স্থানীয় সংবাদ

রোগীদের দেয়া ভাত থেকে আসে গন্ধ : মাংস দেয় ৪ ভাগের এক ভাগ

# খুমেক হাসপাতালে দুদকের অভিযান #
# ৫ সদস্য’র তদন্ত কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ ( খুমেক) হাসপাতালে রোগীদের জন্য দেয়া ভাত থেকে আসে গন্ধ। সরকারি ডায়েট অনুযায়ী রোগীদের পেতো না পরিমান মত মুরগীর মাংস। মাংস ৯৪ গ্রামের পরিবর্তে রোগীদের দেয়া হতো ২৬ দশমিক ৪ গ্রাম। এছাড়া আরও অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে দুর্ণীতি দমন কমিশন ( দুদক) খুলনার একটি টিম অভিযান চালিয়ে ওই সব অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দেড় ঘন্টা দুদক এ অভিযান পরিচালনা করেন। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যে’র একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা: মো: নুরুল ইসলাম গতকাল বুধবার বলেন, দুদকের অভিযানে অনিয়ম পাওয়াকে কেন্দ্রে করে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান করে ৫ সদস্যও তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিতে অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সদস্য সচিব হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা: মিজানুর রহমান, সদস্য আরএমও ডা: শামীম হাসান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) জি এম ইখতিয়ার উদ্দিন এবং ইএমটি মো: শাহীন হোসেন। এই কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে খুমেক হাসপাতালে রান্না ঘরে অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগে দুদক খুলনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ এর নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ- রকিবুল ইসলাম, সহকারি পরিচালক মাহমুদুল হাসান শুভ ও উপ-সহকারি পরিচালক মো: শামীম রেজা। পরবর্তীতে অভিযানের সময় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ- নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক ডাঃ মোঃ-মিজানুর রহমান উপস্থিত হন। এ সময় তাদের সামনে রান্না ঘরের মধ্যে রোগীদের খাবারের দুর্ণীতি ও অনিয়মগুলো তুলে ধরেন। এ সময়ে হাসাপাতালের স্টুয়ার্ড মো: হাবিব অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন না। দুদকের খুলনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সরকারি ডায়েট অনুযায়ী যেখানে জন প্রতি রোগীদের এক পিস মাংস পাওয়ার কথা ৯৪ গ্রাম। সেখানে মাত্র ২৬ দশমিক ৪ গ্রাম করে পাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা রান্না করা ৫ পিস মাংস পরিমাপ করে পেয়েছি ১৩২ গ্রাম। অথাৎ গড় প্রতি এক পিস মুরগীর মাংসের পরিমান হচ্ছে ২৬ দশমিক ৪ শূণ্য গ্রাম। চিকন চালের পরিবর্তে মোটা চাল দেওয়ার প্রমান পায় দুদকের কর্মকর্তারা। যা ভাত থেকে গন্ধ আসছে। মঙ্গলবারে হাসপাতালে মোট রোগীর সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ৪৯৪ জন। এর মধ্যে সিঙ্গেল ডায়েট যারা ( ডায়বেটিস রোগী) সেগুলো বাদ দিয়ে দুপুরে মোট ১ হাজার ৩৩৫ জনের খাবার তৈরি করেছেন বলে মর্মে এখানে বলা হয়েছে। আমরা সংখ্যা গননা করে দেখতে পেয়েছি এখানে মুরগীর মাংসের সংখ্যা ছিলো মোট ১ হাজার ৯৪ পিস। তার মানে হলো ৩৩০ পিস কম পেয়েছি। এছাড়া ডায়েট চার্টে উল্লেখ আছে উন্নতমানের চিকন চাল (মিনিকেট) ভাত রোগীদের দেওয়া কথা। কিন্তু বাস্তবে এসে দেখছি সেই চালটি দেওয়া হয়নি। দেওয়া হচ্ছে খুবই মোটা চাল, রেশনের চাল এ ধরনের চাল আমরা দেখেছি। খাবারের রান্না ঘর থেকে কাচা মুরগীর মাংস ৪ কেজি ৪৯ গ্রাম, ডিম (৪৯)টি, লাউ ৪টি, কলা -১৮ টি, রান্œা করা ভাত দুই পলি, চাল ২ কেজি, তেল, শুকনা ঝাল কাচা মরিচ পিয়াজ মিলে ১ প্যাকেট, পাউরুটি-৮ পাউন্ড,লবন ১ প্যাকেট পাওয়া যায়। এগুলো আমরা জব্দ করেছি। এসব ছিলো রোগীদের খাবার। অবৈধভাবে চুরি করে এসব বাইরে পাচারের উদ্দেশ্যে নেয়া যাওয়া হচ্ছিলো। এখানে দায়িত্বরত যে স্টুয়ার্ড হাবিব ছিলেন। তাকে আমরা পাইনি। আউটসোর্সিয়ে নিয়োজিত একজন কর্মী ছিলেন সে এগুলোর বিষয়ে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খুলনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ডায়েট অনুযায়ী যে চাল রোগীদের জন্য দেওয়া কথা সেখানে অতি নিম্মমানের চালের ভাত দেওয়া হচ্ছে। যা বাজার মুল্যে সর্বোচ্চ ৪০-৪২ টাকা হতে পারে। আমাদের আইন অনুযায়ী যা যা করার দরকার সে বিষয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ- নুরুল ইসলাম বলেন, অনিয়ম ও দুর্ণীতি যেই করুক না কেনো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সব সময়ের জন্য দুদকে এমন অভিযানকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের সহযোগিতা তাদের জন্য অব্যহত থাকবে।
হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, স্টুয়ার্ড হাবিব দীর্ঘ বছর ধরে এসব অনিময় ও দুর্ণীতি করার একার পক্ষে সম্ভব না। এর সাথে হাসপাতালের স্ব স্ব ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সংশ্লিষ্ট আরএমওদের সম্পৃক্তার রয়েছেন। যা সঠিক তদন্ত করলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button