স্থানীয় সংবাদ

কুয়েট এপ্রোচ সড়কের পার্শবর্তিরা সীমাহীন দুর্ভোগে : হাজার হাজার মানুষ জিম্মি

অরক্ষিত কুয়েট, খুলনা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও এইচএসটিটিআই

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা সাব ঠিকাদারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা

খানজাহান আলী থানা প্রতিনিধি. গতি নেই কুয়েট এপ্রোচ সড়কের উন্নয়নের কাজের! সড়কের অপরিকল্পিত, ধীরগতী এবং সমন্বয়হীনতার অভাবে ড্রেন নির্মাণ কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়কের উভয় পাশের বাড়ী মালিক বা প্রতিষ্ঠান গুলো। একই সাথে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কুয়েট, খুলনা টির্চার্স ট্রেনিং কলেজ, এইচএসটিটিআই সহ অনেক প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ী। তাছাড়াও খুলনা গভ. ল্যাবরেটরি হ্ইা স্কুলের ঠিক প্রধান ফটকের পাশেই কালভার্ট নির্মাণে মাটি খনন করে মাসের পর মাস ফেলে রেখেছে। সীমাহীন দুর্ভোগ যেন দেখার কেহ নেই, অসহায় হয়ে জিম্মি হয়ে পড়েছে সড়কের পার্শবর্তি হাজার হাজার বাসিন্দাগন। ক্ষতিগ্রস্ত এবং চরম দুর্ভোগে মধ্যে থাকা অসহায় মানুষ গুলোর কোন আর্তনাত যেন মন গলাতে পারছেনা কাজের দায়িত্বে থাকা সাইডের সংশ্লিষ্টদের। কুয়েট এপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছিল গত বছরের জানুয়ারিতে এবং চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি। প্রায় এক বছর দুই মাসে সড়কের দু’ পাশে ড্রেনের কাজের মোট অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ হলেও মূল সড়কের কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স প্রাঃ লিমিটেড। সড়কটির দুই পাশের ড্রেনের কাজ করতে যেয়ে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলায় ক্ষুব্ধ কুয়েট প্রশাসন, ক্ষুব্ধ খুলনা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, এইচএসটিটিআইসহ সড়কের দক্ষিণপশের বহু বাড়ীর মালিকগণ। সড়কটির উন্নয়ন কাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা কেসিসি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক গত বছরের ১২ জানুয়ারি সড়কটির উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনের সময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করার নির্দেশ দিলেও তার সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এলজিইডি ও কেসিসি’র যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে সড়কটি আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশন গত বছরের ১২ জানুয়ারি মাহবুব ব্রাদার্স প্রাঃ লিঃ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সড়কটি আধুনিকায়ন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের উন্নয়ন কাজের কার্যাদেশ প্রদান করেন। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কার্যাদেশ অনুযায়ী খুলনা-যশোর মহাসড়কে ফুলবাড়ীগেট হতে গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল পর্যন্ত ১১৮৫ মিটার সড়ক আধুনিকায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৩০ টাকা। গভারমেন্ট অফ বাংলাদেশ (জিওবি) এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) কাজটিতে অর্থায়ন করছে।
প্রকল্পের আওতায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বারে আধুনিক ট্রাফিক আইল্যান্ড ও গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বার হবে ৬০ ফুট ও প্রশস্ত। ২ লেন বিশিষ্ট সড়কটির প্রত্যেক লেন প্রশস্ত হবে সাড়ে ২২ ফুট ও ১ ফুট উঁচু হবে সড়কটি। সেই হিসেবে মূল এপ্রোচ সড়কটি প্রশস্ত হবে ৪৫ ফুট। সড়কের মাঝখানে রোড ডিভাইডারসহ দুই পাশে পানি নিষ্কাশনে থাকবে ৫ ফুট প্রশস্ত ড্রেন। ড্রেনের উপর দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য ফুটপাতের ব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট প্রধান ফটকের সামনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড। গত বছরের ১২ জানুয়ারি প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এপ্রোচ সড়কটির ড্রেন নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা কাজ করছে অপরিকল্পিত ভাবে। সমন্বয়হীনতার অভাব লক্ষ করা গেছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। ক্ষোদ নির্মাণ কাজের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হোসেন বিদ্যুৎ এর কথা শুনছে না সাবঠিকাদারের নির্মাণকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট জনবল। তাদের ইচ্ছে মতো এক এক জায়গার মাটি খনন করে ড্রেন নির্মাণের জন্য ফেলে রাখায় এবং কোন প্রকার প্রোটেশন ছাড়াই মাটি খনন করায় কুয়েট, খুলনা শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, এইচএসটিটিআই, নুরে মদিনা মসজিদ, খানাবাড়ী শাহী জামে মসজিদ, আনোয়ার খুরশিদসহ অনেকের বাড়ীর সীমানার বাউন্ডারী পড়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ড্রেনের মাটি খনন এবং ড্রেনের গাইড ওয়াল ঢালাই দিয়ে ফেলে রাখায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে সড়কের পাশের হাজার হাজার বসবাসকারী মানুষ। জিম্মি অবস্থা থেকে রেহায় পেতে কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের কোন আর্তনাত যেন মনগলাতে পারছেনা।
কুয়েটের অবকাঠামো এবং একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী ড.মোঃ জুলফিকার হোসেন প্রবাহ বলেন, শুরু থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অগোছালোভাবে কাজ শুরু করে। কাজে ধীরগতির সাথে সাথে পরিকল্পনার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। শুরু থেকে কাজটি সম্পন্নের ব্যাপারে সিটি মেয়রের আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হলেও সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। তিনি বলেন, গত এক বছর দুই মাসে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ১১৮৫ মিটার ড্রেন নির্মাণের কাজই শেষ করতে পারেনি। ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ না করে মূল সড়কের কাজ করতে পারবে না তারা। বর্ষা মৌসুমের আগে সড়কের ইটের খোয়ার কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীদের দুর্ভোগের মাত্রা বহুগুনে বেড়ে যাবে তিনি আরো বলেন তাড়াহুড়ো করে ড্রেনের কাজ করতে যেয়ে ২ থেকে আড়াই ফুট চওড়া ড্রেন নির্মাণের জন্য তারা বড় এসকোভিটার ব্যবহার করছে। বড় এসকোভিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার ভীতর ঢুকিয়ে ড্রেন নির্মাণের মাটি খননের ফলে দক্ষিণ পাশের সম্পূর্ণ সীমানা প্রাচীর ধসে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তারা হুমকীর মুখে ফেলে দিয়েছে।
খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিধান চন্দ্র রায় দৈনিক প্রবাহকে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণের জন্য ৭/৮ ফুট গভীরতা করেছে কোন প্রটেকশন ছাডাই ভেকু দিয়ে ড্রেন নির্মাণের মাটি কাটে ফেলে রাখায় প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর ধসে পডছে। সীমানা প্রাচীর ধসে পডায় প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মহিলা হোস্টেলে অবস্থানকারীদের নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে, বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষক, শিক্ষিকা, স্টিক হোল্ডরদের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কারসহ যানবাহন প্রবেশে। তিনি বলেন গত ১ মাস ধরে ড্রেনের মাটি খুঁড়ে গর্ত করে রাখার ফলে প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটকের গেটটি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে যেকোন মুহুর্তে ধ্বসে পড়তে পারে। তিনি আরো বলেন, আমাদের নিজস্ব কোন বাজেট বা তহবিল নেই যে, দ্রুততার সাথে সীমানা প্রাচীর পুনঃর্র্নিমাণ করবো। সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণ না হওযা পর্যন্ত অরক্ষিত অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলবে। আমরা ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বিষযটি জানিয়েছি। নির্মাণ কাজের প্রজেক্ট ম্যানেজারকে সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছি। গভ.ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক এস এম সাইফুজ্জামান বলেন, স্কুলের প্রধান ফটকের পাশেই অর্ধেক রাস্তা জুড়ে কালভার্টের জন্য মাটি খনন করে মাসের পর মাস ফেলে রেখেছে । মাটি খনন কাজ যেদিন শুরু করে সেদিন স্কুলের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে খুলনা জেলা প্রশাসক স্যারের আসার কথা ছিল। সংশ্লিষ্টদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বারবার নিশেধ করার পরও তারা কোন কথাই শুনলোনা। তিনি বলেন এখানে একাধিক স্কুল থাকায় ল্যাবরেটরি মোড়টি ব্যস্ততম এবং গুরুত্বপৃর্ন এখানে এভাবে মাটি খনন করে ফেলে রাখায় যেকোন মুহুর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, কাজের ধীরগতি এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়াই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। কাজের গতি বাড়ানো এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য তাদেরকে বারবার মৌখিক এবং লিখিতভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলা হয়েছে তিনি কাজের অগ্রগতির বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।
কুয়েট এপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন্ন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, শুরু থেকে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে কাজটি করতে হচ্ছে। সড়কের দক্ষিণ পাশের জমির মালিকেরা ১ ইঞ্চি জায়গাও ছাড় না দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে। ফলে ড্রেন নির্মাণ করতে যেয়ে শুরু থেকে আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কাজ করতে হচ্ছে। সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানা ধরনের জটিলতার। তিনি বলেন, কুয়েট প্রশাসনের অনুরোধে দুই/আড়াই মাস পর আমরা কাজ শুরু করেছি। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার পাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণের কাজ করছি। কেডিএ, কেসিসি এবং এলজিইডি এই তিনটি সংস্থার সমন্বয়ে কুয়েট এপ্রোচ সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। তিনি বলেন, আগামী জুনের পর জিওবি এবং এডিবি এ জাতীয় প্রজেক্ট বাতিল করবে। সুতরাং জুন পর্যন্ত আমরা সময় পাচ্ছি। আশা করি তার আগেই এপ্রিলের মধ্যে আমরা কাজটি শেষ করতে পারবো।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button