স্থানীয় সংবাদ

অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে খুলনা জেলা প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযান

তিন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ১ লাখ ৭৫ হাজার # সন্ধানী ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক কমপ্লেক্সকে দেড় লাখ টাকা এবং থাইরয়েড সেন্টারকে ২০ হাজার টাকা ও অনুসন্ধান ডায়াগণস্টিক এন্ড থায়রয়েড সেন্টারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী নগরীতে ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার ২৭০ টি : নবায়ন আছে ৯৮টি, অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগণস্টিক সেন্টার ১০টি : অনলাইন আবেদনের ওপর চলে ১৪

কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনহীন ল্যাব পরিচালনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনার বিরুদ্ধে খুলনা জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন প্রতিনিধি সম্বনয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময়ে অভিযানে সন্ধানী ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক কমপ্লেক্সকে দেড় লাখ টাকা এবং থাইরয়েড সেন্টারকে ২০ হাজার টাকা ও অনুসন্ধান ডায়াগণস্টিক এন্ড থায়রয়েড সেন্টারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়। অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ভোক্তা অধিকার আইন -২০০৯ এর ৫২ ধারায় ভ্র্যমামান আদালতের মাধ্যমে এ জরিমানা প্রদান করা হয়। গতকাল সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শোয়াইব আহমাদ এ অভিযানের নেতৃত্বদেন। এ সময় সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন সিভিল সার্জন অফিসের এমওসিএস অফিসার ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা। খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শোয়াইব আহমাদ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনবিহীন ল্যাব পরিচালনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনা করে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সন্ধানী ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক কমপ্লেক্সকে দেড় লাখ টাকা এবং থাইরয়েড সেন্টারকে ২০ হাজার টাকা ও অনুসন্ধান ডায়াগণস্টিক এন্ড থায়রয়েড সেন্টারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়। খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের এমওসিএস ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা বলেন, সন্ধানী ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক কমপ্লেক্সে অভিযানে গিয়ে দেখতে পাই ওটি করছে ওয়ার্ড বয় দিয়ে, ওটির রেজিস্ট্রেশন খাতা নিয়ম অনুযায়ী মেইনটেইন নেই, অ্যাসিষ্ট্যান্ট চিকিৎসক উপস্থিত নেই, ব্লাড কালেকশন রুমে নোংরা রয়েছে। যেগুলো দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিলো সেগুলো জমা রেখেছিলো এসব অভিযোগ ছিলো। এ অভিযোগের ভিত্তিতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট ওই প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ২০ টাকা জরিামানা করেন। এছাড়া থাইরয়েড সেন্টারের লাইসেন্স ছিলো কিন্তু নবায়ন ছিলো না এ জন্য তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনুসন্ধান ডায়াগণস্টিক এন্ড থায়রয়েড সেন্টারের লাইসেন্স আছে, কিন্তু কাছে ছিলো না এ জন্য তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, খুলনা জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন সমন্বয়ে আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেটের বেঞ্চ সহকারি মোঃ মিরাজুল ইসলাম। এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি র‌্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানীর একটি দল নগরীর হরিণটানা থানাধীন মোহাম্মদপুর এলাকায় ছফুরা ক্লিনিক ও মোহাম্মদনগন হসপিটাল এ- ডায়াগণস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ছফুরা ক্লিনিক ও মোহাম্মাদনগর হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করেন। অভিযানে খুলনা সিভিল সার্জন প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, খুলনা শহরে ২৭০ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এদের মধ্যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নবায়ন রয়েছে ৯৮ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। এছাড়া নবায়ন হয়নি এমন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ১৫৭টি। এর মধ্যে ডায়াগণস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০২টি এবং ক্লিনিক আছে ৫৫ টি। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের এক বছরের, কারো ২ বছরের কারো বা ৩ বছরের আবার কেউ ৪ বছরেও কোন নবায়ন করেননি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, নগরীতে কোন আবেদন ছাড়াই এমন লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা শিশু হাসপাতাল ( ক্লিনিক), খুলনা শিশু হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ( ডায়াগনস্টিক), খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ডায়াবেটিক সমিতি খুলনা (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-১ (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-২ (ডায়াগনস্টিক), জাপান মেডিকেল সেন্টার (খুলনা শাখা-১) এবং নিউ পথ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। এছাড়া নগরীতে শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদনের ওপরই অনেকেই বছরের পর বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছেন কিন্তু লাইসেন্স নেই এমন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে ১৪টি । এর মধ্যে রয়েছে বয়রা সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বায়ো ল্যাব ডায়াগণস্টিক সেন্টার এ- কনসালটেশন সেন্টার, নূরজাহান ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, কালিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ক্লিনিক), কালিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডায়াগনস্টিক সেন্টার), পাল্প ডেন্টাল সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, মাই মেডিকেল ল্যাব ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, জেনারেল ডায়াগণস্টিক এন্ড রির্সোস সেন্টার, বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ক্লিনিক), বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডায়াগনস্টিক সেন্টার), রহিমা ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার এবং শাবাব ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮২ সালের মেডিক্যাল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। এসব বৈধ-অবৈধ অনেক হাসপাতালে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button