খুলনায় বছর জুড়ে আলোচনায় বেসরকারি জুট মিল শ্রমিকদের আন্দোলন

সাইফুল্লাহ তারেক ঃ এ বছরের শুরু থেকেই খুলনার খানজাহান আলী থানা এলাকার মিরেরডাঙ্গা ও আটরা শিল্প এলাকায় শুরু হয় বেসরকারি জুট মিল শ্রমিকদের আন্দোলন। ধারাবাহিক এ আন্দোলন কর্মসূচি সারা বছর ধরেই চলছে, এমনকি বছরের শেষ মাসে এ আন্দোলন আরো তীব্র হতে শুরু করেছে। ৬দফা দাবিতে মহসেন, সোনালী, এ্যাজাক্স, আফিল, জুট স্পিনার্সসহ ব্যক্তি মালিকানা জুট মিল শ্রমিকদের আন্দোলন এখনো অব্যাহত রয়েছে। দাবি আদায়ে সভা-সমাবেশ, মিল গেটে বিক্ষোভ, ভুখা মিছিল, গণমিছিল, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন শেষে নবেম্বর মাসে জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক করে শ্রমিক নেতারা। শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের নায্য পাওনা পরিশোধের জন্য কড়া তাগিদ দেন। শ্রমিকের পাওনা শ্রম আইন মোতাবেক পরিশোধ না করলে উক্ত মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসক আহবান জানান। মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার এ্যাজাক্স জুট মিলটি ২০১৪ সালের ২২ মে বন্ধ ঘোষণা করার পর ৭ বছর অতিবাহিত হলেও ৬১০ জন শ্রমিক কর্মচারীর বকেয়া রয়েছে এখনো। মিল মালিকের কাছে বর্তমান পাওনা রয়েছে ২৩ কোটি টাকা। সোনালী জুট মিলটি দীর্ঘদিন বন্ধ থেকে আংশিক চালু হলেও সেখানে আনুমানিক ২৪শ শ্রমিক কর্মচারীর প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। মহসেন জুট মিলটি ১০ বছর আগে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও মিল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় সোয়া ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে, মিলের মালিক শ্রমিকদেও বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করে ইতিমধ্যে মিলের সকল মালামাল রাতের আধারে মিল থেকে নিয়ে গেছে এ সকল মালামাল ক্রয় করেছেন খানজাহান আলী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন। শিরোমনি শিল্প এলাকার জুট স্পিনার্স মিল ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে আংশিক উৎপাদনে রয়েছে। এই মিলের শ্রমিক কর্মচারীদেরও কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কিছুদিন আগে শ্রমিকদের পাওনা টাকার একটা অংশ পরিশোধ করলেও এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। আটরা শিল্প এলাকার আফিল জুট মিলের মালিক আওয়ামীলীগ নেতা শেখ আকরাম হোসেন শ্রমিকদের টাকা শ্রম আইন মোতাবেক না দিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে জোরপুর্বক শ্রমিকদেও কাছ থেকে সাদ ষ্টাম্প এ সাক্ষর নিয়েছে। বছরের শুরু থেকেই বকেয়া মজুরি প্রদান ও মিল চালুর দাবিতে বেসরকারি পাট, সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয় খুলনার শিল্পাঞ্চলে। দফায় দফায় সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল আর সভা সমাবেশের মধ্যদিয়ে চলতে থাকে আন্দোলন। এমনকি ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে খুলনার বন্ধকৃত জুট মিলের শ্রমিকরা। ৬ দফার মধ্যে বকেয়া মজুরি পরিশোধ, বন্ধ মিল চালু, বেসরকারি জুট মিল শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা, ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুসরণ করে মিল চালানো, সম-কাজে সমমজুরি প্রদান, নতুন মজুরি কমিশন ঘোষণা, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ি মজুরি প্রদান করা শ্রমিকদের মূল দাবি। বন্ধকৃত মহসেন জুট মিলের শ্রমিক আবুল বাশার বলেন, নিজের জীবন যৌবন পার করলাম মিলে কাজ করে। অথচ বয়সের শেষ সময়ে এসে মিল মালিকের কাছে নিজের পাওনা টাকা পড়ে থাকলেও টাকার অভাবে ওষুধ কিনে খেতে পারছি না। বেসরকারি পাট, সুতা, বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম রসুল খান বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। বর্তমান সরকার একযোগে সরকারি পাটকল শ্রমিকদের যাবতীয় পাওনাদি পরিশোধ করেছেন। অথচ বেসরকারি জুট মিলের শ্রমিকরা বছরের পর বছর তাদের চূড়ান্ত পাওনা মিল মালিকের কাছ থেকে না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। বেসরকারি জুট মিল শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে বর্তমান অর্ন্তবর্ন্তী কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন এ শ্রমিক নেতা। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল্লাহ তারেক বলেন মিল মালিকরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে সে টাকা অন্যখাতে ব্যয় করেছে মালিকরা ।