স্থানীয় সংবাদ

কয়রার মুন্ডা নারীরা শিক্ষায় এগিয়ে : কর্মসংস্থান ব্যবস্থা না থাকায় তারা আজ অবহেলিত

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস

রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ একসময় মেয়েদের গ্রামের বাইরের স্কুল-কলেজে যেতে দিত না। কোনো মেয়ে যদি লেখাপড়া করতে গ্রামের বাইরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ইচ্ছা প্রকাশ করত, তাহলে সেই স্বপ্ন পূরণ হতো না। আর যদি কোনো পরিবার তার মেয়েকে পড়তে যেতে দিত, তাহলে স্থানীয়রা নানা গুঞ্জন শুরু করত। কেন মেয়েকে বাইরে পড়তে যেতে দিতে হবে, এমন অনেক প্রশ্ন ছিল তাদের। কিন্তু এখন গ্রাম, উপজেলা ছাড়িয়ে খুলনা শহরের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এই গ্রামর ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও। এমনকি খুলনার বাইরেও পড়ছে তারা। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছেন এখানকার নারীরা। নিজ ঘরের আঙিনায় দাঁড়িয়ে এমনটাই বলছিলেন কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি শেখ সরদারপাড়া এলাকার সৌরভী মুন্ডা। তিনি খুলনার একটি কলেজে অর্নাস শেষ বর্ষে পড়ছে। সৌরভী মুন্ডা বলেন, পরিবারের সদস্যরা প্রথম অবস্থায় খুলনা শহরে পড়তে যেতে দিতে চায়নি। আমার অনেক ইচ্ছা ছিল, তবে ভয়ও করত। সে সময় আমাকে অনেকেই সাহস যোগিয়েছে। এমনকি সাহায্য করেছে। আর এখন অনেকেই খুলনার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন। আমাদের সম্প্রদায় থেকে অনেক ডিগ্রি পাস করা শিক্ষার্থীও রয়েছে। সৌরভী মুন্ডা আরও বলেন, মুন্ডা সম্প্রদায়ের অনেক ছেলে-মেয়ে এখন লেখাপড়া করে। তবে ছেলেদের চেয়ে সংখ্যায় মেয়েরাই বেশি। কারণ, ১২ বছর বয়স হলে ছেলে শিশুরা পরিবারের হাল ধরতে কর্মে যোগ দেয়। অনেকে বাবার সঙ্গে, কামলা কাজের পাশাপাশি ছয় মাস ইটভাটার কাজে চলে যায়। এসে কেউ স্কুলে ভর্তি হয়, আবার কেউ কেউ ঘুরে বেড়ায়। শুধু সৌরভী মুন্ডাই নন, কয়রা উপজেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মুন্ডা সম্প্রদায় এখন শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগামী। শুধু গ্রামের স্কুল-কলেজ নয়, শহরেও লেখাপড়া করছে তাদের সন্তানেরা। শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া এই সম্প্রদায়ের নারীরাই লেখাপড়ার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। তবে তারা কেউ চাকুরীর সুয়োগ পায় না। কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী ববিতা মাহাতো,লীলা দেবী, শিউলি মুন্ডা,মহিবালা মুন্ডা,প্রতিমা মুন্ডা,পুর্নিমা মুন্ডা সহ আরও অনেকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকুরীর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা। খুলন জেলা জাতীয় আমিবাসী পরিষদের সাধারন সম্পাদক নিরাপদ মুন্ডা বলেন, বর্তমানে কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি এ তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রামে মুন্ডা ও মাহাতোর ৩৭০টি পরিবার বসবাস করছে। এসব পরিবারের ২৫৮ জন ছেলে-মেয়ে কয়রা ও খুলনা শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। আগের চেয়ে বর্তমানে মুন্ডা সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ায় কিছুটা এগিয়েছে। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী বেশি। ছেলেদের অনেকে কর্মজীবী হওয়ার কারণে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়তে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকার পরিবর্তন এসেছে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি হয়েছে। তাদের শিশুদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল করা হয়েছে। কলেজে পড়–য়া সাধনা মুন্ডা বলেন, খুলনার সর্ব দক্ষিণে কয়রা উপজেলায় বহু বছর ধরে মুন্ডা ও মাহাতোদের বসবাস। এখানে আগের চেয়ে নারীরা অনেক শিক্ষিত হয়েছে। তবে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, মুন্ডা ও মাহাতো মানুষদের জীবনযাত্রা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। তাদের মৌলিক অধিকার বাস্তায়নে জনপ্রতিনিধিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আর শিশুশ্রম বন্ধ করে তাদের শিক্ষার দিকে নজর দিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। কয়রা উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী অফিসার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব সম্প্রদায়ের জীবিকার পরিবর্তন এসেছে। তাদের জীবন-জীবিকা উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button