ছুটির দিনে জমে উঠেছে খুলনার ঈদের বাজার!

সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে বিপনীবিতানগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়, পোশাকের নামের নতুনত্ব সেই আগের আকর্ষণ সারারা, গারারা ও নাইরা
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। হাতে গোনা চারদিন পরেই আকাশে বাঁকা চাঁদের হাসির মধ্যেদিয়ে পালিত হবে মুসলিম উম্মার সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর পরিবারের সকলে মিলে মিশে নতুন পোশাকে ঈদের বাড়তি আনন্দটুকু ভাগাভাগি করে নিতে তাই ব্যস্ততম নগরী খুলনার প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা সব আধুনিক বিপনীবিতান, শপিংমল, মার্কেটসহ ভ্রাম্যমান দোকানগুলোতে অসহনীয় গরম উপেক্ষা করে এখন চলছে কেনাকাটা মহোৎসব। বিশেষ করে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটি দিন শুক্রবার হওয়াতে খুলনার বিপনীবিতান, শপিংমল, মার্কেট গুলোতে শিশু, নারী-পুরুষ, তরুন-তরুনী, আবাদ-বৃদ্ধা সব বয়সী মানুষের আনাগোনায় মুখরিত ছিল। ঈদ বাজারে এসে কেউ বাচ্চাদের পোশাক, কেউ শাড়ী বা থ্রী-পিস, কেউবা আবার প্যান্ট, শার্ট পাঞ্জাবি কিনতে ব্যস্ত ছিল। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদকে ঘিরে তরুনেরা পাঞ্জাবি, তরুনীরা সিল্ক বা জামাদানি এবং মেয়েদের জন্য ফোরাক কিনছে। প্রতি বছর ভারতীয় সিরিয়ালের নামের পোশাক চাহিদা বেশি থাকলেও এবছর নেই নতুনত্ব, ক্রেতা চাহিদাও কম। সেই আগের আকর্ষণ সারারা,গারারা ও নাইরা কিনছে অনেক ক্রেতাই। শক্রবার (৫ এপ্রিল) সকালে ও সন্ধ্যার পর নগরীর নিউ মার্কেট, জলিল টাওয়ার, সেইফ এন্ড সেইভ, স্বপ্নীল, ইয়োলো, জলিল টাওয়ার, খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, বড় বাজার, রব সুপার মার্কেট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপনী বিতান, মশিউর রহমান মার্কেট, দরবেশ চেম্বার, এশা চেম্বার, আকতার চেম্বার, রেলওয়ে মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপনী বিতান, খালিশপুর সুপার মার্কেট, দৌলতপুর বাজারের আশা বস্ত্রালয়, আদিব বস্ত্রালয়, জাবিরা ফ্যাশন, সাতরং, মাইশা ফ্যাশন, এস.আর বস্ত্রবিতান, ড্রেস কোড, শ্যামা বস্ত্রালয়, প্রবীর ক্লথ স্টোর, চৌধুরী এন্টার প্রাইজ, হাসনাত এন্টার প্রাইজ, মাতৃবন্ত্রালয়, সাইম নিউ কালেকশন, আঁচল ফ্যাশন, জে.কে শপিংমল, অমি শপিংমল, স¤্রাট সু, মুকুট স¤্রাট সুট, টাওয়ার স¤্রাট সু, সংসার সু বাজার, বাটা সু, পায়ে পায়ে, লিবার্টি বাজার, লির্বাটি সু, ওয়েলকাম সু, শুভেচ্ছা কসমেটিক্স, সাবিনা, আরিশা কসমেটিক্সসহ ফুলবাড়ীগেট, শিরোমনি নিউ মার্কেট, বৈশাখি সুপার মার্কেটসহ স্থানীয় এলাকার বিপনীবিতান, শপিংমল গুলোতে ঈদের কেনাকাটা করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে প্রায় সব বয়সী মানুষ এমনই দৃশ্য দেখা গেছে। খুলনার বিভিন্ন বিপনীবিতান, শপিংমল, মার্কেট সমূহ দৃষ্টিনর্ন্দন ভাবে সাজানো হয়েছে ক্রেতাদের জন্য আধুনিক ডিজাইন ও বাহরি রঙের পোশাক, জুতা-সেন্ডেল, নামি দামি কোম্পানীর প্রসাধনী, ব্যাগ, ব্যাল্টসহ ঘড়ি ও চশমা। ঈদ যত নিকটে আসছে, প্রতিদিনই ততই ক্রেতা বাড়ছেঈদ বাজারে। তবে দিনের তীব্র অসনীয় গরম উপেক্ষা করে বিরতিহীন কেনাকাটা চলছে সকাল হতে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত। খুলনা স¤্রাট বাজারের সত্ত্বাধীকারি জানান, আমাদের শো-রুমে প্রতি বছরই ভালো কেনাবেচা হয়। ঈদের আগেই সকল বয়সীদের জন্য বাহারি রঙ ও ডিজাইনের জুতা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। মহিলাদের জন্য সু-সেন্ডেল, পেন্সিল সু, নাগড়া, চায়না সেন্ডেল, পুরুষদের দুই ফিতার সেন্ডেল, সাইকেল সু, লুফার ও বাচ্চাদের লেদার জুতা, চায়না জুতা, লুফার, কেসসহ বাহরি ডিজাইনের জুতা সেন্ডেল বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদ যত নিকটে আসছে ততই বেচাকেনার চাপ বাড়ছে। অভিজাত বস্ত্র বিতানের মালিক জানান, ঈদে সব বয়সী মহিলাদের বেশি ঝোক থাকে শাড়ির উপর। বিশেষ উঠতি বয়সী তরুনীদের। তাই বাহারি পাকা রঙ ও ডিজাইনের গ্যাস সিল্ক, বেনারসি, জামদানি, ঝুট জামদানি, কারচুপি, কাতান, কাঞ্জীবরন, মাচরাইচ কটন প্রভৃতি তুলেছি। তবে বয়স্কদের জন্য টাঙ্গাইল ও প্রিন্টের শাড়ির বেশ চাহিদা রয়েছে।
পোশাক বিক্রেতা কবির জানান, ছেলেরা বেশি পাঞ্জাবি কিনছে, রয়েছে ইন্ডিয়ান ব্যান্ড, গুটি ও টিস্যুৎ। তবে কাবলি চাহিদা বেশি। তাছাড়া প্রতি বছর ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের ড্রেস নাম ধরে ক্রেতারা চেয়ে নিলেও এবছর চাহিদা কম। তবে সারারা ও গারারা মোটামুটি চাহিদা রয়েছে। প্রসাধনী বিক্রেতা ইলিয়াজ জানান, আমার দোকানে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন ব্যান্ডের প্রসাধনী তুলেছে ঈদ উপলক্ষ্য । তাছাড়াও মেহেদী, আয়লারান, ফ্রেশ ওয়াজ, বিভিন্ন ডিজাইনের চুড়ি, গলার হার, কানের দুল, চুলে থোপা, লিপস্টিকসহ অন্যান্য প্রসাধনীর বিক্রি করছি। দিনজুড়ে কেনাবেচার চাপ বেড়েছে। খুলনার প্রতাপপুর হতে আসা ক্রেতা রফিকুল জানান, স্ব-পরিবারে খুলনা ডাকবাংলা মার্কেটে কেনাকাটা করার জন্য এসেছি। হাতে আর সময় কোথায়, তাই পরিবার নিয়ে এলাম বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে। একদিন একটু কষ্ট হলেও সকলের কেনাকাটা করে যাবো। বর্তমানে যে গরম তাতে করে প্রতিদিন গরমের মধ্যে বের হওয়া সম্ভব নয়। খালিশপুর হাউজিং এলাকার বাসিন্দা বকুল নামের ক্রেতা জানান, দেখতে দেখতে ঈদ চলে আসবে। হাতে আর সময় কই? নিজের জন্য না হলেও বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করতে হবে। যেহেতু শুক্রবার ছুটির দিন, তাই কেনাকাটা করতে এলাম। কারন ঈদের দু’চারদিন আগে মার্কেটে পা রাখা যাবে না। যদিও গরমের মধ্যে খুব কষ্ট হচ্ছে। খুলনা আঞ্চলিক আওহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ এ জানান, গরম কাল চলছে, তাপমাত্রা ক্রমশঃই বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া সাধারনত এপ্রিল মে মাসে গরমের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। বৃষ্টিপাত হলে গরমের অনুভূত কিছুটা কমবে। বৃষ্টি না থাকায় তীব্র গরম অনুভুত হচ্ছে। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) খুলনার সর্ব্বোচ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।