খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামকে অবশেষে নাটোরে বদলী
দৈনিক প্রবাহে ই সর্বপ্রথম অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্ণীতির একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল

বদলীর খবরে প্রতিষ্ঠানে স্বস্তির আমেজ, চলছে আনন্দ উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ
খানজাহান আলী থানা প্রতিনিধিঃ খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামকে অবশেষে নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বদলী করা হয়েছে। তার স্থলে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সংযুক্ত থাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আতা হিয়া বিন খুদাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশীক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ এস এম ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে দৈনিক প্রবাহে ‘‘খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ১২ অভিযোগ, রাতের আধারে প্রতিষ্ঠানের সরকারি গাছ কর্তন’’ শীর্ষক সংবাদসহ একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কার্যক্রম শেষে অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামকে বদলী করা হয়েছে বলে একটি সুত্রে জানাগেছে। এদিকে গতকাল ২৪ এপ্রিল বুধবার সকালে প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের বদলীর খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং প্রশিক্ষণার্থীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে এ সময় তাদেরকে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়। খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা, সরকারি সম্পদ নষ্ট, রাতের আধারে সরকারি গাছ কর্তন, প্রশিক্ষণার্থীদের গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার,প্রশিক্ষণার্থীদের কাঁচামালের অর্থ আত্মসাৎ, দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণার্থীদের সম্মানী প্রদান না করা, প্রতিষ্ঠানের অধিনস্তদের সাথে সার্বক্ষনিক অসাদাচরণ, তাদেরকে শারিরিক ও মানুষিকভাবে নির্যাতন-লাঞ্ছিত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানের ৪০জন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারী লিখিত অভিযোগ করেন। অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের ড্রাইভার আমিনুর সরদারকে শারিরিক ভাবে লাঞ্চিত করায় মহাপরিচালকের বরাবর গত বছরের ২৩ নভেম্বর আরো একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। পরবর্তিতে অভিযোগকারীদের উপর অফিসিয়ালভাবে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে প্রতিষ্ঠানের প্রায় সকলে একযোগে শান্তিপুর্ণ আন্দোলন শুরু করে। তারা অধ্যক্ষের অপসারণ এবং অভিযোগ সমুহের তদন্তপুর্বক শাস্তির দাবীতে গত বছর ১০ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতীসহ বিভিন্ন কর্মসুচি শুরু করেন। এক পর্যায়ে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিএমইটি’র পরিচালক(প্রশিক্ষণ মান ও পরিকল্পনা) মো. আকরাম আলীকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পরিচালক(প্রশাসন ও অর্থ) কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিতে বলা হয় খুলনা করিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের লিখিত অভিযোগ, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুই বক্তি কর্তৃক বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা রুজু এবং স্থানীয় দৈনিক প্রবাহ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় বিএমইটি বিষয়সমুহ তদন্তের জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটিকে সরেজমিন তদন্তপূর্বক সুষ্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন সাত কর্মদিবসের মধ্যে দাখিলের জন্য বলা হয়। দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ২ জানুয়ারী প্রতিষ্ঠানে তদন্তে এসে তাদের তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। তদন্ত কমিটির কাছে দৈনিক প্রবাহে গত ১৯/৯/২০২২ তারিখে রাতের আধারে খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গাছ কর্তন, ২২/০৯/২২ তারিখে খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষের রিবুদ্ধে ১২ অভিযোগ এবং সর্বশেষ গত ২৪/৩/২০২৪ তারিখে প্রতিষ্ঠানের বারো শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হত্যার হুমকি শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের কপি তুলে ধরা হয়। সর্বশেষ কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হত্যার হুমকির ঘটনায় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলো নড়েচড়ে বসেন। এই ঘটনার ঠিক এক মাসের মধ্যে বদলী করা হলো খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামকে নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বদলী করা হলো। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশীক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ এস এম ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত ২৩ এপ্রিলের এক প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামকে নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এবং সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সংযুক্ত থাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আতা হিয়া বিন খুদাকে খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে সংযুক্ত করা হয়। এদিকে অধ্যক্ষের বদলীর খবর প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করে মিষ্টি খাওয়াতে দেখা যায়। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা -কর্মচারী এবং প্রশিক্ষণার্থীরা অধ্যক্ষের বদলীর খবরে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। এলাকাবাসী মনে করছে অধ্যক্ষের বদলীর মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘদিনের অচালবস্থার নিরসন হয়েছে একই সাথে প্রতিষ্ঠানটিতে শৃংখলা ফিরে আসবে। নতুন অধ্যক্ষকে প্রতিষ্ঠানের সকলে সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পূর্বের ঐতিহ্য ও সুনামকে ফিরে এনে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ গড়তে বিশেষ ভুমিকা রাখবে।