স্থানীয় সংবাদ

তীব্র গরমে খুলনায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে : একদিনে ভর্তি ৩১ জন

তাপমাত্রা আরও বাড়বে

# ২১ দিনে ৯ উপজেলায় ডায়ারিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা ৪২১ জন
# সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা প্রদান
# হিট অ্যালার্ট জারি হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে বিশেষ নিদের্শনা প্রদান : সিভিল সার্জন
# খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৮ এবং খুলনায় ৩৯. ২ ডিগ্রি সে: সি:

কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনায় তীব্র তাপপ্রবাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রোববার খুলনার ৯ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে ৩১ জন ডায়ারিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। চলতি মাসের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে মোট ৪২১ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া খুলনা মহানগরীর মীরের ডাঙ্গা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন ডায়রিয়া রোগী আসছে। এর মধ্যে অনেকেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করছেন। এদিকে সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি হওয়ায় খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও ৯ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা সেবায় বিশেষ নির্দেশ প্রদান করেছেন খুলনার সিভিল সার্জন ( ভারপ্রাপ্ত) ডা: শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিদের্শনা মোতাবেক সব উপজেলা হাসপাতালগুলোতে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বিশেষ করে যারা এই গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের চিকিৎসা সেবায় কোন ধরনের ঘাটতি না হয় সেভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অপরদিকে গতকাল রোববার খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে খুলনায় বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে বলে খুলনা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন। খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, গতকাল রোববার খুলনার ৯ উপজেলায় স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সগুলোতে এবং খুমেক হাসপাতাল মিলে মোট ৩১ জন ডায়ারিয়া রোগী আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন, রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন, দাকোপে একজন, তেরখাদায় ৪ জন, দিঘলিয়ায় ৭ জন, ডুমুরিয়ায় একজন, পাইকগাছায় ৪ জন, কয়রায় একজন এবং ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। চলতি মাসে গতকাল রোববার পর্যন্ত ( ২১ এপ্রিল) গত ২১ দিনে উল্লিখিত হাসপাতালগুলোতে মোট ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২১ জন। এর মধ্যে বটিয়াঘাটায় ১৭ জন, রূপসায় ৬৫ জন, দাকোপে ৩৫ জন, তেরখাদায় ৪৭ জন, দিঘলিয়ায় ৭২ জন, ডুমুরিয়ায় ২২ জন, পাইকগাছায় ৫০ জন, কয়রায় ২৪ জন এবং ফুৃলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬১ জন ডায়রিয়া রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে উল্লিখিত সময়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয় মোট ২৭ জনকে। খুলনার সিভিল সার্জন ( ভারপ্রাপ্ত) ডা: শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ওর স্যালাইনের কোন সংকট নেই। তবে কিছু উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কলেরা স্যালাইন সংকট রয়েছে। তাদেরকে কলেরা স্যালাইন চাহিদামতো কলেরা স্যালাইন মওজুদ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা: শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মতে. হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো ও হিটস্ট্রোক হলে কি করনীয় তা প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ভাইরাস জনিত জ¦র ( ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া), সর্দি-কাশি, জন্ডিস, জলবসন্ত, ব্রঙ্কাইটিস, হাপানি বেড়ে যেতে পারে। সেই সব বিষয়ে সচেতনতামুলক প্রচারনা করা হচ্ছে। খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য শিক্ষা নির্দেশনায় প্রচন্ড গরমে স্বাস্থ্য বার্তা প্রচারনা করা হচ্ছে। খুলনার আবহাওয়াবিদ মো: আমিরুল আজাদ বলেন, গতকাল রোববার দুপুর তিনটার পর খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডযাঙ্গা জেলায়। এই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ইশ^রদীতে (পাবনা) ৪২ ডিগ্রি, কুমারখালী (কুষ্টিয়ায়) ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি , যশোরে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি , মোংলায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং খুলনায় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো যশোর জেলায়। এই জেলায় তাপমাত্রা ছিলো ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রের্কড করা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খুলনার আবহাওয়াবিদ মো: আমিরুল আজাদ বলেন, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। খুলনা মহানগরী মীরের ডাঙ্গা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা: মো: হবিবুর রহমান রোববার এ প্রতিবেদককে বলেন, গরমে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মাসের ২১ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত মোট ৩৫০ জন ডায়ারিয়া রোগী ভর্তি হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগীরা আসছে। এর মধ্যে কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন, আবার অনেককেই ভর্তি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আপাতত হাসপাতালে ওর স্যালাইন ও কলেরা স্যালাইনের কোন সংকট নেই। এর আগে মার্চ মাসে মোট ৪৬০ জন ডায়ারিয়া রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button