নগরীতে কর্মযজ্ঞে ‘ব্যস্ত’ ধুনারী

# নগরীতে শীতের আগমনী বার্তা #
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ সম্প্রতি দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও দিনের বেলায় সূর্যের যে চোখ রাঙানী ছিল বর্তমানে তেমনটি আর নেই। দিন ও রাতে তাপমাত্রা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে, এ যেন শীতের আগমনী বার্তা! বর্তমান সময়ে রাতের শেষাংশে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। আর ভোরে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু। এই শিশিরবিন্দুই বলে দিচ্ছে শীত আসছে। শীতের এই আগমনী বার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গে ধুনারীদের (লেপ-তোষক তৈরির কারিগর) তুলা ছাঁটাই ও লেপ তৈরির কাজে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে।
কয়েকদিন আগেও দিন-রাত জুড়ে গরমে হাঁফিয়ে উঠে নগরবাসী। দিন-রাত সমান তালে বাসা-বাড়ী, অফিস আদালত, কর্মস্থলে এসি, ফ্যান বিরতীহীন ভাবে চলেছে। বর্তমানে দিনে কিছুটা গরম অনুভূত হলেও রাতে ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতির কারণে অনেকেই ফ্যান বা এসির ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। অনেকেই রাতের শেষাংশে পাতলা কাঁথা বা কম্বল গায়ে জড়িয়েও ঘুমাচ্ছে হচ্ছে। একই সাথে সূর্যের আলো ফোঁটার আগে হালকা কুয়াশাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামনে আসছে শীতকাল, হালকা, মাঝারী এমনকি শৈত্যপ্রবাহের মুখোমুখি হতে পারে নগরবাসী। তাই যেন ভারী শীতের মধ্যে নগরবাসী স্বস্তি যোগাতে এখন মহাকর্মযজ্ঞ চলছে নগরীর বিভিন্ন স্থানের বেডিং হাউজ (লেপ-তোষকের) দোকান গুলোতে। ঘুরে দেখা গেছে, খুলনা বিভিন্ন বিপণীগুলোতে চলছে হালকা কম্বল ও হালকা শীতের পোশাকের কেনাবেচা। পাশাপাশি নগরীর বেডিং হাউজ গুলোতে চলছে আগাম শীত সমানে রেখে কারিগরদের মহাকর্মযজ্ঞ। একইদিনে নগরীর দৌলতপুরস্থ বেডিং ফেয়ার, হেনা বেডিং সেন্টার, করিম বেডিং হাউজ, শরিফ বেডিং হাউজ, ওয়াহেদ বেডিং, বিসমিল্লাহ বেডিং, দৌলতপুর বেডিং, আল্লাহর দান বেডিং সেন্টার নামীয় লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে চলছে সাজ সাজ রব। ব্যস্ত সময় পার করছেন ধনুনারীরা (কারিগরেরা)। ইতিমধ্যেই স্থানীয় অঞ্চল দেয়ানা, মধ্যডাঙ্গা, শলুয়া, শাহ্পুর, রংপুর, মধ্যডাঙ্গা, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, পাবলা, কাশিপুর, খালিশপুরসহ নিকটস্থ অঞ্চল হতে মানুষ আগে ভাগেই লেপ, তোষক তৈরী করতে ওই সকল দোকানগুলোতে বেশ ভীড় করছেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যবহৃত প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩’শ টাকা, কাপাসী তুলা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১’শ হতে ৩’শ টাকা, গার্মেন্টস্ তুলা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা হতে ১০০ টাকায়। এছাড়া রেডিমেড লেপ ৩/৫ ক্রয়ে লাগছে সর্বনিন্ম ৬০০ টাকা, ৫/৬ লেপ ১৫৫০ টাকা, জাজিম মানভেদে ১৫০০ টাকা ২২০০ টাকা, তোষক মানভেদে ৩০০ হতে ২০০০ টাকা, মশারী ১৫০ হতে ১০০০ টাকা, চাদর ২০০ হতে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শীতের আগমনীকে ঘীরে তাদের দোকানগুলোতে লেপ, তোষক, জাজিম তৈরী ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রতিদিইন কম-বেশি ক্রেতা আসছেন লেপ-তোষক তৈরী করতে। ক্রেতাদের মধ্যে কেউ কেউ পুুরনো লেপ ভেঙে নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন, তবে অধিকাংশ ক্রেতারা নতুন তুলা দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছে লেপ, তোষক ও বালিশ। শীতের আগমনীকে ঘিরে প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বাড়িয়েছেন কর্মচারী (কারিগরের) সংখ্যা।
দৌলতপুর আল্লাহর দান বেডিং সেন্টারের মালিক হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। এখনো শীত জেঁকে না বসলেও অনেক ক্রেতা সাধারন আগে ভাগেই লেপ ও তোষক বানাতে আসছেন দোকানে। বর্তমানে মোটামুটি ক্রেতা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। শীত যত বাড়বে, তত ক্রেতা সাড়া ও কেনাবেচা বাড়বে। সারা বছরে কেবলমাত্র তিন মাস বেচাকেনা একটু বেশিই হয়। ক্রেতাদের কথা ভেবে কাজের গুণগতমান বজায় রেখে লেপ-তোষকের অর্ডারি কাজ, পাশাপাশি রেডিমেড জিনিসও তৈরি করে রাখছি। দোকানে বাড়তি কারিগর তৈরীও রাখা হয়েছে। কারিগর কাজী এনায়েত বলেন, বর্তমানে তেপ-তোষক তৈরী সিজিন শুরু হয়েছে। আমরা ৪/৫ ডবল লেব তৈরীতে মজুরী পাই ২০০ টাকা। তোষক তৈরীতে ২০০ টাকা, জাজিম তৈরীতে ৪০০ টাকা পাই। চাকুরীজীবি মিরাজুল ইসলাম জানান, এখনো শীতের দেখা না মিললেও আগে ভাগেই শীতের জন্য একটি লেপ বানিয়ে নিচ্ছি। কারণ অফিসের কাজে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে হয়। সময় পাওয়া যায় না। তাই আগে ভাগেই লেপ তৈরী করতে আসলাম।
গৃহিনী রুমানা ইসলাম জানান, কিছুদিন আগে তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। সমানে শীতকাল, তাই জামাই বাড়ীতে লেপ, তোষক ও জাজিম পাঠাতে হবে। যে কারণে এগুলো তৈরীর জন্য এলাম।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ষড় ঋতুতে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দুই মাস হেমন্তকাল, আর হেমন্ত মানেই শীতের পূর্বাভাস। বর্তমানে দিনের সময় কমে গেছে, পাশাপাশি সূর্য কিরণের তীব্রতা তেমন নেই। আকাশে যথেষ্ট মেঘের ঘণঘটা দেখা যাচ্ছে, এই মেঘের কারণে সূর্যের উপস্থিতি মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে, আবার দেখা যাচ্ছে না। ফলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেশি হচ্ছে না, সর্বনি¤œ তাপমাত্রা কাছাকাছি আছে, তাপমাত্রা বেশি বাড়ছে না। এই সমস্ত কারণেই শীতের কিছুটা অনুভূত হচ্ছে।