স্থানীয় সংবাদ

এক বছর আগে কাজ শেষ হলেও চালুতে নানা অযুহাত

খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল

দায়িত্ব বুঝে নিতে গড়িমসি স্বাস্থ্য দপ্তরের
দ্রুত চালুর দাবি নাগরিক নেতাদের
চালুর আগেই ৯৮ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প!

কামাল মোস্তফা ঃ ১০ তলা বিশিষ্ট ২০০ শয্যার খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতালটি প্রথম ধাপে ৫ম তলা পর্যন্ত শেষ করে চালু হওয়ার কথা। এক বছর আগে কাজ শেষ হলেও হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতাকে দায়ী করছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। পুরোপুরি প্রস্তুত হাসপাতালটি চালু না করে নতুন করে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম তলার কাজ শুরু করার জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বিভাগীয় এ হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে ১০ জেলার শিশুরা। ফলে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০ শয্যার আধুনিক এই হাসপাতাল নির্মাণে প্রথম ধাপে ৫ম তলা পর্যন্ত ব্যয় ধরা হয় ১১৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২৪ সালের জুনে। ২০১৯ সালে হাসপাতালের জন্য কেডিএ’র ময়ূরী আবাসিক এলাকার বিপরীতে সিটি বাইপাস সড়কের পাশে জমি নির্ধারণ করা হয়। বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষ্ণনগর ও ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদ মৌজার ৪ দশমিক ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ওই বছর জেলা প্রশাসন জমির মূল্য বাবদ ৫২ কোটি ২ লাখ টাকা পরিশোধ করে জমি গণপূর্ত বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়।
গণপূর্ত বিভাগ ২০২০ সালে প্রথমপর্যায়ে হাসপাতালের বেজমেন্ট ও একতলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই কাজের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, সংশোধিত প্রস্তাবনায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চমতলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের অনুমোদন মেলে। এতে রান্নাঘর, সাবস্টেশন, পাম্প হাউজ, সীমানাপ্রাচীর, রাস্তা, ড্রেন ও ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের কাজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুন মাসে।
কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কোনো কাজই নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয়নি। বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুনে কাগজে-কলমে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৫ তলা ভবনের কাজ শেষে রংসহ সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে। প্রবেশপথ ও হাসপাতাল এরিয়ার ভিতরের রাস্তাগুলো আরসিসি ঢালাইয়ের। কিন্তু দক্ষিণ দিকে সীমানাপ্রাচীর ও প্রধান ফটকে গেট নেই। ফলে গরু-ছাগল অবাধে চরছে এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণ নোংরা হচ্ছে। হাসপাতালের ভিতরে ঢালাই রাস্তায় ক্রিকেট খেলছে কিছু যুবক।
এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান জানান, প্রথম ধাপের ৫ম তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য ৩ দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছেনা।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজা খাতুন বলেন, গণপূর্ত বিভাগ থেকে চিঠি পেয়েছি। তবে হাসপাতালের একপাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটকে গেট নেই। ফলে হাসপাতালটি অরক্ষিত রয়েছে। আরও কিছু সমস্যা রয়েছে সেগুলো আমরা চিঠির জবাবে জানিয়েছি। হাসপাতালটি আমি আবারও পরিদর্শন করবো।
প্রাচীর ও প্রধান ফটকে গেটের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, সমাপ্ত প্রকল্পে পুরো বাউন্ডারি ওয়াল ও মেইন গেটের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তবে ভবনটি ছয়তলা থেকে দশতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ বাকি রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়াল, ড্রেন, মেইন গেট, নার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে ৯৮ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত এসব কাজ সম্পন্ন হবে।
খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খুলনাঞ্চালের শিশুদের জন্য হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের যদি কোন সমন্বয়হীনতা থাকে তাহলে তার সমাধান করে অতি দ্রুত হাসপাতালটি চালু করার জোর দাবি জানাই।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button