স্থানীয় সংবাদ

খুলনা জেলা প্রশাসনের সতর্কতা : ফের তিনদিনে ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি :

খুলনা বিভাগের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪২.২, খুলনায় ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস

স্টাফ রিপোর্টার ঃ গতকালও খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। এই দুই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই দিনে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া এমন পরিস্থিতিতে খুলনা জেলা প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছেন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে না যেতে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। করা হচ্ছে মাইকিং। এছাড়া গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটার পর খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। এই দুই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময়ে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া মোংলা ৪০ ডিগ্রি, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি, কয়রায় ৪০.২ ডিগি, ইশ^রদীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সাতক্ষীরায় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রের্কড করা হয়। এর আগের দিন মোংলা ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি, কয়রায় ৪০ ডিগ্রি এবং সাতক্ষীরায় ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রের্কড করা হয়। এই সিনিয়র আবহাওয়াবিদ বলেন, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে খুলনায় বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (আরএমও) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। গড়ে প্রতিদিনই ৩০-৫০ জন করে রোগী বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১ হাজার ৫০৭ জনে। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রোগী রয়েছে তিনগুণ। ফলে চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের। এদিকে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে না যেতে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। করা হচ্ছে মাইকিং। এছাড়া গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাপপ্রবাহের জন্য খুলনা সিভিল সার্জনের সাথে পরামর্শক্রমে খুলনা জেলাবাসীকে নিন্মোক্ত নির্দেশনা পালনে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো-
১. বিশেষ প্রয়োাজন ছাড়া প্রখর রোদে বাইওে বের না হওয়া। বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে।
২. পানি শূন্যতা পরিহার করতে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
৩. সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা ও বাসি, খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
৪. ভাজা পোড়া খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
৫. ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর বার বার মুছতে হবে।
৬. শ্বাসকষ্টের রোগী ও শিশুদের বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৭. বিদ্যমান প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ/মৎস্য/ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
৮. বাস শ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমিকরা যেন বেশিক্ষণ তীব্র রোদে না থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। ৯. অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এদিকে আবারও সারা দেশে তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ নিয়ে চতুর্থবার হিট অ্যালার্ট দিল সংস্থাটি। গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। এর আগের আরও তিনবার তথা গত ৩, ১৯ ও ২২ এপ্রিল তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছিল। তবে প্রথম দুইবার তাপমাত্রা বাড়ার আভাস ছিল। চলতি মাসে টানা তাপপ্রবাহ চলছে। মাঝে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেলে বর্তমানে কিছুটা কমেছে। গত ২০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, মোংলায় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি, খুলনায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, এখনো যা বিদ্যমান আছে। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল আগের নয় বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ঈশ্বরদীতে, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০১৪ সালের মে মাসে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল আগের ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ, ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এই রেকর্ড এখনো ভাঙেনি। এদিকে তিব্র গরমে সাতক্ষীরায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানায়, সাতক্ষীরার উপর দিয়ে আজ বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। ঘরে-বাইরে কোথাও মিলছে না স্বস্তি। জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। প্রচন্ড এই গরমে কাজ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো। আজ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমে একদিকে যেমন সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে, তেমনি পুড়ছে সড়কে চালাচলরত পথচারীদের চোখমুখ। তীব্র দাবদাহে বিশেষ কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেনা। বিশেষ প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন তারা দুপুরের আগেই ঘরে ফিরছেন। দুপুরের আগেই শহর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। গরম নিবারনে বেশীরভাগ শ্রমজীবি ও খেটে খাওয়া মানুষ গুলো আশ্রয় নিচ্ছেন গাছ তলায়। পিপাসা নিবারনে জন্য শহরের বিভিন্ন ডাব, আখের রস ও শরবেতর দোকান গুলোতে ভিড় লক্ষনীয়। কেউ কেউ আবার গরম থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘক্ষন ধরে পৌরদীঘিসহ শহরতলীর বিভিন্ন পুকুরে গোসল করছেন। অত্যাধিক এই গরমে ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের। তবে, এই তীব্র গরমে পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে প্রচুর পরিমান বিশুদ্ধ পানি পানের পাশাপাশি একটানা কাজ না করে বিশ্রাম নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসরা। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, গতকাল বিকাল ৩ টায় সাতক্ষীরার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাতাসের আদ্রতা শতকরা ১৯ ভাগ। আগামী আরো কয়েকদিন এমন তাপামাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আরো জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button