখন বিষ প্রয়োগ বাদ দিয়েছি কারণ এতে আরো বেশি ক্ষতি হয় মাছসহ অন্যান্য জীবের। যে কারণে বিশেষভাবে তৈরি ইঁদুরের ফাঁদ তৈরি করে ইদুর দমন হচ্ছে । এ বিষয়ে খুলনা জেলা কৃষি কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পরিচালক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খুলনায় বর্তমান ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে কৃষকদের আগের তুলনায় আরো বেশি আগ্রহ বাড়ছে। খুলনায় জেলা উপজেলায় প্রায় তিনশ’র মত ভুমিহীন কৃষক এই ভাসমান বেড পদ্ধতিকে সবজি উৎপাদন করছে। আমরা ও বিভিন্ন প্রজেক্ট এর মাধ্যমে কৃষকদের সহযোগীতা করছি। গরীব কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব চাষিদের কোন কৃষি জমি নেই তাদের জন্য অনেক সুবিদা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের উপজেলা কৃষিকর্মকর্তারা ভাসমান চাষিদের বীজ ,অর্থসহ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছে।