জাতীয় সংবাদ

কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এল ২টি মৃত ডলফিন

প্রবাহ রিপোর্ট : কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসছে ডলফিনসহ একের পর এক সামুদ্রিক প্রাণী। এবার ভেসে এল আরও দুটি মরা ডলফিন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মধ্যে একটি ইরাবতী ও একটি ইন্দো প্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির। গতকাল শুক্রবার সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের ইনানী ও সোনারপাড়া সৈকতে ডলফিন দুটির মৃতদেহ ভেসে আসে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল শুক্রবার সকালে জেলেদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ভেসে আসা ডলফিন দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। ইনানী সৈকতে আসা মরা ডলফিনটি ইন্দোপ্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির জানিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এই প্রজাতির ডলফিন প্রথম ভেসে এসেছে। এই ডলফিনটির কঙ্কাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে এটি ব্যবহার করা হবে। এই বিজ্ঞানী জানান, উদ্ধার করা ইন্দোপ্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাকের ওজন ২৪০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। আর সোনারপাড়া সৈকতে আসা ইরাবতী ডলফিনটির দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি। এটির ওজন ৭০ কেজি। দুটির নমুনা সংগ্রহের পর সৈকতের বালিয়াড়িতে মাটি চাপা দেওয়া হবে। এর এক থেকে দেড় বছর পর দুটির কঙ্কাল উত্তোলন করে বোরিতে সংরক্ষণ করা হবে। এ নিয়ে গত দুইদিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ইনানী, হিমছড়ি, সোনারপাড়া ও সুগন্ধা পয়েন্টে তিনটি ডলফিন, একটি বিপন্ন পরপইস ও দুটি অলিভ রিডলি প্রজাতির মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে এসেছে। এছাড়াও চলতি বছর জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া সৈকতে অন্তত ২০টি মরা সামুদ্রিক কচ্ছপ ভেসে এসেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন সাংবাদিক আহমদ গিয়াস। একের পর এক প্রাণীর মৃতদেহ ভেসে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, দুইদিনের মধ্যে এক সঙ্গে দুই প্রজাতির ডলফিন,পরপইস ও সামুদ্রিক মা কচ্ছপের লাশ ভেসে আসার বিষয়টি দুঃখজনক। সমুদ্রের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাণী কেন মারা যাচ্ছে তার কারণ নির্ণয় জরুরি। স্তন্যপায়ী ইরাবতী ডলফিন ও পরপইস ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত বলেও জানান তিনি। এদিকে প্রাণীগুলোর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, নানা কারণে সাগরে এসব প্রাণীর মৃত্যু ঘটতে পারে। তবে প্রাণীগুলোর আবাসস্থলে কোনো বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে -কিনা তা অনুসন্ধানে বোরির বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করে সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত এর আগে গত বুধবার কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি বিপন্ন স্তন্যপায়ী পরপইসের মৃতদেহ ভেসে আসে। গত বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের রেজুখালের মোহনায় একটি মা কচ্ছপ ও বিকেলে হিমছড়ি সৈকতে একটি ইরাবতী প্রজাতির ডলফিন ভেসে এসেছিল। বোরির হিসেবে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া সৈকতে অন্তত ২০টি মরা সামুদ্রিক কচ্ছপ ভেসে এসেছে। উল্লেখ্য, গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। এ ছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুইদিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button