স্থানীয় সংবাদ

বছরজুড়ে ভিলেনের ভূমিকায় নিত্যপণ্য : ভোগান্তিতে ছিল মানুষ

# সরকারের নানা উদ্যোগে স্বস্তি ফেরেনি বাজারে।
# বাজারে এখনো দেখা মেলেনি বোতলজাত সয়াবিনের

কামাল মোস্তফা ঃ বছরজুড়ে চড়াই উৎরাই পার করেছে নিত্যপণ্যের বাজার। নাভিশ্বাস ছিল সারা দেশের পাশাপাশি খুলনার মানুষের জীবন জীবিকায়। এরই মধ্যে দুনিয়া কাঁপানো বিপ্লব সংগঠিত হলেও দেশের বাজারে স্থিতিশীলতা আসেনি। বাজার করতে চিড়েচাপ্টা হতে হয়েছে মানুষকে। ডিম-মুরগি-আলু ও পেঁয়াজের দামে ছিল ভোগান্তি। বছরের শেষের দিকে এসে বাজারে সংকট নিয়ে হাজির হয় ভোজ্যতেল যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বেশি ভুগেছে নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।সরকার পরিবর্তনে রাজনৈতিক অস্থিশীলতা, তীব্র তাপপ্রবাহ, একাধিক বন্যা, পণ্য সরবরাহে ঘাটতি, আমদানি ও জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে বছরজুড়ে দেশে নিত্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে উপস্থাপন কওে অসাধু সিন্ডিকেট হয়। খুলনার বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই বছরের পুরো সময়েই প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০-২১০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। সোমবারও বাজারে ২১০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে। ডিমের দামও বেশ কয়েক মাস ধরে চড়া ছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসের দিকে এক ডজন ডিমের দাম ১৯০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি হয়। ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোর দাবির প্রেক্ষাপটে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানো হয়। তবে দাম বাড়ানোর পরও সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। খোলা তেল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকায়। খুলনার বাজারে চালের দামও বেড়েছে কয়েক দফায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, এক বছর আগের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে সরু ও মাঝারি চালের দাম ১৩-১৪ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম ৭ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই প্রায় ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত আলু ও পেঁয়াজের দাম ছিল উর্দ্ধমুখি। চাহিদা অনুযায়ী দেশে মজুদ থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিয়ন্ত্রহীন ছিল অতি প্রয়োজনীয় এ দুটি পণ্যেও মূল্য। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি আলু ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা পরে ৫৫-৬০ টাকায় ওঠে। তবে অক্টোবর মাসে দাম বেড়ে ৮০ টাকায় পৌঁছায় আলুর কেজি। এখন কিছুটা কমে এসেছে। আগের বছরগুলোয় মৌসুমে প্রতি কেজি আলু ১৮-২০ টাকায় ও এরপর ২২-৩০ টাকায় বিক্রি হতো। পেঁয়াজ ৮০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এপ্রিলে দাম কিছুটা কমে আবার বেড়ে যায়। নভেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। অতীতে মৌসুমের শুরুতে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকার নিচে থাকত। কিন্তু গেল বছর ছিল ব্যতিক্রম। সারা বছর সবজির দামও ছিল চড়া। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যায়। তখন প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩০০-৩৫০ টাকা, বেগুন ১২০-১৫০ টাকা; ঢ্যাঁড়স, পটোল, ধুন্দুল ও চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল, করলা ও বরবটি ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। সবজির এমন চড়া দামে বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোহসীন রেজা দৈনিক প্রবাহকে বলেন, বছরজুড়েই ভোগান্তিতে ছিল সাধারণ মানুষ। এখনো ভোগান্তি কেটেছে এমন নয়। সবজির বাজার স্বাভাবিক হলেও চাল,তেল ডাল,আলু,পেঁয়াজ স্বাভাবিক মূল্য আসেনি। এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অন্যদেও থেকে বেশি হলেও সরকার দ্রব্যমূল্যেও বাজার নিয়ন্ত্রণে সফল হতে পারেনি। এদিকে অর্ন্তবর্তীকালিন সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও তেমন কাজে আসেনি। যেমন গত অক্টোবরে চাল আমদানিতে বিদ্যমান তিন ধরনের শুল্ক কমানো হয়। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ ও বিদ্যমান আগাম কর পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়। এভাবে সেপ্টেম্বরে আলু আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ ও বিদ্যমান ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। অক্টোবরে ডিম আমদানিতে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ভোজ্যতেল আমদানিতেও বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর (মূসক) কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। আর নভেম্বরে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া টিসিবি, কষি বিপণন অধিদপ্তরসহ কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে খোলাবাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি শুরু করে সরকার। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে এসব কার্যক্রম চলতে দেখা যায় বেশ কিছু দিন যাবত। কিন্তু তাতেও স্বস্তি ফেরেনি বাজারে। নিত্যপণ্যের দাম পরিস্থিতি বিবেচনা করে খুলনায় স্বপ্ন সুপারশপ সহ বেসরকারি পর্যায়ে অনলাইনে কিছু কৌশলী ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। গরুর মাংস, মাছ, মুরগি, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের কম্বো প্যাকেজ আকারে বিক্রি করে তারা। এদিকে বছরজুড়ে জেলা ভোক্তা অধিকারের নানা ধরণের অভিযান চললেও তাতেও অসাধু ব্যবসায়ীরা বাগে আসেনি। ভোক্তার অভিযান লোক দেখানো বা দায় সারা বলেও অভিযোগ ছিল সাধারণ ভোক্তাদের।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button