স্থানীয় সংবাদ

দেশে এইচআইভি/এইডস শনাক্তের মধ্যে তৃতীয় খুলনা

# শনাক্তে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে না,
# দেশে শনাক্তের হওয়ার রোগীদের মধ্যে চিকিৎসার বাইরের ২৫%
# স্যালুন থেকেও হতে পারে এইডস, উদাসীনতায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি
# খুমেক হাসপাতালে এআরটি সেন্টারে গত ৫ মাসে শনাক্ত ৩২
# কারাগারে এইচআইভি টেস্ট করা হচ্ছে

কামরুল হোসেন মনি ঃ একসময় শিরায় মাদক গ্রহনকারী, যৌনকর্মী, সমকামী এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি/এইডস বেশিশনাক্ত হতো। এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ রোগ শনাক্ত হচ্ছে। ২০২৩ সালে দেশে এইচআইভি/এইডস শনাক্ত হয়েছে ১২৭৬ জন। এর আগের বছর শনাক্ত হয়েছিলো ৯৪৭ জন। এর আগে কোন বছর এতো রোগী দেখা যায়নি। দেশের এইচআইভি/এইডস শনাক্তের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খুলনা। বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত আনুমানিক ১৫ হাজার রোগীর মধ্যে ৫ হাজার এখানো শনাক্তের বাইরে। আর শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে চিকিৎসার বাইরে রয়েছে ২৩ শতাংশ রোগী। এবার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চেয়ে সাধারণ মানুষ এইচআইভিতে বেশি সংক্রমিত হয়েছে। শনাক্ত ও চিকিৎসার বাইরে থাকা রোগীদের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর স্কুল হেলথ ক্লিনিক কনফারেন্স রুমে এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে সচেতনতামুলক কর্মশালায় এইসব তথ্য উঠেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনার সিভিল সার্জন ( ভারপ্রাপ্ত ) ডা: শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। মেডিকাল অফিসার (সিএস) ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা উষার সঞ্চালনে কর্মশালায় প্রধান অতিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলন্ াবিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ( স্বাস্থ্য) ডা: ফেরদৌসী আক্তার। ডিপিএম ডাঃ তানভির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় জানানো হয়, এইচআইভি/এইডস রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। উদ্যোগের অধীনে, রোগী শনাক্ত বাড়াতে ও চিকিৎসার আওতায় আনতে ১০টি কারাগারে এইচআইভি পরীক্ষা সুবিধা চালু করা হয়েছে। কর্মশালয় জানানো হয়, ২০২৩ সালে দেশে নতুন করে ১ হাজার ২৭৬ জন এইচআইভি/এইডস রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে রহিঙ্গা জনগোষ্টি ছিলো ১৫৮ জন। এর আগের বছর ২০২২ সালে শনাক্ত হয়েছিলো ৯৪৭ জন। যা প্রতিবছরই দেশে এইচআইভি/এইডস রোগী শনাক্ত সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে গর্ভবতী মায়েদের জন্য ‘প্রিভেনশন মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন’ (পিএমসিটি) নামে একটি প্রোগ্রাম চালু আছে। এই প্রোগ্রামে এইচআইভি/এইডস পজিটিভ নারীর গর্ভের সন্তনটি যেন এইচআইভি নেগেটিভ হয়, সে লক্ষে সেবাদান করা হচ্ছে। এই প্রোগ্রামের আওতায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬১৫ জন গর্ভবতী মায়েদের পরীক্ষার মধ্যে ৩৫ জন এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩০ জনের ডেলিভারির মধ্যে ২৯ জনই বাচ্চার নেগিটিভ পাওয়া যায়। একজন শিশুর পজিটিভ পাওয়া গেছে। কর্মশালায় জানানো হয়, দেশের ২৩টি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত জেলা- যে জেলাগুলোয় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বেশি, অর্থাৎ প্রতি বছর বেশি সংখ্যক রোগী পাওয়া যায়, সেসব জেলায় ‘কম্প্রিহেনসিভ ট্রিটমেন্ট’ দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাশাপাশি চলতি বছর ১০টি কারাগারে এইচআইভি টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ”কারাবন্দিদের একটি বড় অংশ মাদকসেবী ও মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই তাদের ঝুঁকি বেশি। সে কারণে কারাগারে এইচআইভি টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টেস্ট করে কারাগারে এইডস রোগীও পাওয়া গেছে’। সংক্রামক এই ব্যাধি মোকাবেলায় ২০২৫ সালের মধ্যে ৯৫-৯৫-৯৫ লক্ষ্য পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে ইউএনএইডস। এর আওতায় এইচআইভিতে আক্রান্ত লোকেদের ৯৫ শতাংশ তাদের এইচআইভি স্ট্যাটাস জানবে, যারা এইচআইভি পজিটিভ তাদের ৯৫ শতাংশ চিকিৎসার জন্য তালিকাভুক্ত হবে, এবং চিকিৎসাধীন আক্রান্তদের ৯৫ শতাংশের ভাইরাল লোড, অর্থাৎ তাদের দ্বারা যেন অন্যরা আক্রান্ত না হয় তা দমন করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে এইডস নিয়ন্ত্রণে ইউএনএইডসের ৯৫-৯৫-৯৫ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্জন ৬৩-৭৭-৯৩। কর্মশালায় প্রধান অতিথি খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-পরিচালক ডা: ফেরদৌস আক্তার বলেন, “এইডস শনাক্ত হলে, তা লুকোনোর বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ থাকতে পারবেন, সেইসঙ্গে পরিবার ও সমাজের সাধারণ মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমবে। খুলনা সিভিল সার্জন ( ভারপ্রাপ্ত) শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, সচেতনতা ছাড়া এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব না। তিনি বলেন, বর্তমানে সাধারণ জনগোষ্ঠির মধ্যে এইচআইভি/এইডস শনাক্ত হচ্ছে। তার কারণ, সড়কদুর্ঘটনা কোন মুমুর্ষ ব্যক্তির জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন। ওই সময় দেখে গেছে যে ব্যক্তি রক্ত দিচ্ছে সে আগেই থেকে এইচআইভি/এইডস পজিটিভ ছিলো। যার কারণে ওই রক্ত একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরের গিয়ে এই মরনব্যাধি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্যালুন থেকেও হতে পারে এইডস : বিশষজ্ঞরা বলছেন, মানবদেহে এইডস ছড়ানোর অন্যতম একটি মাধ্যম স্যালুন। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। মানবদেহে অনেক কারণে এইডস ছড়ায়। এর মধ্যে অনিরাপদ যৌন মিলন, আক্রান্ত রোগীর রক্ত গ্রহণ কিংবা এইডস জীবাণুবাহী কিছু দ্বারা শরীর কেটে যাওয়া অন্যতম। স্যালুনকর্মীদের মাধ্যমে কেটে গিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে এ রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। উদাসীনতায় এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি: খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সূত্র মতে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত গত ৫ মাসে মোট ৬৮৫ জনের এইচআইভি/এইডস পরীক্ষার মধ্যে ৩২ জন এইচআইভি/এইডস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ শনাক্ত হয় ৩২ জন এবং মহিলা রয়েছে ৯ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনাক্ত হওয়া রোগী চিকিৎসা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। সমস্যা মোকাবিলায় পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। একসময় শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইডস বেশি শনাক্ত হতো। এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ রোগ শনাক্ত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button