স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় মৌসুমী ফলে সিন্ডিকেট!

মো: মুশফিকুর রহমান (মেহেদী) : জামাইষষ্ঠী কিংবা আত্মীয়ের বাড়ি। জৈষ্ঠ মাসের মৌসুমী ফলের কদরই আলাদা। গ্রীস্মের তীব্র তাপদাহের মধ্যেও জমজমাট ফলের বাজার। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে মৌসুমী ফলের যেন বিকল্প নেই। মধুমাস খ্যাত জ্যৈষ্ঠের এ মৌসুমী ফলই যেন পুরো বছরের তৃপ্তি ধরে রাখে।
এদিকে, মানুষের এই চাহিদাকে পুঁজি করে খুলনার একটি চক্র দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে মৌসুমী ফলের। সিন্ডিকেটের এ কালো হাত যেন কৃষক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত পড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে ক্রেতাদের উপর। অন্য মাসের তুলনায় এই দুই মাসে বাজারে ফলের উপস্থিতি থাকে বেশি। কিন্তু দাম বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ মৌসুমী ফলের দাম চড়া। সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড, গল্লামারি বাস স্ট্যান্ড, শান্তিধাম মোড়, কোর্টের মোড়, টুটপাড়া কবরখানা মোড়, নিউমার্কেট ফল পট্টি, খালিশপুর চিত্রালী বাজার, বৈকালী বাজার, হাউজিং বাজার, নতুন রাস্তার মোড়, দৌলতপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি খুচরা দোকানে দেখা যায় এমন চিত্র। লিচু, আম, কাঁঠাল, কালো জাম, সবেদাসহ প্রায় সকল মৌসুমী দেশী ফল কিনতে হচ্ছে উচ্চ মূল্যে।
যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লিচু বর্তমানে শ’প্রতি ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা পূর্বে ছিল ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে লিচুর দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধুমাত্র সিন্ডিকেট নয়। চাহিদার তুলনায় লিচু কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
কোর্ট এলাকার ভ্রাম্যমাণ লিচু ব্যবসায়ী হারিস আলি বলেন, ‘বর্তমানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার কমে ভালো কিছু নেই। চাহিদা বেশি থাকায়, আড়তে লিচু সংকট।’
নিউ মার্কেট ফলপট্টির একজন ফল বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা পাইকারি বাজার থেকে যেমন দামে কিনে আনি, তেমন দামেই বিক্রি করি। আমরা খুব বেশি লাভ করি না। তবে পাইকারদের নিয়ে সংশয়।’
এদিকে, ভরা মৌসুমেও চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে আম। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আমের ফলন বেশি হলেও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আম। আকার ও জাত ভেদে প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২০০ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, মধ্যস্বত্তভোগীরা অধিক মুনাফার আশায় আমের দাম বৃদ্ধি করেছে।
খুলনার নিকটবর্তী উপজেলা বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়ার আম বাগান ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। প্রায় অর্ধেক দামে আম কিনে বিক্রি করছে দিগুণ দামে।
বটিয়াঘাটার হরষিত পাল বলেন, আমাদের এখানে পাইকারি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে আম কিনে নিয়ে যায়। সেই আম খুলনার খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২০০ টাকা।
খুলনার ট্রাক স্ট্যান্ড, স্টেশন রোডে সাতক্ষীরার আম পাইকারি দামে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৯৩ টাকা। যা খুচরা বাজারে ১২০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া অঞ্চলে কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে কালো জাম পাওয়া গেলেও খুলনার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা।
অপরদিকে, জৈষ্ঠ্যের অন্যতম মৌসুমি ফল কাঁঠালের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে একই চিত্র। নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়, খালিশপুর চিত্রালী বাজার ও দৌলতপুর বাজারে প্রতিটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। যা বিভিন্ন গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা মাত্র ৮০ থেকে ২৫০ টাকায়।
জৈষ্ঠ মাসের ফলের দাম বেশি থাকায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। ইচ্ছা থাকলেও সাধ্যমত কিনতে পারছেন না মৌসুমী ফল।
খুলনা কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত আমির আলী বলেন, কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে কমতে পারে মৌসুমী সকল ফলের দাম। এ সকল সিন্ডিকেট ভাঙতে আমাদের সকলেরই সোচ্চার হওয়া উচিত।
শিপ্রা রানী দাস নামক এক গৃহিণী বলেন, মধ্যবিত্ত কিংবা নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন বাড়তি দামে ফল কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। আড়াইশো টাকার লিচু এখন ৫০০ টাকা। যা আমাদের ক্রয় সীমার বাইরে।
তবে কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপনন কর্মকর্তা মো: সুজাত হোসেন খান বলেন, ফলমূলের যৌক্তিক মূল্য কৃষি বিপণন আইন ২০১৮, কৃষি বিপণন বিধিমালা ২০২১ ও কৃষি বিপনন নীতি ২০২৩ অনুযায়ী যৌক্তিক মূল্য বেঁধে দেওয়া এবং ক্রয় রশিদ তদারকি করা উচিত। দোকানে কিংবা প্রতিষ্ঠানে যে কোন ফলের দৈনিক মূল্য টানিয়ে রাখাসহ সেটি আপডেট করা প্রতিটি ফল ব্যবসায়ীর নৈতিক দায়িত্ব। যদি কেউ সেটি লংঘণ করে, তবে কৃষি বিপণন আইনে দুই বছর সাজাসহ ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button