বাগেরহাট পৌরসভাধিন খালগুলিতে অবৈধ দখল ও ময়লা আবর্জনায় ভর্তি

# রাজনৈতিক সরকার দখলমুক্ত করতে পারেনি #
# পৌরবাসী প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে #
আজাদুল হক, বাগেরহাট ঃ অনিয়ম- দুর্নীতি, ও লুটপাটে স্বর্গরাজৗ হিসাবে আলোচিত বাগেরহাট পৌরসভাধিন রেকর্ডীয় প্রায় সকল খালগুলি ভরাট হয়ে গেছে। অসেচতনতা ও জবাবদিহিতা না থকায় খালহুলিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করাসহ অবৈধ দখল প্রক্রিয়ায় এ সব প্রবাহমান খালে এখন আর জোয়ারভাটা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে মৃতপ্রায় এসব খালের সংষ্কার করছে না কর্তৃপক্ষ। পৌরবাসির অভিযোগ ব্যাক্তিগতভাবে ভরাট করে এবং ভরাট হওয়া খালের জায়গা অবৈধ দখল হওয়ার কারনে খালগুলো ভরাট হওয়ায় বৃষ্টি মৌসুমে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিগত দিনে রাজনৈতিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকায় খালগুলি দখলমুক্ত হয়নি। তাই চলমান অরাজনৈতিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসায় এসব রেকর্ডীয় খালগুলো দখলমুক্ত করে পূন:খনন ও সংস্কারের দাবি তুলেছে এলাকাবাসী। এদিক, বহুল আলোচিত বাগেরহাট পৌর কর্তৃপক্ষ পৌরসভার খালগুলো অবৈধ দখল ও ভরাট হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তারা পৌরসভার ৫টি খাল সংস্কার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশ^াস দিয়েছে। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে সাড়ে ৭ কোটি টাকার উপরে ব্যয় হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে প্রত্যাশা পৌর কর্তৃপক্ষের। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, ১৫ দশমিক ৮৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ১৯৫৮ সালের ১ এপ্রিল স্থাপিত এই বাগেরহাট পৌরসভা। প্রায় দেড়লাখ মানুষের বসবাস এই পৌরসভায়। ভৈরব নদের তীর ঘেঁষা বাগেরহাট পৌরসভা। ৯টি ওয়ার্ড সমন্বয়ের এই পৌরসভার ৫টি রেকর্ডীয় খাল রয়েছে। যা হলো বাসাবাটি খাল, নাগেরবাজার খাল, বেলের খাল, সরুই খাল ও হাড়িখালি খাল। পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা ফররুখ হাসান জুয়েল বলেন, হাড়িখালী গ্রাম এলাকায় শতশত বিঘা জমিতে ধানের চাষ হতো। হাড়িখালী খালটি ছিল প্রবল খরস্্েরাতা। এই খাল দিয়ে যে পানি প্রবাহিত হতো, তা এখানকার জমি মালিকরা চাষের কাজে ব্যবহার করত। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে খালে পানির প্রবাহ না থাকায় তা মরে গেছে। অনেকের খালের জমি দখল করে পাকা স্থাপনা তৈরি করেছে। পৌরসভায় মানুষের বসবাস বাড়তে থাকায় কৃষি জমি বিক্রি হয়েছে। আর যা আছে সেখানে পানির প্রবাহ না থাকায় এখন আর আগের মত ধান চাষ হয়না। মেহেদি হাসান বলেন, আমার বাড়ির পাশ দিয়ে নাগেরবাজার খাল বয়ে গেছে। আমার ছেলেবেলায় আমি ও আমার বন্ধুরা এই খালে সাঁতার কেটেছি। আগে এখানে বড় খাল ছিল তা এখন কেউ বলতে পারবেনা। স্থানীয়দের অসচেতনতা ও পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় খালটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে খালটি খনন হয়না। বাসাবাটি, নাগেরবাজার, হাড়িখালী, সরুই, মুণিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরসভার ভিতর দিয়ে প্রবাহমান খালগুলো দিয়ে এক সময় বড় বড় নৌকা চলাচল করত। খালে গোসল ও সাঁতার কাটা যেত। এখন সে খাল আর নেই। খাল চেনার উপায়ও নেই। বর্ষাকাল আসলেই পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক এলাকায় অবৈধ দখলদাররা খাল দখল করে স্থাপনা তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব খালের সংষ্কার হয়না। এসব খাল দখলমুক্ত করে খনন ও সংষ্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বাগেরহাট পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী রিজভী বলেন, বাগেরহাট পৌরসভায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ৫টি খাল রয়েছে। এরমধ্যে অনেকটাই অবৈধ দখলে। ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে খালগুলোর অবস্থা এতোটাই খারাপ যে পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। রেকর্ড অনুযায়ী এই ৫টি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ কিলোমিটার। সিটিসিএফটি প্রকল্পের মাধ্যমে কোস্টাল টাউনের ভিতরে এই ৫টি খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অতিদ্রুত দরপত্র আহ্বান করে পৌরসভার ৫টি খাল সংস্কার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সাড়ে ৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর দুর্ভোগ কমে যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। আগামী জুন ২০২৫ এর মধ্যে প্রধান প্রধান খাল সংষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।



