স্থানীয় সংবাদ

সাবেক উপমন্ত্রী ও সিটি মেয়রের ক্ষমতাবলে মোংলার দিগরাজের সম্রাজ্য গড়ে তোলে আ’লীগ নেতা নাসির

# দুধ বিক্রেতা থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক!
#একের পর এক জমি দখল ও জঘন্য অন্যায়
করেও এলাকায় বুক উচিয়ে চলাফেরা করতেন
#ক্ষমতা ও অঢেল ধনসম্পদের কারনে কেউ
ভয়ে কথা বলতে সাহস পর্যন্ত পেতো না
# আলোচিত বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার খোকা
তালুকদার হত্যাকা-ে মুল মাষ্টার মাইন্ড নাসির
# হত্যা মামলাটি পূনরায় তদন্তের দাবি
# ফাঁসির দাবিতে র‌্যালী ও মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার : একে একে বের হতে শুরু করেছে সম্প্রতি সারাদেশব্যাপী শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্ডে আটক হওয়া মোংলা পৌর আওয়ামীলীগ নেতা ও দিগরাজের ত্রাস এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অপসারিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের একান্ত সহচর নাসির হাওলাদারের নানা কুকীর্তির কথা। মাদক ব্যবসায়ী, খুনি, লুট, জুলুমকারী, ভূমিদস্যু, স্বর্ণ চোরাচালানকারী, নারী ব্যবসা, খুনের তথ্য লোপাটসহ নানা অভিযোগ এই আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। এমনকি তার ক্ষমতার দাপট ও অস্ত্রের ঝনঝনানি দিগরাজ ও মোংলার সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। বর্তমানে এই নাসির হাওলাদারের খুলনা, মোংলা ও দিগরাজ এলাকায় কয়েকটি বাড়ি, মার্কেট ও কয়েকশ’ বিঘা জমির মালিক। আওয়ামী সরকারের আমলে মোংলা উপজেলার দিগরাজ এলাকায় এক দস্যুতার সম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলো মোংলা পৌর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নাসির হাওলাদার। মালিক হয়েছে শত শত কোটি টাকার। একের পর এক জমি দখল করে বুক ফুলিয়ে এলাকায় বসবাস করা এই নাসির ছিলো খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অপসারিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের একান্ত সহযোগী। এছাড়াও সাবেক মেয়রের স্ত্রী সাবেক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারও নাসিরকে শেল্টার দিয়ে আসছিলো। সব মিলিয়ে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে ছিলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা নাসির।
এমনকি ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর মোংলার দিগরাজের চাঞ্চল্যকর বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার খোকা তালুকদার হত্যাকা-ের মূল মাষ্টার মাইড সন্ত্রাসী নাসির হাওলাদারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যা করানোর অভিযোগ উঠে এসেছে। এঘটনায় মামলা করা হলেও এই নাসির মেয়য় ও উপমন্ত্রী’র রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে ও বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদের দাপটে আজও কোন সূরাহা হয়নি। ফলে এখনও পর্যন্ত আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। এমনকি হত্যাকা-ের বিষয়টি সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিছু অসাধু সিআইডি ও ডিবি পুলিশ অপরাধীদের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যার কারনে এখনও পর্যন্ত এ হত্যার বিচার হয়নি। ওই সময় নাসির হাওলাদারের বিরুদ্ধে নিহতের পরিবার মামলা করার চেষ্টা করা হলেও তৎকালীন আওয়ামী সরকার দলীয় হওয়ার কারনে সে অভিযুক্ত হয়নি। তবে পূনরায় নতুন করে খোকা তালুকদারের হত্যাকা-ের বিষয়ে নাসির হাওলাদারকে পুলিশ বস্তুনিষ্ঠ ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হবে বলে নিহতের পরিবার আশাবাদী। এদিকে নাসির হাওলাদারের ফাঁসির দাবিতে সাধারণ মানুষ ফুসে উঠেছে। এ সকল ঘটনায় শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে ১০ টায় দিগরাজ বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে দিগরাজ পেট্রোল পাম্পের সন্নিকটে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এর আগে দিগরাজ হাজী বাড়ির সামনে থেকে প্রতিবাদকারীরা র‌্যালী সহকারে এ মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন। এ মানববন্ধনে প্রতিবাদকারীদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোংলার একটি স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মো. হেমায়েত হোসেন। এ-সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার নিহত খোকা তালুকদার এর ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। এব্যাপারে নির্যাতিত পরিবারের পক্ষ থেকে দিগরাজের নিহত খোকা তালুকদার এর ছেলে শিমুল তালুকদার বলেন, আমার আব্বুর হত্যাকা-ের বিষয়টি সড়ক দুর্ঘটনা বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। এই হত্যার পিছনে হাত রয়েছে দিগরাজের ত্রাস ও খুনি নাসির হাওলাদারের। তার ক্ষমতা ও অঢেল অর্থ-সম্পদের কারনে এ হত্যা মামলাটি আজও কোন সূরাহা হয়নি। এ হত্যাকা-ের মুল পরিকল্পনাকারী নাসিরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হবে। তাহলে আমার আব্বুর হত্যার ন্যায় বিচার পাবো। দিগরাজ এলাকার ব্যবসায়ী ও নাসিরের শ্যালক মো. শাহিন শেখ বলেন, নাসির সব সময় তার স্ত্রী আসমা আরোজকে মারধোর করতো। ২০১৯ সালের মে মাসে নাসির আসমাকে হত্যা করে। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। খালেক তালুকদারের কারণে আমরা কোনো মামলা করতে পারিনি তার বিরুদ্ধে। সে আমার বোনের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পর্যন্ত গায়েব করে দিয়েছে। মো. শাহিন শেখের বড় ভাই মোংলার একটি স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, আমার তিনটি জায়গা নাসির জোর করে ভোগ দখল করছে। আমার ছোট ভাইকে ফুসলিয়ে তার কাছ থেকে জমি লিখিয়ে নেয়। পরে আমাদের পুরো জমি সে দখল করে নেয়। তৎকালীন সময় খালেক তালুকদারকে বলা হলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। স্থানীয় প্রশাসনও সামনে আসেনি। এখনো পর্যন্ত সে সেই জমি দখল করে আছে। সকল কাগজপত্র আমার থাকার পরেও ভোগদখল করতো নাসির। থানা এবং বিএনপি’র একটা অংশের সহায়তায় শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার পরেও সে আমাদের একটা জমির কাজে বাধা দিয়ে লোকজনকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এলাকায় সরকারি জমি ও খালের জমি প্লট তৈরি করে নাসির বিক্রি করতো বলে জানান তিনি। খুলনা থেকে সাংবাদিক এম এ আজিম বলেন, মোংলা পৌর আওয়ামী লীগ নেতা নাসির হাওলাদার এক সময়ের দুধ বিক্রেতা থেকে এখন শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় জেলে থাকাকালীন এই সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু নাসির হাওলাদার মোংলার দিগরাজ হাজীবাড়িস্থ খুলনা-মোংলা মেইন সড়কের পাশে আমার মা’য়ের (৩৯ শতক) তিন কোটি টাকার জমি দেড় কোটি টাকা চুক্তিতে প্রতারণা করে মা’য়ের স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে জমির পাওনা টাকা আনতে গেলে আমাদের দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেয়। আদালতে ওই জমির মামলার বাদীও ছিলো আমার আম্মা। বর্তমানে সেই জায়গার উপর প্রতারক নাসির মার্কেট বানিয়ে নিয়েছেন। এই ঠকবাজ ও মামলাবাজ নাসির স্থানীয় সাবেক প্রতিমন্ত্রী হাবিবুন নাহার ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অপসারিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ছত্রছায়ায় এসকল অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে আসছিলো। অবশেষে অপারেশন ডেভিল হান্ট যৌথবাহিনীর অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু নাসির হাওলাদার খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার তার নিজ বাড়ির দোতলা থেকে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারী) মধ্যরাতে প্রায় ৩ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button