টেলিটক প্যারাসিটামল ২ বেলার প্রেসক্রিপশনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে
একমাত্র রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান

অন্য সব মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক বাড়ে : শুধু টেলিটকের কমে
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ টেলিটকের ভেরিফাইড অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সম্প্রতি পোস্ট করা ‘মিনিট বান্ডেল’ অফারের একটি ফটোকার্ডের নিচে ইমন নামের এক টেলিটক সিমের গ্রাহক অভিযোগ করে লেখেন, ‘সিম আছে বাট টাওয়ার না থাকায় নেটওয়ার্ক পায় না। তাই টেলিটক সিম ব্যবহার করতে পারি না।’ সাদেক হোসাইন হৃদয় নামের আরেকজন কমেন্ট করেন, ‘আগে নেটওয়ার্ক ঠিক করেন।’ সজীব আহমেদ নামের আরেকজন অভিযোগ জানিয়ে লেখেন, ‘ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকায় আদালতের বিল্ডিং ও আশপাশে অবস্থিত আইনজীবী সমিতির ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় টেলিটকের ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। বিল্ডিংয়ের রুমের মধ্যে কল করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ঠিক মতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। কর্তৃপক্ষের নিকট নিবেদন জানাই, সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’ এমন শত শত গ্রাহক প্রতিনিয়ত টেলিটকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের বিভিন্ন পোস্টের কমেন্টে টেলিটকের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিয়ে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ জানান। এসব অভিযোগের প্রতিটি কমেন্টের রিপ্লে দেওয়া হয় নিচের প্যাটার্নে। প্রিয় গ্রাহক, আপনি কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন? ১. কল ড্রপ হচ্ছে? ২. বিদ্যুৎ চলে যাবার পর নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না? ৩. কোন সময় থেকে নেটওয়ার্ক-এর সমস্যা পাচ্ছেন? ৪. ইমারজেন্সি কল লিখা আসে? সেটা কতক্ষণ থাকে? ৫. আপনি যে এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেই এলাকার বিস্তারিত ঠিকানাসহ আপনার টেলিটক নম্বর এবং কন্টাক্ট নম্বর দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন। টেলিটকের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সাথেই থাকুন। কেউ কেউ বেশ আগ্রহ নিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর দেন আবার কেউ দেন না। তবে, এ দুই শ্রেণির কেউই সমাধান পান না। কারও সঙ্গে এসব সমস্যা নিয়ে পরবর্তীতে যোগাযোগ করে সমাধান করা হয়েছে এমনটি কোনো ভুক্তভোগী নিশ্চিত করতে পারেননি। খোদ ঢাকাতেই টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন অনেক গ্রাহক। মাসুদুর রহমান নামের এক গ্রাহক লেখেন, ঢাকার মেইন পয়েন্টে থেকে ১ জিবি নেট ব্যবহার করে শেষ করতে পারি না। কারণ, উনাদের (টেলিটক) নেট রুমের ভেতর ও বাইরে কোথাও আসে না, শুধু যায়। টেলিটকের ইন্টারনেট ডাটা কিংবা ভয়েস কল নেটওয়ার্ক নিয়ে এমন অসংখ্য অভিযোগ অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না দিয়ে সব রোগের জন্য ‘প্যারাসিটামল ২ বেলা’ নীতির কারণে অনেক গ্রাহক টেলিটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এ অভিযোগের উত্তরে ওই একই কথা লিখে দায়িত্ব শেষ করেছে টেলিটক। অবশ্য, টেলিটকের ইন্টারনেট ডাটা কিংবা ভয়েস কল নেটওয়ার্ক নিয়ে এমন অসংখ্য অভিযোগ অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না দিয়ে সব রোগের জন্য ‘প্যারাসিটামল ২ বেলা’ নীতির কারণে অনেক গ্রাহক টেলিটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আবার সাশ্রয়ী দামে বিভিন্ন ভয়েস অফার ও ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহারের সুযোগ নিতে না পারায় অনেকের আফসোস-আক্ষেপেরও সীমা নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মোবাইল ফোনের প্রচলন শুরু হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের পথচলায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের যাত্রায় বাংলাদেশও এগিয়েছে বহু দূর। ফলে শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত এখন মোবাইল ফোনের জয়জয়কার। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রায় ১৯ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ বর্তমানে তারবিহীন নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত। এসব বিষয়ে টেলিটক বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তার নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় টেলিটক বাংলাদেশের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক শিরিন আক্তারের সঙ্গে। একাধিকবার ফোন করলে তিনিও ফোন ধরেননি। সাড়া পাওয়া যায়নি খুদে বার্তা পাঠিয়েও। সর্বশেষ টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর পরিচালক ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিনাত আরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতেই অস্বীকৃতি জানান।
তবে, এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে এমন আশ্বাস দিয়েছেন নতুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অবশ্য, গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) টেলিটক বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কঠোর বার্তা দেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টেলিটকের জন্য যে ভালো, যার পারফর্ম্যান্স ভালো, তাকে আমরা উৎসাহ দেব, পুরস্কৃত করব। কোম্পানির জন্য যে ঝুঁকিপূর্ণ, যে ক্ষতিকর তাকে অবশ্যই আমরা শাস্তি দেব। সংশোধনের সুযোগ দেব না।’ ‘দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, স্বচ্ছ, ও জবাবদিহিতা এ চার মূলনীতি অনুসরণ করে চলতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘টেলিটকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকেন, কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাকে সরাসরি শাস্তি দেওয়া হবে। কোনো সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে না। আমি বিশ্বাস করি, টেলিটকে ভালো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। অসৎ, অলস, দায়িত্বে অবহেলা করে এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা হাতেগোনা। সেই অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য টেলিটক কোম্পানি বা দেশের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’