বাগেরহাটের শরণখোলায় মা-মেয়েকে হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই পুলিশ

আদালতে স্বামীর স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি
বাগেরহাট প্রতিনিধি ঃ বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার রহস্য অবশেষে উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ। পরকীয়া সন্দেহে স্বামী নিজেই অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যা করে। পিবিআইর জিজ্ঞাসবাদে এমন তথ্য দিয়েছে নিহতের স্বামী আবু জাফর হাওলাদার। হত্যার দায় স্বীকার করে রবিবার বাগেরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আছাদুল ইসলামের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ঘাতক আবু জাফর। বাগেরহাটের পিবিআই পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান। জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী পাপিয়া ও শিশু মেয়েকে হত্যার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন স্বামী মো. আবু জাফর হাওলাদার। সে স্বীকারোক্তিতে বলেছে অর্থের বিনিময়ে লোক দিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। তবে তার মেয়েকে মারার কথা ছিল না। স্ত্রী সবসময় মোবাইল ফোনে কার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে চাইলে পাপিয়া তাকে জুতা দিয়ে আঘাত করে ও বাড়ী থেকে বের করে দেয়। স্ত্রী পাপিয়া এর আগেও স্বামীকে ঝাড়– দিয়ে মেরেছিল। এসব বিষয় নিয়ে স্ত্রীর প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল স্বামী আবু জাফর হাওলাদার।’ এক পর্যায়ে মনির নামের একজন ভাড়াটিয়া খুনির সাথে এক লাখ টাকা অর্থ চুক্তিতে স্ত্রীকে হত্যা পরিকল্পনা করে। চুক্তি অনুযায়ী আবু জাফর তার ভাই আবু তালেবের মাধ্যমে মনিরকে অগ্রিম ৩০ হাজার টাকা দেয়। মনির টাকা পেয়ে আবু জাফরকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে, কাজ হলে বাড়ির লোকজন তাকে জানাবে বলে জানায়। কথা অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট আবু জাফরের স্ত্রী পাপিয়া ও মেয়ে সওদা জেনিকে কুপিয়ে হত্যা করে মনির হাওলাদার। ঘটনার পরদিন মনির হাওলাদারসহ তার তিন ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু মনির জামিনে বের হলে আবু জাফর মনিরকে জিজ্ঞেস করে তার স্ত্রীকে মারার কথা ছিল কিন্তু সে কেন তার মেয়েকে মেরে ফেলল। মনির তাকে জানায়, তার মেয়ে মনির কে চিনে ফেলেছিল তাই তাকেও হত্যা করা হয়। প্রসঙ্গতঃ ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামে নিজ বাড়ীতে পাপিয়া আক্তার (৩৮) ও তার মেয়ে ছাওদা জেনিকে (৫) কুপিয়ে হত্যা করে মনির হাওলাদার ও তার লোকজন। হত্যার পরদিনই মনিরসহ তার ৩ ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনমাস কারাভোগের পরে তারা জামিনে মুক্তি পায়। পরে পিবিআই বাগেরহাট মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি পাপিয়ার স্বামী মো. আবু জাফর হাওলাদার (৩৯), ভাসুর আবু তালেব হাওলাদার (৫৫) ও তার স্ত্রী আসমা বেগম (৪৫) এবং পাপিয়ার আরেক ভাশুর মো. আবু বক্কার হাওলাদার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।