আবাসন আগ্রাসনে কৃষকের হাতছাড়া শত শত হেক্টর কৃষিজমি

সৈয়দ জাহিদুজ্জামান, দিঘলিয়া খুলনা থেকে
দিঘলিয়ায় আবাসন ব্যবসা ও নানা স্থাপনা তৈরির কারণে দিন দিন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে যেখানে ধানসহ নানা ফসলের আবাদ হতো আজ সেখানে পতিত জমি। থাকছেনা কৃষিযোগ্য জমি।
অন্তত ৩ হাজার হেক্টর কৃষিজমি কৃষকের হাতছাড়া হয়ে গেছে। এসব জমির অন্ততঃ এক তৃতীয়াংশ এখন স্থায়ীভাবে পতিত হয়ে গেছে। এছাড়া সেনহাটি ও দিঘলিয়া ইউনিয়নে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও ২ হাজার একর কৃষি জমি কমে গেছে। দিঘলিয়া ইউনিয়ন ও সেনহাটি ইউনিয়নে আশ্রায়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কারণে অনেক কৃষি জমি ব্যবহার করা হয়েছে। এ সকল ফসলি জমি নষ্ট না করে শত শত হেক্টর খাস জমি এ সকল আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারত এমনটাই জানিয়েছেন এলাকার লোকজন। এ কারণে এখানে প্রতি বছর অন্তত ১০ হাজার মেট্রিক টন ধানসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমে গেছে। ক্রমশ অনাবাদী জমির পরিমাণ বাড়ছে। এক সময়ের সবজি চাষে ক্ষ্যাত ছিল দিঘলিয়া জনপদ। কালের বিবর্তনে কয়েক লাখ টাকার রবিশস্যসহ শাকসবজির আবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। ধানসহ কৃষি উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি এসব এলাকার কৃষকসহ হাইলা-কামলা এবং কৃষি শ্রমিকরা হারিয়েছে তাদের কর্মক্ষেত্র। এসব এলাকার মানুষ ১৫/১৬ বছর আগে তাদের উৎপাদিত ধানসহ রবিশস্য নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফলন এলাকার বাইরে বিক্রি করত। অথচ বর্তমানে নিজেদের বছরের খোরাকি চাল পর্যন্ত এলাকার বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সব ধরনের খাদ্য সামগ্রীর জন্য এলাকার বাইরের হাট-বাজার কিংবা মোকামের দ্বারস্থ হতে হয়। নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফলন এলাকার বাইরে বিক্রি করত। অথচ বর্তমানে নিজেদের বছরের খোরাকি চাল পর্যন্ত এলাকার বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সব ধরনের খাদ্য সামগ্রীর জন্য এলাকার বাইরের হাট-বাজার কিংবা মোকামের দ্বারস্থ হতে হয়।
শত শত একর জমিতে এখন দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য সাইনবোর্ড। এক যুগ আগের দেখা মানুষের কাছে এই দীর্ঘ এলাকা এখন অপরিচিত মনে হয়। যেন স্থায়ীভাবে অনাবাদী হয়ে পড়ছে মাইলের পর মাইল কৃষি জমি। মানুষের খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই দৃশ্য গাজীরহাট, আড়ংঘাটা, যোগীপোল ও বারাকপুরে। যেভাবে কৃষি জমি দ্রুত অনাবাদী হচ্ছে তাতে দিষলিয়ার কৃষি জনপদ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভূমি সংক্রান্ত প্রচলিত আইনে বলা আছে কৃষি জমি কোন কৃষক ছাড়া হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। আর কৃষি জমিতে আবাসন ব্যবসার কোন সুযোগ তো নেই। তারপরও কোন ধরনের নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর, দিঘলিয়া ও সেনহাটি এলাকাসহ সর্বত্র কৃষি জমি কিনে ভরাট করা হয়েছে। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহতের আশঙ্কা রয়েছে। সবুজের আস্তরণে ঢেকে থাকা দ্বীপ অঞ্চল দিঘলিয়া জনপদ পরিণত হতে যাচ্ছে যেন বিরানভূমিতে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, দিঘলিয়ায় অন্তত ২ হাজার হেক্টর কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে হেক্টর প্রতি অন্তত ৪ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হতো। তবে এখন জমি কমলেও কৃষকরা উন্নত জাতের ধানের আবাদ করে ফলন বাড়িয়েছে। তবে এ জনপদের কৃষকরা এ প্রতিবেদককে জানান, এ উপজেলায় আবাসন প্রকল্পের ও ভূমিদস্যুদের খপ্পরে পড়ে দিনদিন কৃষি জমি ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে কৃষি জমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।