ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে অস্ত্র তৈরি, গ্রেপ্তার ৬

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ভারতের কলকাতা ও শিলিগুড়িতে ভাস্কর্য তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করে আসছিলেন মোখলেছুর রহমান সাগর। সেখানে সুকুমার নামে একজন অস্ত্র তৈরির কারিগরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার কাছ থেকে অস্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ নেন মোখলেছুর। পরে দেশে এসে অল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার আশায় অবৈধ অস্ত্র তৈরির একটি চক্র গড়ে তোলেন তিনি। গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে ৬ জন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-১০)। গ্রেপ্তাররা হলেন—মূলহোতা মো. মোখলেছুর রহমান সাগর (৪২), মোঃ তানভির আহম্মেদ (৩২), অনিক হাসান (২৮), মোঃ আবু ইউসুফ সৈকত (২৮), রাজু হোসেন (৩৮), মোঃ আমির হোসেন (৪০)। অভিযানে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ১৬০টি অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ৪টি পিস্তল, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, ৭টি পিস্তলের কাঠের ফর্মা, ১০টি ফায়ারিং ম্যাকানিজম, ৪টি ট্রিগার, ২টি পিস্তলের হ্যান্ডগ্রিপ, ২টি ড্রিল বিট, ৫টি র্যাত, ৫০টি স্প্রিং, ৪০টি পিস্তলের নাট-বল্টু, ২টি কম্পাস, ৩টি গজ, ৪টি ক্লাম, ২টি ড্রিল মেশিন, ২টি বাইস, ১টি বার্নি স্কেল, ১টি মুগুর, ২০টি হেস্কো ফ্রেম, ২টি গোল্ড এলএস ফ্লাম, ১টি টুল বক্স, ১টি প্যারেন্ডার মেশিন, ১টি কাঠের যোগান, ১টি হাতুরি, ৪টি শিরিষ কাগজ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোঃ ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, এই চক্রটি ভারত থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অস্ত্র নিয়ে আসত। সেগুলো বাংলাদেশে উঠতি সন্ত্রাসীদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতো। এখন পর্যন্ত তারা মোট ১৩টি অস্ত্র দেশে নিয়ে আসে। এর মধ্যে থেকে ৯টি অস্ত্র বিক্রি করেছে। প্রথম চালানে ৮টি অস্ত্র এনে সবগুলা বিক্রি করে। পরে আরও ৫টি অস্ত্র এনে তা থেকে ১টি বিক্রি করেছে। বাকি অস্ত্রগুলো বিক্রি করার সময় চক্রের সদস্যরা গ্রেপ্তার হন। তারা মূলত অধিক লাভের আশায় ভারতীয় অস্ত্র দেশে তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। ফরিদ উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, কিছু অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী বেশ কিছুদিন অবৈধভাবে পিস্তলসহ বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন নাশকতাকারীদের কাছ থেকে মোটা টাকার বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ করতেন তারা। র্যাব এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গতকাল সোমবার রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রটির মূলহোতা মোখলেছুর রহমান সাগর ও তানভির আহম্মেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার মোখলেছুর ও তানভিরের দেওয়া তথ্যে বাড্ডা থানার হাজী আব্দুল হামিদ রোডের পূর্ব-পদরদিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও ব্যবসায়ী চক্রের অপর ৪ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আসামি মোখলেছুর রহমান সাগর অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রটির মূলহোতা। তিনি পেশায় ভাস্কর্য তৈরির কারিগর। ভাস্কর্য তৈরির দক্ষতার সুবাদে মোখলেছুর রহমান সাগর ভারতের কলকাতা ও শিলিগুড়িতে প্রায় ১২ বছর যাবত কাজ করে আসছিলেন। পরে সুকুমার নামে একজন অস্ত্র তৈরির কারিগরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং ওই ব্যক্তির কাছ থেকে মোখলেছুর অস্ত্র তৈরির দক্ষতা অর্জন করেন। পরে তিনি দেশে এসে অস্ত্র তৈরি করে অল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার আশায় অবৈধ অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সরবরাহের পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে তিনি তানভির, অনিক ও সৈকতদের নিয়ে অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।