স্থানীয় সংবাদ

পবিত্র লাইলাতুল বরাত আজ

স্টাফ রিপোর্টার : সারা দেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা শবে বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। এ রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ হিসেবেও পরিচিত।
মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন।
পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তাও নিয়ে আসে। শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস। তাই শবে বরাত থেকেই কার্যত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
এ রাতে, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য এক বিশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। “শব” শব্দের অর্থ রাত এবং “বরাত” অর্থ মুক্তি, তাই শবে বরাত অর্থ হলো ‘মুক্তির রাত’। এটি এমন একটি রাত যেখানে আল্লাহ তাআলা তার অসংখ্য বান্দাকে ক্ষমা ও মুক্তি প্রদান করেন। শাবান মাসের পঁচিশ তারিখে এই রাত্রি উদযাপিত হয়, যা মুসলিম উম্মাহর গুনাহ মাফের জন্য একটি দারুণ সুযোগ এনে দেয়।
এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, তাদের কল্যাণের জন্য দোয়া কবুল করেন এবং আগামীর রিজিক, মৃত্যু ও অন্যান্য বিধান নির্ধারণ করেন। শবে বরাতের রাতে যে কেউ যদি শুদ্ধ মন ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছে তওবা করে, তবে তার পাপ মাফ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর রহমত লাভ করে পরবর্তী জীবনে কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে পারে। এই রাতে বিশেষ ইবাদত, দোয়া, এবং নফল রোজা রাখা খুবই সম্মানিত ও কল্যাণকর। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে, তিনি অবশ্যই মাফ করবেন, কারণ তার রহমত সমস্ত সৃষ্টির উপর ব্যাপ্ত।
শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সরাসরি কোন আয়াত পাওয়া না গেলেও, হাদিসের মাধ্যমে এ রাতের বিশেষত্ব এবং তার মাহাত্ম্য স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
হাদিসে এসেছে, যখন শাবান মাসের পনেরতম রাত আসে, আল্লাহ আসমান-জমিনের দিকে তাকান এবং বলেন: ‘হে আমার বান্দারা! কেউ মাফ চায়, আমি তাকে মাফ করি, কেউ রিজিক চায়, আমি তাকে রিজিক দিই।'” (শুআবুল ঈমান, হাদিস নং ৩৫২৭)
এ হাদিস থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের ক্ষমা করেন, তাদের দুঃখ দূর করেন এবং তাদের জীবনের সুখ-স্মৃতি রচনা করতে সাহায্য করেন। এছাড়া একাধিক হাদিসে এ রাতে ইবাদত করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
শবে বরাতের ফজিলত : এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। শবে বরাতে ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা হয়, বিশেষত নিজেদের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়। এ রাতে আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে যে দোয়া সবচেয়ে বেশি পড়া হয় তা হলো
আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া, ফাআফু আন্নি। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি পরিপূর্ণ ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
এ রাত সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত থাকলেও আলেমদের মতে, এ রাতের বিশেষ গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এটি এমন একটি রাত, যখন আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করেন এবং তাদের তাওবা ও দোয়া কবুল করেন।
কাজেই আমরা বলতে পারি, শবে বরাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্যও বটে। এ রাতে ইবাদত করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে রহমত ও মাগফিরাত লাভ করতে পারে। তাই আমাদের উচিত শবে বরাতে একাগ্রচিত্তে ইবাদত করা এবং মহান আল্লাহর রহমত কামনা করা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button