মণিরামপুরে আমনের ক্ষতি পোষাতে কাঙ্খিত বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত বোরো চাষীরা

মোঃ আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি ঃ অতিবৃষ্টি ও ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে যশোরের মণিরামপুরে চলতি বছরে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর সেই ক্ষতি পোষাতে চলতি বোরো মৌসুমে কাঙ্খিত বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে বোরো চাষীরা। উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের আবাদ হবে বলে কৃষক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তবে ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এবার কয়েক হাজার হেক্টর জমি অনাবাদী থাকতে পারে এমন আশংকায় এবার বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় উফসি জাতের ২০ হাজার হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ৭ হাজার ৫’শ৭ ০ হেক্টরসহ সর্বমোট ২৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ধান চাষের এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চলতি মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় উফসি জাতের ১ হাজার ৫০ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ৩৫০ হেক্টর জমিতে ধানের বীজতলা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বোরো চাষীরা। গত মাসাধিক সময় ধরে কৃষকেরা তাই বোরো ধানের চারা উৎপাদনের কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও শীতের তীব্রতা কম হওয়ায় কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত ধানের চারা উৎপাদন করতে পেরেছে। পক্ষান্তরে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ভবদহ অধ্যুষিত ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি এখনও জলাবদ্ধ থাকায় কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারে নাই। তবে সেচের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করে এসব জলাবদ্ধ এলাকার ৬ হাজার হেক্টর জমি আবাদের টার্গেট নিয়েছেন ভবদহ এলাকার ভুক্তভোগী জনগন। ফলে এসব এলাকার প্রায় ৪/৫ হাজার হেক্টর জমি এবার অনাবাদি থাকতে পারে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। এসব প্রতিকূলতার মাঝে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তাই উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের প্রনোদনা হিসেবে ৩ হাজার ৯০০ জন চাষীকে ২ কেজি হারে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪ হাজার ৩৫০ জন কৃষককে ১০ কেজি হারে ডিওপি ও ১০ কেজি হারে এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে। খোলাবাজারে ধানের বাজারদর তুলনায় সন্তোষজনক হওয়ার পাশাপাশি আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও গোখাদ্য বিশেষ করে খড় ও বিচালীর বাজারদরও বেশ চড়া থাকায় কৃষকরা বোরো ধান আবাদে বেশ ঝুঁকে পড়েছে। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকার প্রত্যেক মাঠেই কৃষকরা বীজতলা তৈরির পর এখন ধানের চারা রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত করার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। গত শুক্রবার সকালে উপজেলার শ্যামকূড় ইউনিয়নের ঘুঘুরাইল গ্রামের ইউনুস আলী, হালসা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন কৃষককে ধানের বীজতলা পরিচর্চার কাজ করতে দেখা যায়। উপজেলার ঘুঘুরাইল গ্রামের আব্দুল খালেক মোড়ল জানান, গত বছর তিনি দেড় বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। এবার ২বিঘা জমিতে আবাদ করবেন। হালসা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন। ঘুঘুরাইল গ্রামের আল মামুন জানান, এবার ধানের বাজারদর ও খড়-বিচালীর দাম ভাল হওয়ায় গত বছরের চেয়ে তিনি বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ করছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন, ধান ও খড় বিচালীর বাজারদর ভাল হওয়ায় কৃষকেরা বোরো আবাদের দিকে ঝুঁকছে। বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ৮হাজারের অধিক সংখ্যক কৃষকের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার কারণে এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পানি সেচের মাধ্যমে বোরো ধান আবাদের যে উদ্যোগ সরকারি সহয়োগিতায় স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা গ্রহণ করেছেন সেটা সফল হলে বোরো ধান আবাদের কাংঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।


