জাতীয় সংবাদ

শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ

প্রবাহ রিপোর্ট : ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অনতিবিলম্বে নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহারিয়ার এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। লিগ্যাল নোটিশে মন্ত্রীপরিষদ সচিব (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ) সচিব ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে বিবাদী করা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা খোলার কথা থাকলেও দেশজুড়ে হিট অ্যালার্ট ও তাপ প্রবাহের কারণে তা এক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। তীব্র তাপপ্রবাহ আর হিট এলার্টের মধ্যেই গত ২৮ এপ্রিল স্কুল কলেজ ও মাদরাসা চালু হলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরে। তবে প্রচন্ড গরমে বিভিন্ন স্থানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়। গরমে অসুস্থ হয়ে শিক্ষকসহ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত সোমবার হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। ওই প্রতিবেদনের উপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে চলমান-তাপ প্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। নোটিশে বলা হয় আদেশের বিষয়ে আপনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখন বন্ধ হবে, কিভাবে পরিচালিত হবে সংবিধান অনুসারে সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। সংবিধানের রুলস অফ বিজনেসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেই এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।উচ্চ আদালতের সুয়োমোটো কিছু বিষয়ে নির্দেশনা বা আদেশ দেওয়ার ইখতিয়ার আছে। সেটাও সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু রাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানের যে এখতিয়ার বা সেখানে মধ্যে থাকাটাই সবার জন্য সমীচীন। আপনার এমন বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে আপনি আদালত কে কি করতে হবে বা করা উচিত সেই উপদেশ দিয়েছেন। যা প্রকারান্তরে আদালত অবমাননার শামিল। লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় আদালতের আদেশ নিয়ে একজন আইন প্রণেতা ও শিক্ষামন্ত্রী হয়ে আপনার এমন বক্তব্য কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব যদি জনদুর্ভোগ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন তাহলে কখনোই বিচার বিভাগকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে আদেশ দিতে হতো না। লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের ধর্মীয় কার্যক্রম পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছিলেন। আবারও প্রচন্ড তাপদাহে ও হিট অ্যালার্টের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের কষ্ট ও ভোগান্তি তৈরি করেছেন। মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, আপনি নিজে (এসি) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে কাজ করেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসায় বসবাস করেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতগাড়িতে চলাচল করেন। তাই আপনার কাছে হয়তো দাবদাহ কোন সমস্যা বলে মনে হয় না। নোটিশে বলা হয় এসি বন্ধ রেখে সাধারণ মানুষের মতো বাস রিকশায় চলাচল করে দেখুন, তাহলে বুঝতে পারবেন দাবদাহ কাকে বলে। নোটিশে আইনজীবী আরও বলেন, আপনার স্থানে আমি শিক্ষামন্ত্রী হলে, ছয় মাসের মধ্যে পুরো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিণত করার পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর মত শিক্ষার্থীদের আয়ের ব্যবস্থাও চালু করতাম। যা আপনার মত সনাতন চিন্তাধারার শিক্ষা মন্ত্রীর পক্ষে বাস্তবায়ন কোন দিনই সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। নোটিশে বলা হয় বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম হিটলারের স্টাইলে চালানোর চেষ্টা করে শিক্ষার্থীদের মনে পড়ালেখা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভীতি তৈরি করেছেন। আপনার কার্যক্রমে জনমনে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার বিরুদ্ধে প্রচুর লেখা হচ্ছে। জনদুর্ভোগ অনুধাবন করতে আপনি ব্যর্থ, সেই দায়ভার কাঁদে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button