৪৮ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রনে

# পৃথক ২ টি তদন্ত কমিট গঠন
# ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনের নির্দেশনা
বাগেরহাট প্রতিনিধি ঃ বাগেরহাটের পুর্ব-সুন্দরবনে লাগা আগুন সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শুস্ক মৌসুমে পানি সংকটের মধ্য দিয়ে টানা প্রায় ৪৮ ঘন্টা চেষ্টার পর মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের তেইশের ছিলা নামক এলাকায় লাগা আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবী করছেন কর্তব্যরত বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। পানির অভাবে আগুন নেভাতে শুরু থেকেই বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগকে। ভাটার কারণে মঙ্গলবার সকালেও শুকনো ছিল মরা ভোলা নদী। এর আগে সোমবার রাতে জোয়ারের সময় আগুন লাগা ওই এলাকায় ব্যাপক পানি ছিঁটানো হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবকরা বনের তেইশের ছিলা এলাকায় তল্লাশি শুরু করেন। পুরো এলাকা তল্লাশি করে দেখা হবে, ঘটনা স্থল ও আশপাশের কোথাও আগুনের কু-লী বা ধোয়া রয়েছে কিনা। পাশাপাশি ড্রোন উড়িয়ে ও পর্যবেক্ষণ করা হবে- আর কোথাও ধোঁয়ার উপস্থিতি দেখা যায় কিনা। রাতভর সুন্দরবনের আগুন নির্বাপনের কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা কার্যালয়ের সিনিয়র স্টেশন অফিসার স ম আরিফুল হক বলেন, রাতে জোয়ার আসার সাথে সাথে আমরা পানি ছিটানো শুরু করেছি। রাত সাড়ে ৩টা নাগাদ আমরা পানি ছিটিয়েছি। রাতে আমরা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি, বনের কোথাও আগুনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এখন বনের ভিতরে সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ চলছে। বন বিভাগের লোকজনও পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। যদি আগুনের অস্তিত্ব না পাওয়া যায়, তাহলে আগুন নির্বাপন হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে । সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ বলেন, রাতভর আমরা সবাই মিলে কাজ করেছি। এখন সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ চলছে। জোয়ার আসার পর সোয়া ৯টার দিকে আবারো পাম্প চালানো হয়েছে। এখন কোথাও আগুনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আশা করি অগ্নি নির্বাপন সম্পন্ন হয়েছে। তবে আমরা তল্লাশি চালাচ্ছি, সর্বশেষ ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তল্লাশি করা হবে। এর আগে গেল শনিবার সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী বন টহল ফাঁড়ির টেপার বিলে আগুন লাগে। রবিবার সকালে সেই আগুন নেভানো হয়। সুপ্ত আগুন ও ধোয়ার কুন্ডলী খুজতে বন বিভাগ ড্রোন ব্যবহার করে। তখন কলমতেজী এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তেইশের ছিলায় আগুনের অস্তিত দেখতে পায় বন বিভাগ। তাৎক্ষনিকভাবে বন বিভাগ, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক, ভিটিআরটি, সিপিজি সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে যাতে আগুন ছড়িয়ে না পড়ে, এ জন্য ফায়ার লাইন তৈরি করে। আগুনের স্থল থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ভোলা নদীতে পাম্প বসিয়ে, এদিন রাতেই পানি ছিটানো শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। আগুন বনের কতটা এলাকায় ছড়িয়েছে এবং আগুনের উৎসের বিষয়ে বন বিভাগ স্পষ্ট করে কিছু না বললেও, স্থানীয়রা বাসিন্দারা বলছেন, তেইশের ছিলা ও কলমতেজী এলাকায় আগুনে কমপক্ষে ৮ একর বনভূমি পুড়েছে। বন অধিদফতরের খুলনা বিভাগের সিএফ ইমরান আহমেদ বলেন, সুন্দরবনের তেইশের ছিলার শাপলারবিল এলাকায় লাগা আগুন রবিাবার রাত থেকে নেভানোর কাজ শুরু করে বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। গভীর রাত পর্যন্ত পানি ছিটানোর কাজ চলে। পানির সংকট থাকায় বনের আগুন নেভানোর কাজে বেগ পেতে হয়েছে। তবে নতুন এলাকায় যাতে আগুন না ছড়ায় সেজন্য প্রথমে ফায়ার লাইন কাটার কাজ আগেই করা হয়। আগুন এখন পুরো নিয়ন্ত্রনে। বনে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপণে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দিপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগেও একটি কমিটি করা হয়। কমিটিদের কে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।