খুলনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগে হোমিও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের মামলা : সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ
এক কোটি টাকা ক্ষতির দাবি
স্টাফ রিপোর্টার : খুলনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে একজন হোমিও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিবিসি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন বাদি হয়ে রোববার খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে (দৌলতপুর) মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে খুলনার দৌলতপুরের বোরিক হোমিও ফার্মেসির চিকিৎসক জি এম খালেককে। মামলায় ১ কোটি টাকা ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদি সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন ও বাদির আইনজীবী মোঃ গাজী রাজু আহমেদ। মামলার বাদি সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা সদরের দিঘলিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের পুত্র। তিনি ডিবিসি চ্যানেলের অনলাইন বিভাগে কর্মরত আছেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন পেট, কোমর ও শরীরের মাংসপেশিতে ব্যাথাসহ বিভিন্ন অসুস্থ্যতায় আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালের ১৯ জুলাই দৌলতপুর বোরিক হোমিও ফার্মেসিতে ডাক্তার জি এম খালেকের কাছে চিকিৎসার জন্য যান। ডাক্তার তাকে একটানা ছয় মাস ধরে স্টোরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের জন্য পরামর্শ দেন। ওষুধগুলো সেবনের সময় বাদী কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেন। কিছুদিন পর হঠাৎ তার দু’ পায়ের কুচকিতে টান শুরু হয় এবং প্রচন্ড ব্যথা অনুভুত হয় এবং নড়াচড়া করলে কোমরের ভিতর কট কট শব্দ হয়। বিষয়টি তিনি চিকিৎসককে জানান। কিন্তু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ডাক্তার তাকে কিছু ব্যথার ওষুধ দেন। তাতে কিছুদিন পর আরও সমস্যা দেখা দেয় । পরবর্তীতে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা করান। সেখানের চিকিৎসকরা জানান, স্টেরয়েড ওষুধ দেওয়ার ফলে তার কোমরের দু’টি জয়েন্ট নষ্ট হয়ে গেছে। হোমিও চিকিৎসকের দেওয়া অতিরিক্ত মাত্রার স্টেরয়েডের জন্যই এমন হয়েছে। যেটি অন্যান্য চিকিৎসকরাও তাদের প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করেছেন বলে বাদী জানান।
তিনি বলেন, হোমিও ডাক্তার আমাকে থাম, ক্যাপ, হাব্বে, হেলতীত ইত্যাদি ওষুধ সেবন কেরিয়েছেন। ডাক্তার এম এ খালেকের ওষুধ খেয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ায় তার কোমরের দু’টি জয়েন্টে সমস্যা দেখা দেয়। ভুল চিকিৎসায় তিনি পঙ্গু হয়েছেন এবং তার বাম পা প্রায় দেড় ইঞ্চি ছোট হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য একাধিক বিশেষঞ্জ চিকিৎসকের স্বরণাপন্ন হয়েছেন। এতে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কোমরের দুটো জয়েন্টেই দুটো আলাদা অপারেশনের মাধ্যমে রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, কোমরের দু’টি জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করতে ব্যয় হবে ১৫ লাখ টাকার বেশি। এছাড়া অপারেশন পরবর্তী আরো প্রয়োজন হবে ৫ লাখ টাকার বেশি। বাদীর ২০ লাখ টাকাসহ মোট ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে, একমাত্র সন্তানের এমন করুন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাংবাদিক ইসমাইল হোসেনের পরিবারের সদস্যরা। ভুল চিকিৎসার প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গনে রোববার মামলার দায়েরের পর মানববন্ধন করেন সাংবাদিক ইসমাইল এবং তার পরিবারের সদস্যরা। বাদির আইনজীবী মোঃ গাজী রাজু আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারের মাধ্যমে সাংবাদিক ইসমাইল হোসেনকে পঙ্গু করার অভিযোগে বোরিক হোমিও ফার্মেসির চিকিৎসক জিএম খালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আদালত। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক দাখিল করার জন্য খুলনা সিআইডিকে আদেশ দিয়েছেন।