বয়রা শ্মশানঘাটস্থ আল-আকসা নগরে ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন

# পাউবো ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির গাছপালা কর্তন, গ্রেফতার ২
# বাড়ি ঘর ভাংচুর করে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন
স্টাফ রিপোর্টার ঃ নগরীর বয়রা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন হরিণটানা থানাধীন আল আকসা নগরে ভূমিদস্যু চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ব্য্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলে লিপ্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই চক্রটি প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি ও সম্পদ দখল করেছে। এঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট মালিকানাধীন অংশের মালিক মুক্তা রহমানের পক্ষে তার আত্মীয় মোঃ সাইফুর রহমান বাদী হয়ে হরিণটানা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এঘটনায় পুলিশ ভূমিদস্যু চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তবে এখনও বাকী সদস্যরা পলাতক রয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, নগরীর রায়েরমহলস্থ আজিজের মোড় এলাকার মোঃ খলিল গাজী, রায়ের মহল ছোট বয়রা এলাকার কামাল হোসেন ও গোবরচাকা হাজী বাািড় এলাকার ইরান আলীসহ একটি ভূমিদস্যু চক্র হরিণটানা থানাধীন শ্মশানঘাটস্থ আল আকসানগর এলাকা চকআহসানখালী মৌজার (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক) পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকশতক জমি দখল করে ঘেরা বেড়া দিয়ে রেখেছে। এমনকি তারা উল্লেখিত স্থানে সরকারি মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি শিরিষ গাছ কেটে ফেলেছে। যা ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে। এছাড়া সরকারি জমি সংলগ্ন মুক্তা রহমানের জমির তিনটি টিনের ঘর ভাংচুর এবং জমিতে থাকা রেন্ডি, চাম্বুল ও শিরিষ গাছ ও কেটে ফেলে। যার গোড়া রয়েছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে সরকারি ও মালিকানাধীন জমি দখল এবং গাছপালা কর্তন ও বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক হন। এঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল মোঃ সাইফুর রহমান বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত পরিচয়ের ৫-৬ জনকে আসামী করে হরিণটানা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় মৃত জীবন গাজী ওরফে মমিন উদ্দিন গাজীর পুত্র মোঃ খলিল গাজী, মৃত মীর সালাউদ্দিনের পুত্র ইরান আলী ও মৃত খাদেম হোসেনের পুত্র কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়। এঘটনায় পুলিশ খলিল গাজী ও কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে।
এঘটনায় দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভূমিদস্যুরা কয়েকদিন আগে লেবার নিয়ে এসে লন্ডন প্রবাসী মুক্তা রহমানের জমিতে জোর পূর্বক মাটি ভরাট করে। পরবর্তীতে গত ১৬ এপ্রিল সকালে চক্রটি পুনরায় লেবার নিয়ে এসে ওই জমি ও বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে পূর্বের পুরাতন ৩টি টিনের ঘর ভাংচুর করে। যার ক্ষতির পরিমাণ ৩ লাখ টাকা। এছাড়া জমিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের ৫/৭ টি পুরানো রেন্ডি, চাম্বুল ও শিরিষ গাছ কর্তন করে। যার মূল্য ২ লাখ টাকা। গাছপালা কেটে ঠেলা গাড়িতে করে চুরি করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে সাইফুর রহমান ও তার বড় ভায়রা মোঃ আনোয়ার আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান আসামীরা ঘটনাস্থলে থাকা ৩টি টিনের ঘর ভাংচুর করে উক্ত স্থানে নতুন করে বাঁশ খুটি দিয়ে নতুন ঘর তৈরি করছে। তখন তারা বাঁধা দিলে তাকে কিল ঘুষি মারে এবং অন্যান্য আসামীরা দেশীয় অস্ত্র-সন্ত্র সহ বেআইনি জনতায় তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। এসময় তারা প্রাণ ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে আসামীরা উক্ত বাড়িতে থাকা ৩টি টিনের ঘরের ভাড়াটিয়াদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বরে করে দেয়। এবিষয়ে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, জমি দখল ও গাছপালা কর্তনের খবর পেয়ে তিনি ও রাজস্ব অফিসার মোঃ মেহেদী হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া না যাওয়ায় এবিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে জমিটি পরিমাপ করে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার রাজস্ব অফিসার মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, সরকারী জমি দখল এবং গাছপালা কর্তন দ-নীয় অপরাধ। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হরিণটানা থানার এসআই মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, তিনি এজাহারভুক্ত আসনামী খলিল গাজী ও কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করেন। এছাড়া অপর আসামী ইরান আলী আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন নেয়। তবে ঘটনার সঙ্গে উল্লিখিত তিন আসামীর সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছেন।