জাতীয় সংবাদ

অগ্নিঝরা মার্চ

এফএনএস: নগণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত পাক সামরিক জান্তা। কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র বাড়ছে, মুক্তিপাগল বাঙালীর সশস্ত্র প্রস্তুতিও দ্বিগুণ বাড়ছে। একমাত্র ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের কোথাও কর্তৃত্ব-নেতৃত্ব নেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের।
সারাদেশেই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জানান দিতে একাত্তরের এ দিন দেশের সব সংবাদ মাধ্যমে বা দৈনিকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ছাপা হয়। নিবন্ধে বাংলাদেশে যে অনিবার্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে তার কথাও প্রচার হয় ফলাও করে।
একাত্তরের এ দিনেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইয়াহিয়া খানের বৈঠক অব্যাহত ছিল। কিন্তু এ বৈঠকটি যে কালক্ষেপণের আড়ালে চলছে ভিন্ন ষড়যন্ত্র তা বুঝতে বাকি থাকে না বঙ্গবন্ধুর। টানা এ বৈঠকে সংকট কাটার ইঙ্গিত না পেয়ে বৈঠকের ফলাফল নিয়ে ক্রমেই সন্দিহান হয়ে পড়ছিল সাধারণ মানুষ।
এদিকে শুধু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াই নয়, পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টোও ঢাকায়। এতে মুক্তিপাগল বাঙালীর মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ক্রমশ অগ্নিস্ফুলিঙ্গে রূপ নিতে শুরু করে। ইয়াহিয়া-বঙ্গবন্ধুর বৈঠক ফলপ্রসূ না হলেও ভুট্টো একে ‘উৎসাহব্যঞ্জক আলোচনা’ হিসাবে অভিহিত করেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এ বৈঠককে ঘিরে তৈরি হচ্ছিল রহস্যময়তা।
এজন্য দৈনিক ইত্তেফাকে এই আলোচনা-বৈঠক সংক্রান্ত খবরের শিরোনামে একে ‘দুর্বোধ্য’ বলে মন্তব্য করে। বঙ্গবন্ধু- ইয়াহিয়ার বৈঠকের পর ঢাকার প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে প্রচারিত এক ঘোষণায় ২৫ মার্চ আহূত সংসদ অধিবেশন আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ সংবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে স্বাধীনতাকামী পূর্ব পাকিস্তানের কোটি জনতা।ঢাকাসহ সারাদেশেই বিক্ষোভ-মিছিল-সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে। কোথাও কোথাও পাক হানাদারদের সঙ্গে প্রতিরোধও গড়ে তোলে বীর বাঙালীরা।
কিন্তু ইয়াহিয়ার এমন ঘোষণার পেছনে যে কী লোমহর্ষক গণহত্যার নীলনকশা করা হয়েছে, সে ব্যাপারে তখনও অন্ধকারে এ দেশের মানুষ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার পর্দার আড়ালে অস্ত্র-সৈন্য-গোলাবারুদ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এনে শক্তি সঞ্চয় এবং বাঙালীর ওপর চরম আঘাত হানার সুগভীর চক্রান্ত চালিয়েছে ওই ঘৃণ্য নরপশু ইয়াহিয়া। তবে বাঙালীর ঘরে ঘরেও তখন প্রতিরোধের প্রস্তুতি চলছিল। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতির দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারাও নানাভাবে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিলেন অত্যন্ত গোপনে।
একাত্তরের এই দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানের সব দৈনিকের প্রথম পাতায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার ছবি প্রকাশিত হয়। সারাবিশ্বের মানুষকে জানান দিতে এবং বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করতেই সব ক’টি দৈনিকে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন পতাকার ছবি ছাপানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button