জাতীয় সংবাদ

তারজীন ট্র্যাজির ১১ বছরে বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবিতে মানববন্ধন

প্রবাহ রিপোর্ট : তাজরীন গার্মেন্টস দুর্ঘটনার ১১ বছর উপলক্ষে ১০ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম (এসএনএফ)। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তাজরীন গার্মেন্টস দুর্ঘটনার ১১ বছর হয়ে গেছে। যেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ১১৩ জন শ্রমিক, তাদের পরিবার আজও তাদের ক্ষত স্মৃতি বেয়ে বেড়াচ্ছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য শ্রমিক, সেই ক্ষত এখনো শ্রমিকদের গায়ে লেগে আছে। এ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা আজও তাদের ক্ষতিপূরণ পায়নি ও পুনর্বাসন হয়নি। তারা বলেন, শুধু তাজরীন গার্মেন্টস ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনা নয়। দেশে এখনো শ্রমিকরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ন্যায্য অধিকার চাইতে গেলে তাদের গুলি করা হচ্ছে। জেলে রেখে অত্যাচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনেও শ্রমিকদের ওপর প্রশাসন নির্বিকারে অত্যাচার চালিয়েছে। তবুও তাদের প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত হয়নি। আজকের মানববন্ধনে আমরা সব শ্রমিকের জন্য নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানাই। এ সময় জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:
১. তাজরীন ও রানা প্লাজাসহ সারাদেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ভাইবোন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইএলও কনভেশন ১২১ এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫-আইনের আলোকে সারা জীবনের আয়ের ক্ষতির ভিত্তিতে ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আদালতের আদেশে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে সব শ্রমিককে শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে।
৩. আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশন, মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন এবং উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসরণে ক্ষতিপূরণের জাতীয় মানদ- তৈরি করতে হবে।
৪. আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৫. ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রসমূহ পরিদর্শনে দেশব্যাপী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বা ঝটিকা পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং সবার জন্য নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।
৬. পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট ও বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সব শ্রমিককে বিমার আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭. কর্মক্ষেত্রের সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার অবহেলাজনিত ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বা অন্যান্য সব কারণ নির্ণয় করতে হবে, তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
৮. শ্রমিকসহ সব মানুষের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
৯. প্রতিটি শিল্প-কারখানায় শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন ও এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘনকারীর উপযুক্ত শাস্তির বিধান করতে হবে।
১০. ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলাসহ শ্রমিকদের সক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সংশ্লিষ্টদের অধিক সংবেদনশীল হতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের সভাপতি হামিদা হোসাইন, কার্যকরী সভাপতি, আবদুল ওয়াহেদসহ বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিক নেতারা।
বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের: এদিকে তাজরীন ফ্যাশন্সে অগ্নিকা-ে শ্রমিক হত্যার ১১ বছরে খুনি মালিক দেলোয়ারের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দাবি জানিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের নেতারা। গতকাল শুক্রবার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশন্স গার্মেন্টসের সামনে নিহত শ্রমিকদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এ সময় তারা এসব দাবি জানান। গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সদস্য মমিনুর রহমান মমিনের সই করা পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মী ও তাজরীনের আহত শ্রমিকরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে সমাবেশে বক্তারা বলেন, শ্রমিক হত্যাকা-ের ১১ বছর পার হয়ে গেলেও খুনি মালিক দেলোয়ারের বিচার এখনও হয়নি। তারা আরও বলেন, অগ্নিকা-ের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় ২০১৫ সালের অক্টোবরে। বিগত আট বছরে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সর্বমোট ৫৬টি তারিখ ধার্য ছিল। এর মধ্যে মাত্র আট দিন রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করেছে। মামলার অভিযোগপত্রে উল্লিখিত ১০৪ জনের মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বিচারকার্য পরিচালনায় রাষ্ট্রের এই উদাসীনতা মালিকের রক্ষাকবচ। অগ্নিকা-ের জন্য দায়ী মালিকসহ সব অভিযুক্তের বিচার চাই। এ ছাড়া অগ্নিকা-ে মারাত্মক আহত কর্মক্ষমতা হারানো কয়েক শ শ্রমিক এখনও সম্মানজনক কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহত আহত শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ কেউ বহন করছে না। আমরা হত্যাকা-ের বিচারসহ নিহত আহত শ্রমিক পরিবারকে সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন দাবি করছি।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button