স্থানীয় সংবাদ

কয়রার তরমুজ যাচ্ছে এখন রাজধানীতে

রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ উপকুলীয় জনপদ খুলনার কয়রায় চলতি মৌসুমে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কয়রার তরমুজ এখন যাচ্চে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ বছর কয়রায় ২ হাজার ৯ শত ৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। আর এ থেকে তরমুজ উৎপাদন করা হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৬০ টন। যা থেকে কৃষকরা আয় করবেন প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা বলে দাবি করছেন উপজেলা কৃষি অফিস। উৎপাদিত এসব তরমুজ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক। গত বছরের বৃষ্টিতে তরমুজ চাষের ক্ষতি পুষিয়ে এবার লাভবান হবেন বলে চাষিরা মনে করছেন। তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপকূলীয় উপজেলায় সর্বত্রই লবণপানি, বেড়ীবাঁধের মধ্যে মিষ্টি পানির আঁধার তৈরি করে আমাদী, বাগালী ও মহেশ্বারীপুর ইউনিয়ানে তরমুজের চাষ হয়েছে। কয়রার তরমুজ এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর তরমুজের আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৯ শত ৪৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ফলন ৩৮ থেকে ৪২ টন। মোট ফলন ১ লাথ ৩১ হাজার ৯৬০ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা। কয়রার ৭টি ইউনিয়ন মধ্য ৩টি ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমাদী, বাগালী ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে তরমুজ চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে আমাদী ইউনিয়নে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ তরমুজ ক্ষেত। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তরমুজ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে জড়ো করে রেখেছেন বিক্রির জন্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা তরমুজ কিনতে ক্ষেতে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে দরদাম করে ক্ষেতে কিনে নিচ্ছেন। এই তরমুজ ক্ষেত থেকে ট্রলি বোঝাই করে ট্রাক ও কার্গ ভর্তি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে ট্রলিতে করে এনে ট্রাক ও কার্গ লোড করছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তুলে বাজারজাত করার জন্য ব্যস্ত চাষি ও ব্যাপারীরা। কেউ ক্ষেত হিসাবে তরমুজ বিক্রি করছেন আবার কেউবা পাইকারি বাজারে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ তরমুজ ক্ষেত বিক্রি হয়ে গেছে। ৪০ শতাংশ তরমুজ কৃষকের ক্ষেত রয়েছে। প্রতিদিন কয়রা থেকে ২ থেকে ৩ শত ট্রাক তরমুজ নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, বিগত বছরে তরমুজ চাষে আর্থিকভাবে লোকসান হলেও এবার লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। তবে অনাবৃষ্টির কারণে পানি দিতে অধিক টাকা খরচ হয়েছে। বাগালী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আঃ রউফ বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আমার বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা তরমুজ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছি। আমাদী ইউনিয়নের কিনুকাটি গ্রামের অমল মন্ডল বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আমার খরচ বাদে প্রায় লক্ষাধিক টাকা লাভ থাকবে বলে আশা করছি। কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে মিষ্টি পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তরমুজ চাষে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এসব এলাকায় খাল খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করতে পারলে তরমুজের চাষ আরও বাড়ানো যেত। এখন পর্যন্ত বাজারে তরমুজের দাম সন্তোশজনক। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ক্ষেতের ৬০ ভাগ তরমুজ বিক্রি হয়ে গেছে। এ বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামীতে তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button