স্থানীয় সংবাদ

আমরা যদি জীবনের সর্বক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে চলি তাহলে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হবো- কেএমপি কমিশনার

কেএমপিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে কেক কাটা ও আলোচনা সভা

স্টাফ রিপোর্টার ঃ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের আয়োজনে গতকাল সন্ধ্যা বয়রাস্থ পুলিশ লাইন্স লাউঞ্জ-টু তে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা সভাপতিত্বে কেক কাটা এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বক্তব্য প্রদান করেন। এসময়ে বক্তব্যে তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শুধু বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক নয়, পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের আলোকবর্তিকা, স্বাধীনতার স্থপতি, একটি রাষ্ট্র জাতি সৃষ্টিতে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯২০ সালে আজকের এই দিনে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনচেতা, ন্যায়পরায়ণ, দুরন্ত, মুক্তমনা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। ছাত্রজীবনে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় তিনি অভিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যখন স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তখন তিনি তাদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে স্কুলে পানি পড়া রোধ করার জন্য স্কুলের চাল মেরামতের দাবী জানান। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন ছিল মানবিকতায় পূর্ণ ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের সময় বাল্যকাল অতিক্রম করে যৌবনে পদার্পণ করা বঙ্গবন্ধু নিজেদের গোলার ধান বিলিয়ে দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বাঙালি জাতিকে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ এর আইযুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান এবং ৭০ এর জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ এবং জনযুদ্ধের দীক্ষা দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের উত্তাল দিনে রেসকোর্স ময়দান যেটি বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী জাতীয় উদ্যান সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগমে তিনি বাংলার ও বাঙালির স্বাধীনতার কালজয়ী অমর কাব্য উপস্থাপন করেছিলেন। এই স্বাধীনতার অমর কাব্যের ১৮ মিনিটের ঐতিহাসিক ভাষণে ছিল পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালি জাতিকে ২৪ বছর ধরে শোষণ, নির্যাতন এবং বঞ্চনার ইতিহাস। রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে পরোক্ষভাবে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে কি কি করতে হবে তার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও রুপরেখা বাতলে দিয়েছিলেন। দেশবাসীকে স্বাধীন সার্বভৌম হতে হলে কি কি করতে হবে তার সকল সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল তাঁর বক্তব্যে। এই বাঙালি জাতিকে যে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না এই কথাটি বিশ্ববাসীকে সর্বপ্রথম জানিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ০২ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এই স্বাধীন সার্বভৌম দেশের পতাকা। কিন্তু আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের শিক্ষা-স্বাস্থ্য অবকাঠামোসহ সকল পর্যায়ের পুনর্গঠন যখন শেষ পর্যায়ে তখন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করে কতিপয় দেশদ্রোহী ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিকভাবে হত্যা করেন। ষড়যন্ত্রকারীরা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল কিন্তু জাতির পিতার আদর্শকে তারা হত্যা করতে পারেনি। বর্তমান সময়েরর মতো তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিলনা, এতো টেলিভিশন চ্যানেল ছিলোনা। ষড়যন্ত্রকারীরা তারপরেও বিটিভিতে কিংবা বেতারেও জাতির পিতার কোন ছবি এমনকি ১৯৭১ সালের সেই ২৬ শে মার্চের সেই স্বাধীনতার ঘোষণা কিংবা ৭ ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করতে দেননি। ইতিহাস এবং পুস্তক থেকেও জাতির পিতাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু মানুষের বুকের ভিতর যে জাতির পিতা ছিল তাকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা এই জাতির কারোরই ছিলোনা। সেটি প্রমানিত হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, তারা মনে করেছিল গোপালগঞ্জের নিভৃত পল্লীতে জাতির পিতাকে সমাধিস্ত করা হলে তিনি বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে হারিয়ে যাবেন কিন্তু গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া আজ জাতির তীর্থ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা পাঁচ বছরের সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছি। শিক্ষা স্বাস্থ্য অবকাঠামোসহ সকল ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পুলিশ কমিশনার উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন আমরা যদি জীবনের সর্বক্ষেত্রে জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলি তাহলে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হবো এবং এই দেশটি কে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গি ও ইভটিজিং মুক্ত, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। এই আশাবাদ ব্যক্ত করে পুলিশ কমিশনার উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার মূল্যবান বক্তব্য শেষ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) সরদার রকিবুল ইসলাম বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল, অতিঃ দায়িত্ব ক্রাইম) মোছাঃ তাসলিমা খাতুন-সহ কেএমপি’র সকল পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button