খুলনায় ধর্মীয়গার্ম্ভীযে শব-ই বরাত পালিত

গুনাহ্ হতে মুক্তির জন্য রাতভর ইবাদত: কবরবাসীদের জন্য বিশেষ দোয়া
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ খুলনায় যথাযোগ্য মর্যদা ও ধর্মীয় গার্ম্ভীযের মধ্যে দিয়ে মুসলিম উম্মেহার জাগতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ন দিন লাইলাতুল বরাত পালিত হয়। মুসলিম উম্মার কাছে সৌভাগ্যের রজনী লাইলাতুল বরাত, এই রাতে মহান রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাতে ধর্মপ্রান মুসল্লিরা আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকিরসহ নানামুখি ইবাদত পালন করেন। নগরীর মসজিদগুলোতে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া মোনাজাত করা, একই সাথে কবরবাসী পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজনের মাগফেরাত ও ক্ষমার জন্য কবরস্থানে গিয়ে বিশেষ প্রার্থনাসহ কান্নাকাটি করেন মুসল্লিরা। প্রতি বছর লাইলাতুল বরাতের রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিরা তাদের কবরবাসী বাবা-মা,আত্বীয়-স্বজন, প্রতিবেশি, এলাকাবাসীর মাগফেতার ও ক্ষমার প্রার্থনা জন্য সরকারি কবরখানে উপস্থিত হন। যে কারণে কবরখানা গুলোতে হাজারো মুসল্লিদে ঢল নামে, ওই বিষয়টি মাথায় রেখে কেসিসি বিদ্যুৎ বিভাগ পূর্ব হতে প্রস্তুতি গ্রহন করে থাকে। ওই ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ নগরীর ৭টি ওয়ার্ড সমূহ যথাক্রমে- ৩নং ওয়ার্ডস্থ মহেশ^রপাশা (সাড়াডাঙ্গা) কবরখানা, ৪নং ওয়ার্ডস্থ দেয়ানা উত্তপাড়া কৃষি সংলগ্ন কবরখানা, ১০নং ওয়ার্ডস্থ গোয়ালখালী কবরখানা, ২৫নং ওয়ার্ডস্থ বসুপাড়া কবরখানা, ২৪ নং ওয়ার্র্ডস্থ নিরালা কবরখানা, ৩০নং ওয়ার্ডস্থ টুটপাড়া কবরখানা ও ৩১নং ওয়ার্ডস্থ জান্নাতুল বাকি কবরখানাসহ ৩১ টি ওয়ার্ডের মসজিদ সংলগ্ন এলাকায়ও পর্যাপ্ত বাতির সরবরাহ করে। কেসিসি’র এমন উদ্যোগ গ্রহন করায় কবরখানায় আসা মুসল্লিরা কেসিসি’র বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা করেছেন। একই সাথে ওই কবরখানা গুলোতে পরিচ্ছন্নতার কাজও করেছে কেসিসির কঞ্জারভেন্সী শাখাও।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী ) পবিত্র শব-ই-বরাত উপলক্ষ্য নগরীর শিববাড়ী, ডাকবাংলা, সোনাডাঙ্গা, ময়লাপোতা, রুপসা, বয়রা, বৈকালি, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেলিগেট, ফুলবাড়ীগেট, শিরোমনি, আটরা, ফুলতলাসহ নগর ও নগরীর স্থানীয় এলাকাগুলোর মসজিদে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী আলোচনা ও বিশেষ দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে এশার নামাজের পর ওইসব এলাকার মসজিদ গুলোতে লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে ইসলামী আলোচনা পেশ করেন স্ব-স্ব মসজিদের ইমামগন। আলোচনা শেষে আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তি ও ক্ষমা জন্য, কবরবাসীদের ক্ষমা ও মাগফেরাতে জন্য এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত হয়। একই দিনে নগরীর বিভিন্ন মসজিদ সমূহে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী মুসল্লিরা নামাজ, কোরআন তোলোয়াত, তজবি,তাহলিল, জিকিরসহ বিভিন্ন ইবাদতে কাটিয়েছে। এছাড়া নগরীর নগরীর মহেশ^রপাশা (সাড়াডাঙ্গা), দেয়ানা উত্তপাড়া কৃষি সংলগ্ন কবরখানা, ১০নং ওয়ার্ডস্থ গোয়ালখালী, ২৫নং ওয়ার্ডস্থ বসুপাড়া, ২৪ নং ওয়ার্র্ডস্থ নিরালা, ৩০নং ওয়ার্ডস্থ টুটপাড়া ও ৩১নং ওয়ার্ডস্থ জান্নাতুল বাকি কবরখানা গুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী মানুষ তাদের হারানো প্রিয় বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনের মাগফেরাত ও ক্ষমার জন্য উপস্থিত হন। ওই সময় তারা কান্নারত অবস্থায় মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
কথা হয় কৃষি কলেজ সংলঘœ দেয়ানা সরকারী কবরস্থানে পিতার কবর জিয়ারত করতে আসা ইঞ্জিরিয়ার পারভেজ বখতিয়াতের সাথে। তিনি জানান, বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর হলো। প্রতি বছরের বিশেষ এই দিনটিতে বাবার কবর জিয়ারত করতে আসি। এছাড়াও মাঝে মধ্যে বাবার করবখানাটি দেখভাল করার জন্য আছি। শব-ই-বরাত ভাগ্যে নির্ধারনের রাত বলে জেনে আসছি। তবে আমলের উপর সব কিছু নির্ভর করে। আল্লাহ যেন বাবাকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতের মেহমান করে নেন, পাশাপাশি আমাদের সকলের গুনাহ মাফ করে দেন এটাই কামনা।
সম্প্রতি পিতা হারানো অপর স্বজন মুনতাসির রহমান জনি জানান, বাবা মারা গেছে গত সোমবার। বাবা বেঁচে থাকতে উপলব্ধি করতে পারি নাই, বাবা আমাদের মাথার উপর একটি বটগাছ ছিল। বাবাকে হারিয়ে আজ বুঝতে পেরেছি, বাবা আমাদের জন্য কি ছিল, কতটুকু ছিল। শুক্রবার শবে-বরাতের রাতে বাবার কবর জিয়ারত করতে গিয়েছি। দু’হাত তুলে বাবার জন্য দোয়া করেছি, তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমার প্রার্থনা করেছি। আবরার হাসনাত আরিক জানান, মসজিদে এসেছি নামায আদায় করতে। নামায আদায় শেষে দাদার কবর জিয়ারত করতে গিয়েছি। দাদা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে গেছেন। দাদা নামাজি মানুষ ছিলেন, আমাকে খুব আদর করতেন। আজ দাদা নেই, দাদার কথা খুব মনে পরে। আল্লাহ আপনি আমার দাদাকে ক্ষমা করে দেন। আমাকে আামার দাদার মতো নামাজী মানুষ হিসাবে কবুল করে নেন। বৃদ্ধ মুসল্লি মালেক জানান, জীবনের অধিকাংশ সময় পার করে দিয়েছি। জানি না কখন মৃত্যু আসবে। সব সময় মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে চলা উচিত। মসজিদে এসেছি নামায আদায় করতে। তবে দুঃখ জনক আমরা ফরজ নামাজ বাদ দিয়ে অন্য ইবাদত নিয়ে টানা হেচড়া করি। সকলের উচিৎ পাচ ওয়াক্ত নামায় আদায় করা, পাশাপাশি আল্লাহর সকল ফরজ ইবাদত আগেই পালন করা।
মাওঃ আইয়ূব আলী জানান, মুসলমানদের সমগ্র কর্মই ইবাদত, যদি তা সঠিকভাবে পালন করা যায়। নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো তাহাজুতের নামাজ। শব-ই-বরাতের রাতে অনেকেই সারা রাত নফল নামাজ পড়ে ফজরের নামাজ কাযা করে ঘুমিয়ে পড়েন। তাহলে সারা রাত জেগে ইবাদত করাটাই বৃথা, সুতরাং, আগেই আমাদের মহান রব্বুল আলামিনের ফরজ হুকুম পালন করা উচিত। অতঃপর নফল।
কেসিসি’র সহকারি প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, যেহেতু পবিত্র লাইলাতুল বরাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিরা তাদের স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে আসেন। ওই বিষয়টি মাথায় রেখে কেসিসি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ৭টি ওয়ার্ডের কবরখানায় পর্যাপ্ত বাতির সরবরাহ সম্পন্ন করি। একই সাথে মুসল্লিরা সারা রাত জেগে মসজিদ সমূহে ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন, ওই বিষয়টিও মাথায় রেখে ৩১টি ওয়ার্ডের মসজিদ সংলগ্ন এলাকায়ও যথেষ্ট বাতির সরবরাহ সম্পন্ন করি। কেসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ হতে মুসলমানদের বিশেষ এই দিনটিতে শতভাগ সেবা দেওয়া চেষ্টা করেছি মাত্র