স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় ২৫ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস

১০ বছর পর চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ ৪৩ ডিগ্রিতে উঠলো

দাবদাহে পুড়ছে খুলনা, তিব্র গরমে ঘরে ঘরে জ¦র-সর্দি-ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

কামরুল হোসেন মনি ঃ এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে দাবদাহে পুড়ছে খুলনা বিভাগ। এক সপ্তাহ ধরে এই বিভাগে তাপমাত্রা ৩৯-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। খুলনায় গত ২৫ বছর মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে গতকাল সোমবার। এই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল খুলনাতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। অন্যদিকে এবার চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল সোমবার দুপুর ৩টায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ জেলায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে জেলায় চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৬ এপ্রিল দুপুর ৩টায় ওই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২১ মে এ জেলায় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। অপরদিকে তিব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঘরে ঘরে জ¦র-সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে। গরমজিনত রোগের কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও জ¦র আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গত সপ্তাহ থেকে হু হু করে বাড়ছে। আবহাওয়াজনিত কারণে মানুষ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, গত ২৫ বছরের মধ্যে গতকাল সোমবার দুপুর তিনটার পর খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট ও গাছপালা কেটে স্থাপনা গড়ে তোলাই প্রধানত গরম বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এ ছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে খুলনা বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আর যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া খুলনায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, মোংলায় ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং কয়রায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি। এর আগের দিন খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে। এই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময়ে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ওই দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া মোংলা ৪০.৮ ডিগ্রি, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি, কয়রায় ৩৯.৬ ডিগি, ইশ^রদীতে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং সাতক্ষীরায় ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রের্কড করা হয়। অপরদিকে এবার দেশে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল সোমবার দুপুর ৩টায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ জেলায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে জেলায় চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৬ এপ্রিল দুপুর ৩টায় ওই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২১ মে এ জেলায় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। সে হিসাবে ১০ বছর পর চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ ৪৩ ডিগ্রিতে উঠলো। এমন তাপমাত্রার ফলে টানা খরতাপে জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে জনজীবন ওষ্ঠাগত। ভুগছে প্রাণীকূলও। দিন রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যও থাকছে কম। দিনের বেলায় প্রচ- রোদ আর সন্ধ্যার পর ভ্যাপসা গরম নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবনে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেলা ১২টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। যারাওবা বের হচ্ছেন, তাদের ছাতা মাথায় দেখা গেছে। এই তাপপ্রবাহে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর এবং ভ্যান ও রিকশা শ্রমিকেরা। গরমে ঘেমে-নেয়ে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। এদিকে তীব্র তাপদাহে মাঠের ফল-ফসলও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে। কোথাও কোথাও ফসল ঝলসে যাওয়ার খবর মিলেছে। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, এ রকম তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে আরও কয়েকদিন। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনো আভাস নেই। এদিকে গত ১৩ এপ্রিল থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। টানা আবহাওয়ার এমন বিরাজ করায় নেই বৃষ্টির দেখা। সেই সাথে বেড়েছে ঘন ঘন লোডশেডিংও। তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে খুলনায় দফায় দফায় বৃষ্টির কামনায় ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লীরা। নাভিশ্বাস নেমে এসেছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। অসহ্য গরমে পথচারী, যানবাহন চালক ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কাছে পানি, শরবত ও ফল নিয়ে যাচ্ছে খুলনার বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও তরুণ সমাজ। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (আরএমও) ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। বিশেষ করে জ¦র-সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিটি ঘরে কেউ না কেউ এসব গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, গতকাল সকাল ৭টা পযন্ত খুমেক হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলো ১ হাজার ৩৮৯ জন। এর আগেদিন রোগী ভর্তি ছিলো ১ হাজার ৪৪৩ জন। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রোগী রয়েছে তিনগুণ। ফলে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button