স্থানীয় সংবাদ

সাংবাদিকতায় পেশায় নিবেদিতরা যথাযথ সন্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত

দিঘলিয়া প্রতিনিধি ঃ উন্নত জাতি বিনির্মাণে সাংবাদিকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এবং তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব নানা ঝুঁকি নিয়ে নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেছেন। দেশ ও জাতির উন্নয়নে সাংবাদিকদের ভূমিকা অতি গুরুত্বর্পূণ একটি বিষয়। সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক। তাই দেশকে আরো এগিয়ে নিতে সাংবাদিকদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বর্পূণ। সাংবাদিক জাতির দর্পন, দেশ ও জাতির কল্যাণে তারা জীবন বাজি রেখে সংবাদ সংগ্রহ করে প্রচার ও প্রকাশের মাধ্যমে জাতির নিকট তুলে ধরে। আজকে দেশ উন্নয়নে পেছনে সাংবাদিকদের অগ্রনী ভূমিকা রয়েছে। কিন্ত এই পেশায় নিবেদিতরা যথাযথ সন্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন সাংবাদিককে শুধু সুবিধা আদায়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রতিনিয়তই এখানে সাংবাদিকদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়, কখনো যারা সরকারি দল তাদের লোকের হাতে, কখনো বিরোধী দলের লোকের হাতে। পক্ষে গেলে শুভকামনা, বিপক্ষে গেলে বিভিন্ন রকম হুমকি থাকে। গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ ও ধারালো হাতিয়ার হলো সংবাদপত্র বা সাংবাদিকরা। সেই সংবাদপত্র বা সাংবাদিকরা এখনো পড়ে রয়েছে সমাজের নিন্ম স্তরে। প্রকৃত সাংবাদিকের পেটে ভাত নেই, পরনে নেই পরিমার্জিত পোশাক। তাদের হাত পাততে হয় চলার পথের পাথেয় জোগাতে। অপর দিকে সাংবাদিক পেশার মর্যাদাহানী ঘটায় মানদন্ডের দিক বিচারে কথিত সাংবাদিকরা।
কিন্ত অসাধু সাংবাদিকদের সন্মান এ সমাজের কাছে কমতি হলেও টাকার কোন অভাব নেই। তারা সব জায়গা থেকে মাসোহারা পায়। বিশেষ করে সংবাদকে পুঁজি করে ধান্ধা করে। এদের দ্বারা দেশ ও জাতির তেমন কোনো উপকার হয় না। কিন্ত এরা সমাজের এক শ্রেণির কাছে সমাদৃত। সাংবাদিকতায় পেশাগত বিচ্যুতির যে প্রবণতা শুরু হয়েছে তা এক রুগ্ন বাস্তবতা তৈরি করছে। আজ সাংবাদিকতার অনুসরণীয় নীতিমালা সমুন্নত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। সাংবাদিকতা মূলত ফ্যাক্টস বা সত্যাশ্রয়ী পেশা। এখানে মন্তব্য বা মতামতের চেয়ে ফ্যাক্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। সাংবাদিকতা একটি ছদ্মবেশী আবরণের মধ্যে পড়েছে। পদ-পদবি, সমিতি সবকিছু সাংবাদিকতার আদলে সার্ভ করা হচ্ছে রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক বা গোষ্ঠীবাদী স্বার্থে। তা নকল আবহ তৈরি করেছে, যা আপাতদৃষ্টিতে বৈধ বলে মনে হয়। কারণ এর সঙ্গে যুক্ত কিছু সাংবাদিক, সম্পাদক ও অধ্যাপক! এসব পরিচয় উপেক্ষা করা যাচ্ছে না, মুখগুলোও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। বাস্তবতা হলো- এ শ্রেণি ক্ষমতা ও কর্তৃত্বপ্রিয়। মূলধারা সাংবাদিকরা নৈতিকতা ও মানের সাংবাদিকতার চেষ্টা করছেন কিন্ত তাদেরকে নানা ভাবে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে।
দেশে সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার বেড়েছে কিন্তু পেশাদারি সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটেনি। অপেশাদার সংবাদমাধ্যমের আধিক্যে মান সম্পন্ন সাংবাদিকতার পথচলা যে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সাংবাদিকতার অন্যতম প্রধান প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতার সঙ্গে নৈকট্য। ক্ষমতার সঙ্গে থাকা, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার স্বভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা চেক করার চেয়ে সুরক্ষা দিতে পারঙ্গম হয়ে উঠেছে সাংবাদিকতা। ক্ষমতার যে ফাঁদটি পেতেছেন সাংবাদিকেরা খুব সহজেই তাতে ধরা দিচ্ছেন। আর তা দিচ্ছেন ব্যক্তিগত স্বার্থে। নিশ্চিত তা পেশাগত উৎকর্ষের জন্য নয়। যে কারণে প্রতিনিয়ত সাংবাদিকরা হয়রানী ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শুধু ২০২৩ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ৭৮ জন সংবাদকর্মী। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা লাঞ্ছিত ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বাধা প্রদানের শিকার হয়েছেন ২২ জন সাংবাদিক। স¤্রাট নেপোলিয়ন বলেছিলেন সাংবাদিকের কলম কামানের চেয়েও শক্তিশালী । কিন্ত এখন দেখি পেশী শক্তির কাছে কলম মাথা নত করছে। যারা সংবাদিকতার এই মহান পেশাকে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য অত্যন্ত নোংরা ভাবে কাজে লাগাচ্ছে, তারা আর যাই হোক এই পেশাকে ভালো বাসে না। দেশ থেকে সাংবাদিক নিয়োগের নাম করে চালায় সাংবাদিক পরিচয়পত্রের বানিজ্য আর তাতেই জন্ম হচ্ছে নানা ভুঁইফোড় সাংবাদিকের। আর এসকল ভুঁইফোড় সাংবাদিকরাই সমগ্র দেশে একটা বিশেষ বিড়ম্বনার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন প্রাইভেট গাড়ি ও মোটর সাইকেলে লেখা দেখা যায় সাংবাদিক। তিন চাকার সিএনজি চালিত আটোরিক্সাও এর ব্যতিক্রম নয়। যা আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে বিব্রত অবস্থার মধ্যে রাখে। এ ধরণের মোটরযান দিয়েই অনেক সময় সংগঠিত হচ্ছে নানা অপরাধ। সেই সাথে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে ভুঁইফোড় সাংবাদিকরা। এ ধরনের সাংবাদিকদের জন্যই অনেক ক্ষেত্রে অবমূল্যায়িত হতে হচ্ছে সাংবাদিকতার পেশা। সাংবাদিকের কলম চলবে সত্যের পথে, কলম চলবে নির্ভীকতায়, সাংবাদিক চলবে সমাজের দর্পন হয়ে চলবে আলোক মশাল নিয়ে। সম্পাদক হবে দিবালোকের দিপ্তময় সূর্যের মত। যার আলোতে আলোকিত হবে সমাজ। সাংবাদিক বেঁচে থাকে তাঁদের লিখনীর মাধ্যমে। সৎ সাহসী সাংবাদিক আসে যুগে যুগে। তাঁরা সমাজের মানুষের মাঝে অমর হয়ে থাকে কর্মময় জীবনের আলোকোজ্জ্বল কর্মের মাঝে। তাঁরা থাকে মানুষের কাছে চির স্মরণীয়। তাই এ মহান পেশার পবিত্রতা বজায় থাকবে এটাই কামনা। আর প্রকৃত সাংবাদিকতার মানডন্ড, সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের সাথে জড়িত সকল মহলের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সর্বস্তরের কর্মকর্তাগণ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button