স্থানীয় সংবাদ

মোংলার হাজারো জেলের পেটে ভাত নেই : অনাহারে চলছে তাদের সংসার

ঘূর্ণিঝড় রেমালে সব হারিয়ে জেলে পরিবারেগুলোতে নীরব কান্না

এইচ এম দুলাল মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ঃ ঘূর্ণিঝড় রেমাল কেড়ে নিয়েছে মোংলা জেলে পরিবারের শেষ সম্ভল জাল-নৌকা আর সরঞ্জমাস সহ জেলেদের মাথা গোজার ঠাই বসত ঘর। একদিকে ঝড়ের ক্ষত চিহ্ণি অন্যদিকে মাছের প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে ঝুড়ে সরকারের চলমান ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা। ফলে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পেশাজীবী জেলেদের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। বেকার হয়ে পড়েছে এ এলাকার প্রায় ২৫/৩০ হাজার জেলে। পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন বাঁচাতে নতুন করে লড়াই করতে হবে নির্ভরশীল এ পেশার সাথে জড়িতদের। জেলেদের চলমান এ সংঙ্কট মোকাবিলায় সরকারী সহায়তার দাবী জানিয়েছেন তারা। তবে ক্ষতিগ্রস্থ জেলে পরিবারগুলো ঘুরে দাড়াতে বিকল্প কর্মসংস্থান সহ সরকারী সহায়তার আশ্বাস উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্টদের। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে নদী ও খালের পরিমান ১৮ শত ৭৪.১ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনের পানির ভাগকে বলা হয় মৎস্য সম্পদের ভান্ডার। মোংলার উপকুলীয় এলাকায় কয়েক হাজার জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সাগর ও সুন্দরবনের মৎস্য আহরণের উপর নির্ভরশীল। বছরের পুরো সময়টাই কাটে তাদের সুন্দরবনের সাগর-নদী-খালে মাছ ধরে। আর এতে যতটুকুই রোজগার হয় তা দিয়েই চলে তাদের পরিবারের সংসার। গত ২৬ মে হঠাৎ শুরু হয় ঘূণিঝড় রেমালের তান্ডব, রাত-দিনের চলমান এ তান্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এখানকার সুন্দরবন সহ মোংলা উপক’লীয় এলাকা জয়মনির জেলে পল্লীতে। নদীর উপকূলে বসাবস করায় বন্যার পানিতে ভাসিয়ে নিয়েছে তাদের জাল-নৌকা ও সরঞ্জাম সহ মাথা গোজার ঠাই ঘর ও ঘরের মুল্যবান মালামাল। এতে বেশীর ভাগ জেলেরা রাস্তায় আবার কেউ নদীর তীরে টংঘর তৈরী করে বসবাস করছে। এখানকার হাজারো জেলের পেটে ভাত নেই, তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দিন চলছে আনাহার-অর্ধাহারে। ক্ষতিগ্রস্থ জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, এরই মধ্যে বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ১লা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে মাছ আহরন, পর্যটক প্রবেশ সম্পুর্ন বন্ধ ঘোষনা করা হয়। এ যেন রীতিমত জেলেদের উপর মরার উপর খাড়ার ঘা। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটছে তাদের অনেক কষ্টে। জীবন বাচাঁতে নদীতে একদিকে কুমির ভেসে যাচ্ছে আর অন্যদিকে নদীর পড়ে নারীরা জাল টেনে পোনা মাছ ধরে দিন চলছে তাদের। এ উপকুলীয় এলাকায় জেলে পেশার সাথে জড়িত প্রায় ২৫/৩০ হাজার। এর মধ্যে নিবন্ধীত জেলের সংখ্যা মাত্র ১০ হাজার ৪০০শ। বছরের বিভিন্ন সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে এরমধ্যে সহায়তা পেয়ে থাকেন নিবন্ধীত জেলে, আর বাকী জেলেদের জীবন কাটে চরম কষ্টে। ঝড়ে সব কিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মোংলা উপকূলের কয়েক হাজার জেলে পরিবার। নিবন্ধীত জেলেরা সরকারের প্রনোদনা পেলেও বাকি জেলেদের কি হবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছে এখানকার জেলে পরিবারগুলো। তাই বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সরকারী সহায়তার দাবী জানিয়েছেন তারা।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, নিবন্ধীত জেলেদের পাশাপাশী অ-নিবন্ধীত জেলেদের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের পুনবাসনের জন্য মন্ত্রনালয় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ জেলে পরিবারগুলো ঘুরে দাড়াতে সরকারী সহায়তার আশ্বাস দেন নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রজনন মৌশুম উপলক্ষে সাগর ও সুন্দরবনে বছরে দুইবার মাছ ধরা বন্ধ রাখে সরকার, এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত চিহ্ণ জেলে পাল্লীতে। তাই অসহায় এ পরিবারগুলোকেত বাচাঁতে সরকারে সদইচ্ছার প্রয়োজন বলে মনে করেণ সচেতন মহল।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button