চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ : আহত ৯

প্রবাহ রিপোর্ট : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আবারও সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ। এ সময় উভয় পক্ষের কর্মীদের মধ্যে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া, মুহুর্মুহু ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও চকলেট বোমা ফোটাতে দেখা যায়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৯ জন আহত হন। পরিস্থিতি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনে এই সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সামনে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ। পরে রাত সাড়ে দশটার দিকে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষে জড়ানো গ্রুপ দুটি হলো সিক্সটি নাইন ও উপগ্রুপ সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার)। এদের মধ্যে সিক্সটি নাইন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ও সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সংঘর্ষে আহত কর্মীদের মধ্যে সিক্সটি নাইনের দুই জন আর বাকি সাত জন সিএফসির। সিক্সটি নাইনের কর্মীরা আহত হয়ে হাটহাজারী উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর সিএফসির কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, রাতে সংঘর্ষের এ ঘটনায় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করছেন। সিএফসির নেতাকর্মীদের দাবি, তাদের এক কর্মীকে রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন এলাকায় এক চায়ের দোকানে অতর্কিত হামলা করে সিক্সটি নাইন। এর কিছুক্ষণ পরে তাদের আরেক কর্মীকে শাহজালাল হলের সামনে কুপিয়ে জখম করার মতো ঘটনা ঘটে। পরে তারা এসব প্রতিহত করেছেন। অপরদিকে সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীদের দাবি, তাদের এক কর্মী স্টেশন এলাকায় চায়ের দোকানে একটি চেয়ারে বসতে চেয়েছিলেন। এ চেয়ারে বসা নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়ায় জড়িয়ে ওই কর্মীকে মারধর করেছে সিএফসির কর্মীরা। পরে তারা প্রতিহত করেছেন। রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীরা শাহজালাল হল ও সিএফসির নেতাকর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান করেন। এ দুটি হল পাশাপাশি। উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল ছিল। দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা শুরু থেকে থাকলেও রাত সাড়ে দশটায় এ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ও বুধবার রাতে সিক্সটি নাইন ও বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব জানান, রাতে মারামারির ঘটনায় নয় জনকে তারা চিকিৎসা দিয়েছেন। একজনের শরীরে কোপের চিহ্ন ছিল। আর বাকিদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ফলে ক্ষত হয়েছে। দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের বিষয়ে সিক্সটি নাইন পক্ষের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সিএফসির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। ইতোমধ্যে দুপুরে একটা ঝামেলা পার করেছি। সংঘর্ষ জড়ানোর কোনো ইচ্ছেই ছিল না। সিএফসির নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ বলেন, সিক্সটি নাইনের কর্মীদের ওপর কোনো নেতার নিয়ন্ত্রণ নেই। এ কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের কর্মীকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আমরা এটি প্রতিহত করেছি। ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ইতোমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।