স্থানীয় সংবাদ

ইফতারির বিক্রির মাঝেও মানবিক ইফতারি!

স্টাফ রিপোর্টার ঃ নগরীর দৌলতপুর ট্রাফিক মোড়স্থ শামীম হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে অসহায় মানুষকে নিয়ে শামীম হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন একাধিক ব্যক্তিবর্গসহ উপকারভোগীরা অসহায় মানুষগুলো। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে বাহারি ইফতারি বিক্রির মাঝে ও মানবিক ইফতারের আয়োজন করেছে নগরীর দৌলতপুর ট্রাফিক মোড়স্থ শামীম হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে। প্রতিদিনই ইফতারির পূর্ব মুহুর্তে প্রতিষ্ঠানটির সম্মুখে আয়োজন করা হয়ে থাকে প্রায় শতাধিক সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, দুস্থ, পথচারী ও ভিক্ষুকদের ইফতারির ব্যবস্থা। যেখানে ক্রেতাদের চেয়ে ওই সকল সুবিধাবঞ্চিত রোজাদারদের ইফতারের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বরোপ করে থাকেন প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধীকারি বলে জানান হোটেলের একাধিক কর্মচারী। ওই সকল অসহায় মানুষগুলোর জন্য নিয়মিত ইফতারে থাকে চমৎকার আয়োজন। জানা গেছে, দৌলতপুর ট্রাফিক মোড়স্থ শামীম হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের গৌরবউজ্জ্বল ঐহিত্যের ৪৭ বছর পার করছে। গৌরবউজ্জ্বল ঐতিহ্য ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মাহে রমজান উপলক্ষ্য বাহারি রকমারি ঘ্রাণ ও স্বাদের ইফতারীর নানা আয়োজন করেছে। তবে অত্যন্ত দৃষ্টি নর্ন্দন বিষয় হলো, ইফতারির পূর্বমুহুর্তে একদিকে কেনাবেচা করতে কর্মচারিরা ব্যস্ত, তেমনি অপরদিকে হোটেলটি’র সম্মুখে সারিবদ্ধভাবে বসা অসহায় দুস্থ মানুষগুলোক ইফতার পরিবেশন করাতে ব্যস্ত অন্যকর্মচারীরা। তবে হোটেল মালিকের কঠোর আদেশ, ইফতারির করতে সারা অসহায় মানুষগুলোর সার্ভিস আগে, ইফতার আগে। তাদের প্রয়োজন আগে মিটিয়ে পরে কেনাবেচা।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) হোটেল শামিম এন্ড রেস্টুরেন্ট সম্মুখে ইফতারের আগ মুহুর্তে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেলের প্রতিটি কর্মচারী সুরক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে একদিকে যেমনি ইফতার বিক্রির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, অপরদিকে হোটেল সম্মুখে সারিবদ্ধভাবে বসা অসহায় মানুষদের ইফতার পরিবেশনেও ব্যস্ত কিছু কর্মচারী। সেনহাটির এলাকার বাসিন্দা অসহায় মারিয়া জানান, আমি মানুষের কাছে হাত পেতে আজ দু’টো ছেলেকে হাফেজ বানিয়েছি। আজ আমার আর কোনো দুঃখ নেই। সামনে আমার সুখের দিন আসছে। আর ভিক্ষা করতে হবে। আমার ছেলেদের জন্য দোয়া করবেন। এই হোটেল মালিক অত্যন্ত ভালো মানুষ। প্রতিদিন আমাদের মতো অসহায় মানুষের ইফতারি দেন। গত বছরও আমি এখানে প্রতিদিনই ইফতার করতাম। কারন দৌলতপুর বাজার এলাকায় আমি ভিক্ষা করে থাকি। আমরা নিচে বসে খাবার খায় বলে, হোটেল মালিক আমাদের জন্য ত্রিফলার ব্যবস্থা করেছেন। দোয়া করি উনি যেন এমন ভালো কাজ সারা জীবন করতে পারেন। তাছাড়া সেহরির সময়ে যদি কোনো অসহায় মানুষ রোজা রাখতে চাই, তাদের হোটেল হতে খাওয়া দেওয়া হয়।
পঙ্গু ফাতেমা জানান, প্রতিবছরই এই হোটেল হতে আমাদের মতো মানুষকে ফ্রি ইফতার দেওয়া হয়ে। যত লোকই হোক না কেন সকলকে ইফতারি দেওয়া হয়। গত বছরও এখানে প্রতিদিনই ইফতার দিতো, এবছরও ইফতার দিচ্ছে। কর্মচারী আকতার জানান, প্রতিদিন ইফতারির আগে ইফতারের প্লেট তেরী করা হয়, অসহায় মানুষদের জন্য। ইফতারির পূর্ব মুহুর্তে অসহায় দুস্থ মানুষের মাঝে ইফতার বিতরন করা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। মালিকের আদেশ আগে ওই মানুষকে ইফতার দেওয়ার পর, বেচাবিক্রি করতে। একটি অসহায় মানুষও যেন ইফতার হতে বঞ্চিত না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন তিনি।
রেস্টুরেন্টে ইফতার করতে আসা নাহিদ নামের এক রোজাদার জানান, ঈদের কেনাকাটার জন্য মার্কেটে এসেছি। ইফতারের সময় হলো, তাই শামিম হোটেলে ইফতারের উদ্দেশে যায়। অত্যন্ত ভালো লেগেছে আমার যে অসহায় মানুষদের জন্য হোটেলের পক্ষ হতে সারিবদ্ধ ভাবে বসিয়ে ইফতার করানো হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আশরাফ হোসেন জানান, পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্য বাহারি ইফতারি বিক্রির মাঝে ও মানবিক ইফতারের আয়োজন করেছি আমরা। প্রতিবছরই আমাদের এই ব্যতিক্রম আয়োজন চলে। মাহে রমজান উপলক্ষ্য প্রতিদিনই ইফতারির পূর্ব মুহুর্তে প্রতিষ্ঠানটির সম্মুখে আয়োজন করা হয়ে থাকে প্রায় শতাধিক সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, দুস্থ, ও ভিক্ষুকদের ইফতারির ব্যবস্থা। যেখানে ক্রেতাদের চেয়ে ওই সকল সুবিধাবঞ্চিত রোজাদারদের ইফতারের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বরোপ করা হয়ে থাকে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button