জাতীয় সংবাদ

ঢাবির দুই শিক্ষকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে জিডি

প্রবাহ রিপোর্ট : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার’ অভিযোগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এক শিক্ষক। শাহবাগ থানার এসআই নূর আলম মুন্সী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোনম সাহা গত বৃহস্পতিবার ওই জিডি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও নাট্যকর্মী ফেরদৌস আরা রুমীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে। শিক্ষক সোনম সাহা বলছেন, আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে ফেইসবুকে দেওয়া তার এক পোস্টকে ঘিরে তিনি ‘হুমকি’ পেয়েছেন। আন্দোলনের সময় গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে ‘গুজব’ রটেছিল মন্তব্য করে সেসব ‘বিভ্রান্তি দূর করতে’ ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ে ওই পোস্ট দিয়েছিলেন বলে সোনম সাহার ভাষ্য। তিনি বলছেন, ওই পোস্টের পর অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা এবং তার বন্ধু রুমী তাকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলে পাল্টা পোস্ট দেন। এই অভিযোগ অস্বীকার করে গীতি আরা নাসরীন বলেছেন, তিনি তার কোনো পোস্টে কারো নাম উল্লেখ করে কিছু বলেননি। সাধারণ ডায়েরিতে শিক্ষক সোনম সাহা বলেন, “গত ২৪ জুলাই আমার আজিমপুরের বাসা থেকে সিদ্ধেশ্বরী যাওয়ার পথে কাঁটাবন মোড় থেকে শাহবাগের দিকে রিকশায় অতিক্রম করার পথে দুইজন অজ্ঞাত পরিচয়ের যুবক মোটর সাইকেলে আমার পথরোধ করে এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তারা আমাকে বলে- ‘আমরা আপনার ঠিকানা, গতিবিধি সবই জানি, এবং চিনি। আপনি যদি তথাকথিত নিরপেক্ষ বক্তব্য দিয়ে সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণ করেন, তাহলে ভালো হবে না।’ “‘আপনি মুখ বন্ধ না করলে, আমরা আপনার ঘাড় নামিয়ে দেব’- এই বলে তারা শাহবাগ অভিমুখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে, তাদের মোটর সাইকেলের নম্বর প্লেটে কাদা ছিল বলে নম্বর দেখা যায়নি।” এই হুমকির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সাধারণ ডায়েরিতে ওই শিক্ষক বলেন, “আমি ১৭ জুলাই একটি ঘটনাকে এর কারণ হিসেবে অনুমান করি। ওই দিন ফেইসবুকে বিভিন্ন ভূঁইফোর পেইজ থেকে গুজব ছাড়ানো হয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পুলিশ গণহত্যা এবং ছাত্রী হলগুলোতে গণধর্ষণ চালাচ্ছে। এই গুজব শুনে আমি রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। সরেজমিনে ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ পরিদর্শন করি। “আমরা জানতে পারি, ছাত্র-ছাত্রীরা ক্যাম্পাস ছাড়ছে। হল ভ্যাকেন্টের পরে ক্যাম্পাস খালি। অল্প কিছু ছাত্রী হলে আছে, যারা সকালে হল ছেড়ে যাবেন। ক্যাম্পাসে আবাসিক শিক্ষক, তাদের পরিবার, পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ এবং মিডিয়া কর্মীরা রয়েছেন। সব মিলিয়ে সারাদিন উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করলেও উল্লিখিত সময়ে ক্যাম্পাস শান্ত, নির্বিঘœ, নিরাপদ ছিল। গণহত্যার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।” এ বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন জানিয়ে সোনম সাহা বলেন, তার ওই পোস্ট আনেকে শেয়ার করেছে। জিডিতে সোনম সাহা বলেন, “অসংখ্য মানুষ যারা গুজবে আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, তারা ওই পোস্ট পড়ে আশ্বস্ত হয়। এর ফলে একটি স্বার্থান্বেষী অপরাজনৈতিক মহল আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক গীতি আরা নাসরীন আমাকে রেডিও পাকিস্তান, শান্তিবাহিনী এসব অভিধা দেন এবং পরোক্ষভাবে আমাকে মিথ্যাবাদী বলেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফাও আমার বয়ানকে অনলাইনে অসত্য বলে বয়ান করেন। “তাদের প্রভাবে সরকারবিরোধী অনেক মানুষ আমাকে ভার্চুয়ালি, ভার্বালি অ্যাবিউজ করে। আমাকে কুরুচিপূর্ণ ও বিরূপ মন্তব্য করে। গীতি আরা নাসরীনের ফেইসবুক বন্ধু নাট্যকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী আমাকে এজেন্সির লোক বলে বিপদজনক ইঙ্গিত দেয়। আমি মনে করি, আমাকে হুমকি দেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টিতে এদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বা দায় আছে।” অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, “আমার ফেইসবুকে সমস্ত কিছু ওপেন। ফেইসবুকে আমার একটা পোস্ট আছে, এ ধরনের কিছু একটা লিখেছি। কিন্তু সেখানে কারো নাম উল্লেখ করে এরকম কিছু লিখিনি। তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না। “কাউকে আক্রমণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি, এটা অদ্ভুত কথা। এটা নিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এরকম জিডি করতে পারেন, সেটা আশ্চর্য লাগছে। এটা খুবই দুঃখজনক। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “জিডিটা না দেখে মন্তব্য করতে পারছি না। ইন্টারনেট কানেকশন না থাকায় এই মুহূর্তে জিডিটাও দেখতে পারছি না। এ বিষয়ে কথা বলতে নাট্যকর্মী ফেরদৌস আরা রুমীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button