স্থানীয় সংবাদ

আজ আন্তর্জাতিক বন দিবস

বিশ্বের ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় প্রয়োজন পর্যটক নিয়ন্ত্রণ ও বিকল্প কর্মসংস্থান

রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ বিশ্বের ঐতিহ্য সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে হলে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। সুন্দরবন নির্ভরশীল জেলে বাওয়ালীদের অবাধ বিচারনে সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে পড়ছে। এটিকে টিকিয়ে রাখতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। ভয়ংকর জলোচ্ছাস ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বুক পেতে দিয়ে দেশের উপকুলকে রক্ষা করে বিশ্ব ঐতিহ্যে সুন্দরবন। বাংলাদেশ ও ভারত অংশে এই বনের বিস্তৃতি। বাংলাদেশ অংশের প্রাণপ্রাচুর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন এই সুন্দরবনে। তবে পর্যটকদের আনাগোনা ও অসচেতন আচরণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনের স্বাভাবিক পরিবেশ। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত সম্পদ আহরণের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের এই নিরাপদ বেষ্টনি। এতে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বনজসম্পদ ও বন্যপ্রানী। সুন্দরবনে মানুষের অবাধ যাতায়াতের কারণে শব্দ দূষণসহ নানা সমস্যায় স্বাভাবিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়। পর্যটন স্পটগুলোতেও পর্যটক যাতায়াতের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা প্রয়োজন। কোন স্পটে কী পরিমাণ পর্যটক যেতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেয়া দরকার। বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের স্ব স্ব স্টেশন থেকে অনুমোদন নিয়ে বনের ভেতরে প্রবেশ করা যায়। জোয়ারের সময় প্রবেশ করার পর ট্রলার কিংবা লঞ্চে প্রচুর শব্দ হয়। ট্রলার ও লঞ্চ নিয়ে সুন্দরবনের ভেতরে গিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে ভালো লাগলেও এর বিকট শব্দে বন্য প্রাণিদের স্বাভাবিক বিচরণ বিঘিœত হয়। কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি সহকারি অধ্যাপক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সুন্দরবনে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও নাজুক। প্রতিটি লঞ্চে মাত্র দুজন করে বনরক্ষী দেওয়া হয়। বনরক্ষীরা বয়স্ক ও তাদের অস্ত্র চালানোর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। অন্যদিকে সুন্দরবনের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট। পর্যটকদের আবাসনের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাদের লঞ্চ বা বোটের মধ্যে রাত কাটাতে হয়। পর্যটকদের বহনকারী লঞ্চ বেঁধে রাখার মতো ভালো ব্যবস্থাও নেই। এখনও বনের অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। ফলে সুন্দরবনে প্রবেশের পর পর্যটকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে জরুরি চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলেও তা অনেক সময় নিশ্চিত করা যায় না। পর্যটন শিল্পের বিকাশে এ বিষয়গুলি সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। মানব কল্যান ইউনিটের সভাপতি মোঃ আল আমিন ফরহাদ বলেন, সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিতে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। সুন্দরবন ঘিরে থাকা এলাকায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী রয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ সরাসরি সুন্দরবন থেকে মাছ, মধু, কাকড়া, গোলপাতাসহ সম্পদ আহরণ করে থাকে। সুন্দরবনের ওপর এ নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থান করা জরুরি। সে লক্ষ্যে নির্ভরশীলদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শুধু তাই নয় সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জনগনকে বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে না পারলে এটি কোনও কাজে লাগবে না। সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনে পর্যটনখাতে উন্নয়ন কল্পে ইতিমধ্যে নতুন নতুন ইকোট্যাুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলে বাওয়ালীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহন করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button