স্থানীয় সংবাদ

ভয়ালসিডরের ১৭ বছর ঃ বাগেরহাটে এখনো টেকসই বেড়িবাঁধের মুখ দেখেনি মানুষ

আবু-হানিফ, শরনখোলা (প্রতিনিধি) ঃ আজ (১৫ নভেম্বর) সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস। ২০০৭ সালের এই দিনে বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা, রামপালসহ জেলার উপকূল এলাকায় সংঘটিত হয়েছিল স্মরণকালের প্রলয়ঙ্কারি ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। দানব রূপি ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে শুধু শরণখোলা উপজেলাতেই মারা যায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ। বিধ্বস্ত হয় অসংখ্য গাছপালা, ঘরবাড়ি। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় সেদিন জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুপুরী আর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল শরণখোলা।
সিডরের পর স্বজন আর সহায় সম্বলহারা এই জনপদেও মানুষের একটাই দাবি ছিল ‘ আমরা ত্রাণ চাইনা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। এই দাবিতে কয়েক বছর ধরে চলে আন্দোলন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে এসে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ। বলেশ্বর নদেও তীর রক্ষায় প্রায় ২০ কিলোমিটারসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের মোট ৬২ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) মাধ্যমে সিএইচ ডব্লিউই নামে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ণ করে। কিন্তু নদী শাসনের ব্যবস্থা না কওে বাঁধনির্মাণ এবং কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হওয়ায় হস্তান্তরের পর বছর যেতেনা যেতেই সেই বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বলেশ্বর নদেও তীওে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী থেকে মোরেলগঞ্জ সীমানার সন্ন্যাসীর ফাসিয়াতলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ৯ কিলোমিটার মূলবাঁধসহ সিসিব্লক ধসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এমন ভয়াবহ ভাঙন দেখে শরণখোলাবাসীর আক্ষেপ, সিডরের ১৭ বছর পর এসেও বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে। আতঙ্কে দিন কাটছে বলেশ্বর নদেও তীরের বাসিন্দাদের। নদতীরবর্তী গাবতলা গ্রামের বাসিন্দা মিজান হাওলাদার, দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামেরআলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর খান, উত্তর সাউথখালী গ্রামের আনোয়ার হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ কওে বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ ছিলোনা বলে সিডরে আমরা স্বজন হারিয়েছি। ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদেও জীবনও সম্পদের বিনিময়ে একটি টেকসই ও উঁচু বেড়িবাঁধ চেয়েছিলাম। উচুঁবাঁধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা টেকসই হয়নি। নদী শাসন না কওে বাঁধ নির্মাণ করায় বছর না যেতেই ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত নদী শাসনের ব্যবস্থা করা নাহলে দুই-তিনবছরের মধ্যেই বাঁধ ভেঙে বিলিন হয়ে যাবে। ভাঙন কবলিত সাউথখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পঞ্চাতে বলেন, নদীশাসন ছাড়া টেকসই বাঁধ হওয়া সম্ভব নয়। তৎকালীন সরকার ও বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাঁধনির্মাণে নদী শাসনের ব্যবস্থা না রেখে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছে। ব্যাপক দূর্নীতি হয়েছে এখানে। মাটির বদলে নদীর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এতে শুধু বাঁধ উঁচুই হয়েছে, কিন্তু টেকসই হয়নি। দ্রুত নদী শাসন না করলে বাঁধ কোনোভাবে টিকবেনা। বর্তমান সরকারের কাছে দূর্নীতির তদন্ত ও নদী শাসন কওে বাঁধ রক্ষার দাবি জানান এই বিএনপি নেতা। নদীশাসন এবং ধসে যাওয়া বাঁধ ও সিসিব্লক মেরামতের ব্যাপাওে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আলবিরুনী বলেন, বলেশ্বর নদেও তীর রক্ষাবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পূর্ণ এলাকার নদীশাসন করতে হলে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। আপাতত জাইকার অর্থায়নে স্বল্প পরিসওে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে চলতি মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button