স্থানীয় সংবাদ

সাবধান : মাছ বিক্রিতে প্রতারণা!

ভালোর আড়ালে বিক্রি হচ্ছে পঁচা মাছ
মনিটরিংয়ের অভাবে সুযোগ নিচ্ছে অসাধু বিক্রেতারা

মোঃ রায়হান মোল্লা : ‘কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি, মাছ ছাড়া বাঙালির চলে না।’ অথচ এই মাছ নিয়ে চলছে কারসাজি আর প্রতারণা। নগরীর অধিকাংশ বাজারেই ভালো মাছের আড়ালে বিক্রি করা হচ্ছে পঁচা মাছ।
টাটকা ও গ্যারান্টি দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের পঁচা মাছ। দেখে বোঝার কোন উপায় নেই। উপর থেকে চকচকে দেখায় কিন্তু ভিতরে পঁচা, খাবার অযোগ্য। ৪-৫ পদের ভালো খারাপ মাছ একসাথে মিশিয়ে হাক-ডাক দিয়ে বিক্রি করছে। অনেকে মাছে হাত না দিয়ে মুখের কথা বিশ্বাস করে মাছ কিনে নিয়ে বাসায় গিয়ে টের পান।
নগরীর সন্ধ্যা বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার ও খালিশপুর আলমনগর বাজারের কিছু বিক্রেতা মানহীন মাছ বিক্রি করেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে। ক্রেতাদেরকে টাটকা বলে বিক্রি করে ঠকিয়ে যাচ্ছে এ অসাধু ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত বিক্রি না হওয়ায় পঁচা ও নরম মাছও বরফ দিয়ে রাখছেন তারা। ভালো মাছ চেনা বড় দায়। প্রশাসন কর্তৃক অভিযান ও মনিটরিংয়ের অভাবে নিরবেই নগরীতে এসব মানহীন মাছের বিক্রি অবাধে চলছে। এতে ঠকছেন ক্রেতা। তবে মাছ বিক্রেতারা এ সুযোগ নিচ্ছে।
কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে নরম-গলা মাছ নিয়ে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। সকালে বিক্রি না হওয়া আগের দিনের মাছ টাটকা, নদীর মাছ বলে কৌশলে ক্রেতাদের ব্যাগে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, যাতে লোকসান না হয়। বরফ দেওয়ার কারণে শক্ত থাকে, বরফ ছেড়ে গেলে তখনই বোঝা যায় মাছটি কতটা ভালো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলম নগর বাজারে আজিজুর নামে এক মাছ বিক্রেতা, মাথা খাওয়া, লেজ কাটা নরম ইলিশ মাছ ৫শ’-৭শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। বলছেন- বরিশালের ইলিশ। বিক্রি না হওয়ায় সেটি আবারও বরফ দিয়ে রেখে দেন পরে বিক্রি করবেন বলে।
ফেরদৌস নামে এক ক্রেতা বলেন, নগরীর সন্ধ্যা বাজারের সামনে থেকে আক্তার নামে এক মাছ বিক্রেতার কাছ থেকে ৬৫০ টাকা দিয়ে একটি আইড় মাছ কিনেছি। পরে বাসায় নিয়ে মাছটি কাটতেই পঁচা দুর্গন্ধ বের হয়। পরে মাছ বিক্রেতাকে পঁচার কথা বললে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোন পঁচা মাছ বিক্রি করি না।’ আশেপাশের কিছু দোকানদারও ওই দোকানিকে ভৎসনা করেন। কিন্তু ফলাফল শূণ্য। পুরো টাকাটায় জলে গেলো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ক্রেতা আব্দুর রহিম জানান, আমি মিস্ত্রিপাড়া বাজার থেকে প্রীতিশ নামে চালনার এক মাছ বিক্রেতার কাছ থেকে রুই ও মৃগেল মাছের দুই কেজি পোনা মাছ কিনেছিলাম। কিন্তু সেগুলো নষ্ট হয়েছে, খেতে পারিনি। তাকে মাছ নষ্টের কথা বললে সে বলে ‘আমি চালনা থেকে মাছ নিয়ে আসি, আমার মাছ নষ্ট নয়- মাছ এ রকম নরম হয়, কিন্তু ভালো-আরেকবার নিয়ে দেখেন।’ এভাবে ভালো হবে বলে গ্যারান্টি দিয়ে নয় ছয় বুঝিয়ে দেয়।
রুমা নামে আরও এক ক্রেতা বলেন, আমি প্রায়ই মিস্ত্রিপাড়া বাজার থেকে মাছ কিনি। অনেকবার মাছ কিনে ঠকেছি, পঁচা-নষ্ট। তাই এখন জীবিত মাছ ছাড়া কিনি না।
সন্ধ্যা বাজারে আসা নূর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, প্রায় এই বাজারে দীর্ঘক্ষণ ধরে নরম ও গলা-পঁচা মাছ নিয়ে বসে থাকে বিক্রেতারা। বিক্রি না হলে এগুলো আবারও বরফ দিয়ে রেখে দিতে দেখেছি।
ক্রেতা সাথী বেগম জানান, আমি গরীব মানুষ, দিন মজুর হিসেবে কাজ করি। আলম নগর বাজারের এক দোকানির কাছ থেকে মাছ কিনেছি, সেটি নষ্ট। কি করবো গরম পানি দিয়ে ধূয়ে তেলে ভেজে খেয়েছি। মাছ ওয়ালা যদি ঠকায় কি করার আছে বলে অনেকটা হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
পঁচা-নরম মাছ বিক্রির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাছ বিক্রেতারা বলেন, ‘টাটকা মাছ না বললে কেউ তো কিনবে না। আমাদের তখন অনেক লস হয়ে যাবে। আর বাজারতো সব সময় এক রকম যায় না। তাই বিক্রি না হলে কি করবো। বরফ দিয়ে রেখে দিই। পরে বিক্রি করি।’
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম জানান, এ ধরনের কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলার সহকারী পরিচালক মোঃ ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, এটিতো এক ধরণের প্রতারণা। নিয়ম তো তাজা মাছ বিক্রি করা। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে মাছ বাজার তদারকি এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button