স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় তুচ্ছ কারণে বাড়ছে হামলা-সংঘর্ষ-খুন

# খুলনায় ওয়ার্ড যুবদল নেতা ছুরিকাঘাতে নিহত : আটক ২

কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনা মহানগরীতে অপরাধের ঘটনা বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে বীভৎস কায়দায় খুন করা হচ্ছে। হামলা-সংঘর্ষ ও খুনের মতো ঘটনায় ব্যবহৃত হচ্ছে পিস্তল ও দেশীয় সব ধারালো অস্ত্রগুলো। একের পর এক খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ এর পরেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমছে না।
গতকাল সোমবার ( ২০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১ টায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাজ্জাদ, মেহেদী, লালু মিলে খুলনা সিটি কপের্োরেশন এলাকার ২১নং ওয়ার্ড যুবদলের সহসভাপতি মানিক হাওলাদার (৩৫) কে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। সদর থানাধীন পুরাতন রেল স্টেশন রোড রেলওয়ে মসজিদের পেছনে এ ঘটনা ঘটে। সে পুরাতন রেল স্টেশন রোড রেলওয়ে মসজিদ এলাকায় মনছুর হাওলাদারের পুত্র। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতি চলছিলো। এর মধ্যে বিকেলে সে মারা যায়। ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে কেএমপি’র এডিসি (মিডিয়া) মোহাঃ আহসান হাবীব বলেন, ওএমএস চাল নেয়ার জন্য লাইনে দাড়ানোকে কেন্দ্রে করে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সাথে জড়িত অভিযোগে সাজ্জাদ ও তার বোন তুলি বেগম নামে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো মামলা দায়ের হয়নি বলে তিনি জানান। একই দিনে রাত ( ২০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আযমখান কমার্স কলেজের ভিতরে মোঃ নওফেল (১৭) নামে এক যুবককে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আহত যুবক টিবি ক্রস রোড এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান লিঠুর পুত্র। চাপাতির কোপে বাম হাতের কেনুর আঙ্গুল কেটে পড়ে যায়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে জাকারিয়া, ঝলক সিয়ামসহ আরো ৮/১০ জন অজ্ঞতানামা ব্যাক্তিরা মিলে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। ছেলেটি সুন্দরবন কলেজের এইচএসসি ক্যান্ডিডেট বলে জানা যায়।
এর আগের দিন রোববার (১৯ জানুয়ারি) খুলনার ফুলতলা উপজেলায় পিঠা উৎসবে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র দুই ছাত্র ইসান এবং তামিমকে ছুরিকাঘাত করেছে দুই যুবক। ওই দিন দুপুর ১২ টার দিকে ফুলতলা দামোদর ইউনিয়ন মুক্তমই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যেই এ ঘটনাটি ঘটে। আহত দুই ছাত্রকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে পুলিশ এ ঘটনায় ছুরিসহ বাদল মিনা ও হাসিব শেখ নামে দুই যুবককে আটক করেন। আহত দুইছাত্র হলেন, মুক্তমই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ও দামোদর এলাকার জনৈক বুলবুলের ছেলে ইসান (১৫) এবং একই এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে তামিম (১৫)। ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জাম্মান খান বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে এ হামলার ঘটনা ঘটে। মুক্তমই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের উদ্যোগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। বহিরাগত বাদল মিনা ও হাসিব শেখের চালচলন ছাত্রদের সন্দেহভাজন হওয়ায় ছাত্ররা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের কাছে থাকা ছুরি দিয়ে ইসান ও তামিমের ওপর হামলা চালায়।
এছাড়া গত ১৮ জানুয়ারি (শনিবার) রাত সোয়া ১০টার দিকে সন্ত্রাসীর গুলিতে শাহীন (৪০) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়। নগরীর মিস্ত্রিপাড়া এলাকার রসুলবাগ মসজিদের সামনে এ ঘটনাটি ঘটে। আহত যুবক ওই এলাকার জনৈক জোনাব আলীর ছেলে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে খুমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। গুলিবিদ্ধ শাহিন নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক। এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, রাত সোয়া ১০ টার দিকে শাহীন রসুলবাগ মসজিদের সামনে অবস্থান করছিলেন। ৫/৬ জন মুখোশধারী সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটি গুলি চালায়। গুলির শব্দের পর এলাকাবাসি এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সৈকতে সিগাল হোটেলের সামনে ঝাউবাগানে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে। যদি খুনটা কক্সবাজারে হলেও খুনিরা সব খুলনার। হত্যকা-ের কয়েকদিন পর তিন আসামিকে গ্রেফতার করে কক্সাবাজারের পুলিশ। হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া তিন আসামি ঋতু (২৪), শেখ শাহরিয়ার ইসলাম (২৭) ও গোলাম রসুল (২৫) কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের বর্ণনা দিয়েছেন। এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের ধারালো চাপাতির কোপে রেজা শেখ (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ীর গুরুতর আহত হয়। তাদের অস্ত্রের আঘাতে রেজা শেখের বাম পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার মাথায়ও গুরুতর জখম হয়। খুলনা লবণচরা থানাধীন জিরোপয়েন্ট এলাকার মেসার্স সিকদার ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গত গত ২৯ নভেম্বর রাতে নগরীর টুটপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এর পর তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন মোল্লা বোয়িংকে গুরুতর আহত করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আশিক বাহিনীর প্রধান আশিক, তার ভাই সজীবসহ ৯ জনের নাম উলে¬খ করে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই মো. আবদুল¬াহ। গত ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর বাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে সবজি বিক্রেতা নাঈম সানা গুলিবিদ্ধ হন। ৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে নগরীর নিরালা এলাকায় ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে এসে একদল সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে পথচারী ইউনুস শেখ গুলিবিদ্ধ হন। এর পর সন্ত্রাসীরা চাঁনমারি এলাকায় গিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ছাড়া ওই এলাকার আব্দুল আহাদ হাওলাদার নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করে। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমরান হোসেন মানিক নামে এক যুবক আহত হন। এর আগে ২ নভেম্বর রাতে নগরীর আলকাতরা মিল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে পঙ্গু রাসেল নামে এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করে। এ সময় সজীব ও ইয়াসিন নামে দুই যুবককে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। একই রাতে নগরীর বাবু খান রোডে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান বেলালকে আহত করে। নগরীর বসুপাড়া এলাকায় গত ৫ নভেম্বর রাতে অস্ত্রধারীরা রফিকুল ইসলাম মুক্তা নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button