কেসিসির ইজিবাইকের নকল লাইসেন্স মিলছে ৮০ হাজার টাকায়!

কেসিসির স্টাফসহ চক্রের ৮ সদস্যের নাম পুলিশের হাতে : দু’ সদস্য গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) দেয়া ইজিবাইকের নকল লাইসেন্স এখন মিলছে খুলনায়। যার মূল্য ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কেসিসির স্টাফসহ ৭/৮ জনের এ চক্রটি নগরীর সাধারণ মানুষকে এ নকল লাইসেন্স বই সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এমনই চক্রের দু’ সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে চক্রের অন্য সদস্যদের নাম ঠিকানা পেয়েছে পুলিশ। সে অনুযায়ী পুলিশ বাকী প্রতারকদের গ্রেফতারে মাঠে কাজ করছে বলে জানান খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কামাল হোসেন খান। এ চক্রের হোতা বটিয়াঘাটার বাসিন্দা মামুনকে পুলিশ হণ্যে হয়ে খুঁজছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই চক্রের অন্য সদস্যদের সহজেই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, ইজিবাইকের নকল লাইসেন্স করার অভিযোগে ১৮ ফেব্রুয়ারী দু’জনকে আটক করা হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স বিভাগ (যান) তাদের আটক করে সদর থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। আটককৃতরা হলো-নগরীর দৌলতপুর দেয়ানা বাউন্ডারী রোডের বাসিন্দা কুদ্দুস শেখের ছেলে সাইফুল ইসলাম(৩২) ও দৌলতপুর মুচিপাড়া মোড়ের বাসিন্দা আশরাফ আলীর ছেলে সোহেল (৪০)। লাইসেন্স শাখার রেজাউল জানান, তারা লাইসেন্স বই নবায়ন করতে আসলে বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদেরকে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়। আটককৃত দু’জনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা দু’জনই প্রতারণায় শিকার বলে পুলিশকে জানায়। কারণ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নকল লাইসেন্স বই গত দু’ বছর ধরে নবায়ন করে নিচ্ছে আটককৃতরা। কেসিসির কতিপয় স্টাফদের যোগসাজসে এ চক্রটি নকল লাইসেন্স নবায়ন করে চলেছে। ভুক্তভোগীরা যাদের কাছ থেকে লাইসেন্স ক্রয় করেছে তারাই এ প্রতারক চক্রের সদস্য বলে ওসি জানান। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। আটককৃতদের দেয়া তথ্য মতে, কেসিসির লাইসেন্স শাখার (যান) কতিপয় স্টাফ ও মামুন নামের প্রতারক চক্র দীর্ঘ দিন ধরে এ কাজটি করে আসছে। আটক সাইফুল ইসলাম ও সোহেল ওই সময় বলেন, তারা বিগত দু’ বছর ধরে লাইসেন্স শাখা থেকে টাকা দিয়ে বই নবায়ন করে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার আসার পর তাদের কেসিসির স্টাফরা বই নকল বলে আটকে দেয়। তারা তো বই ক্রয় করেছেন। তারপরও যদি বই নকল হয় তাহলে গত দু’ বছর কেসিসির লাইসেন্স শাখা কিভাবে ওই বই নবায়ন করেছেন। এই প্রশ্ন তাদের। যদিও তারা নিরাপরাধ বলে পুলিশ ওই দিন রাতেই ছেড়ে দেয়। তারা জানান, তারা রুহুল আমিন নামের ব্যক্তির কাছ থেকে ৬২ হাজার টাকা দিয়ে এই লাইসেন্স বই ক্রয় করেন। যার তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র রয়েছে। এছাড়া গত ২৯ জানুয়ারী ইজিবাইকের দু’টি নকল লাইসেন্সসহ কেসিসির স্টাফরা দু’জনকে আটক করে পুলিশে দেয়। তারা ওই ব্লু বুক বইতে কেসিসির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও সীল নকল করে ইজিবাইক নগরীতে চালায় এবং অন্যকে ভাড়া দেয়। এ ঘটনায় কেসিসির নিরাপত্তা সুপার লুৎফর রহমান বাদী হয়ে ৫ জনের নামে প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো- লবণচরা থানার পুটিমারী রেলব্রীজ সংলগ্ন মাহফিল কাজীর ছেলে জসিম কাজী(৩০) ও দাকোপ থানার সুতারখালি গ্রামের বাসিন্দা আঃ রহিম সরদারের ছেলে মোঃ মাসুম(৩৬)। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা চক্রের বাকী সদস্যদের নাম বলেছে। এরাও চক্রের হোতা হিসেবে মামুনের নাম বলেছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে এ চক্রের মুল উদঘাটন করা সহজ হবে বলে পুলিশ জানান। ওসি জানান, নগরীর সাধারণ মানুষ ইজিবাইকের লাইসেন্স ক্রয়ের আগে কেসিসির লাইসেন্স অফিসারের কাছে এসে তা যাচাই বাচাই করে সঠিক হওয়ার পর ক্রয় করার জন্য অনুরোধ জানান। বিষয়টি কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুখ হোসেন তালুকদারকে অবগত করলে তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে জানান।