স্থানীয় সংবাদ

যশোর স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষন আইনে মামলা

মোঃ মোকাদ্দেছুর রহমান রকি যশোর থেকে ঃ
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন,১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬(গ),৬(ঙ),৭ ও ৯ ধারা লংঘনের দায়ে যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়াস্থ রোডস্থ স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টারের মালিক কাজী আনোয়ারুল হকের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। গত ৬ জানুয়ারী সোমবার রাতে মামলাটি করেন, পরিবেশ অধিদপ্তর,যশোর জেলা কার্যালয়ের সিসার্স অফিসার সৌমেন মৈত্র। এর আগে ২০২২ সালে ১৫ নভেম্বর পাশর্^বর্তী দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক রাজু আহম্মেদ ও কিংস মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড হসপিটালের মালিক ডাক্তার সাবিনা বানু ও ডাক্তার মুস্তাফিজুর রহমানের নামে একই ধারায় মামলা হয়েছিল।
মামলায় বাদি উল্লেখ করেন,গত ২০২২ সালের ১৯ জুন অনুষ্ঠিত যশোর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভার ৫নং সিদ্ধান্ত অনুসারে যে সকল ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নির্গত পরিশোধনবিহীন তরল বর্জ্য ভৈরব নদীতে নিক্ষেপ করে সে সকল প্রতিষ্ঠানের পুর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহন ও মনিটরিং করার জন্য একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। একই সিদ্ধান্তে জানানো হয় পরিবেশ অধিদপ্তর,যশোর জেলা কার্যালয় থেকে নোটিশ জারী করা হবে এবং সে সকল ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠান নির্দেশনা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হবে। বিগত ২০২২ সালের ৭ আগষ্ট তারিখে স্মারক নং ৫৭৩ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব নদের দূষণ রোধকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পত্র প্রদান করা হয়। বর্ণিত স্মারকের মাধ্যমে আলোচ্য স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘোপ নওয়াপাড়া রোড,সদর যশোর নামক প্রতিষ্ঠানকে পত্র প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবং অত্র কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের নির্দেশক্রমে বিগত ২৪ নভেম্বর ভৈরব নদের উত্তর পাড়ে অবস্থিত স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সরেজমিন পরির্দণের পর বিগত ৮ ডিসেম্বর দপ্তরের ৪২৪ নং স্মারকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে পত্র প্রদান করা হয়। উদ্যোক্তা পত্রের জবাব প্রদান করেননি। পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নির্দেশনা মোতবেক রির্সাস অফিসার সৌমেন মৈত্র গত ২ জানুয়ারী স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখতে পান ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই থেকে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ৪তলা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতিফ্লোর অনুমানিক ৫শ’ থেকে ৬শ’ বর্গফুট এলাকা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ৩০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এখানে সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়াও বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের সাথে বাদির কথা বলে তিনি জানতে পারেন এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫জন ব্যক্তির অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতিষ্ঠানে ল্যাবসহ অন্যান্য স্থানে পর্যাপ্ত কালার কোড বিন দেখতে পাওয়া যায়নি। ল্যাবের অব্যবহিত রক্ত,ইউরিন,স্টুল ও সিরাম ইত্যাদি পর্যাপ্ত পানি ও ১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড এর সাথে মিশ্রণ না করে সরাসরি পৌরসভার ড্রেনের মাধ্যমে ভৈরব নদে নিক্ষিপ্ত হতে দেখা গেছে। হাসপাতালের ক্ষেত্রে রোগী,রোগীর সহকারী,ডাক্তার,নার্স এবং অপারেশন কার্যক্রমে বেড প্রতি গড়ে ৫০ লিটার হিসাবে ৩০ বেড হাসপাতালে মোট ১হাজার ৫শ লিটার তরণ বর্জ্য ও বেড প্রতি ১ কেজি কঠিন বর্জ্য হিসাবে মোট ৩০ কেজি কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। কঠিন বর্জ্য সমূহ অনিবন্ধকৃত প্রতিষ্ঠান প্রিজম এর কাছে হস্তান্তর করে যা চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিধিমালা ২০০৮ এর পরিপন্থি যা উল্লেখিত বিধিমালার ৭ ও ৯ ধারা লংঘন করা হয়েছে। তাছাড়া,উক্ত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই।পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহন ব্যতীত ২০১৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫(সংশোধিত ২০১০) এর ১২ ধারা লংঘন করা হয়েছে। এছাড়া,ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন চিকিৎসা বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য সরাসরি পৌরসভার ড্রেনের মাধ্যমে ভৈরব নদে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে নদের পরিবেশ ও পরিবেশ হুমকীর মুখে সম্মুখিন। একই সাথে নদী ভরাট কার্যক্রম ত্বরান্বিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির এহেন কার্যক্রমের ফলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন উল্লেখিত ধারা লংঘিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের মালিক আনোয়ারুল হক যশোর শহরের ১৭/সি,পিটি আই সড়ক এলাকার মৃত ছাইদুল হকের ছেলে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, একই অপরাধে পাশর্^বর্তী দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শহরের,২২,হাজী মোহাম্মদ মহাসিন রোড এলাকার মৃত শাজাহান আলীর ছেলে রাজু আহম্মেদ ও পাশর্^বর্তী কিংস মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড হসপিটাল এর মালিক শহরের ১০ বি বামনপাড়া রোড,খড়কীর রওশন আনোয়ারের মেয়ে ডাক্তার সাবিনা বানু ও ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বর্তমানে ১৯বি বামনপাড়া রোড খড়কীর দবির উদ্দিন সরদারের ছেলে ডাক্তার মুস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সৌমেন মৈত্র বাদি হয়ে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর যশোর কোতয়ালি থানায় সকালে দু’টি মামলা দায়ের করেন। যার নাম্বার ৫৪ ও ৫৫। উক্ত মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষন আইনে শাস্তির বিধান করা হলে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button